ডেস্ক রির্পোট:- মুক্তিযুদ্ধে লড়াইয়ের টাটকা স্মৃতি আর ফিল্ড হাসপাতালের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বাধীন দেশের গণমানুষের সেবায় কাজে নেমে পড়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে লন্ডনে ফিরে না গিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যে কাজ শুরু করেছিলেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত একটু একটু করে তার বিস্তার বাড়িয়েছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর বছর না পেরোতেই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বিরোধ, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ, বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার, অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যহানি ঘটে চলেছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ডা. আখতার আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিমুদ্দিন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. সিতারা বেগম মিলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের অধীনে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তারা। বর্তমানে এ ট্রাস্টের অধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদমূল্য ২০ হাজার কোটি টাকা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয় ব্যতিক্রমধর্মী ভাবনা ও কাজের জন্য। ট্রাস্টি থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের নিরসল শ্রমে গড়ে ওঠা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট প্রবন্ধ প্রকাশ করে। দেশ-বিদেশের একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার রয়েছে এ সংস্থার ঝুলিতে।
২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রাতে গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা যান। মৃত্যুর তিন-চার মাস আগে বুঝতে পেরেছিলেন, একটি চক্র সংস্থাটি ধ্বংসের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি তার স্ত্রী ও সংস্থার ট্রাস্টি শিরিন হক, চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা ও তার বিশ্বস্তজনদের সতর্ক করে গিয়েছিলেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুর আগে সংস্থাটির চেয়ারপারসন হিসেবে অধ্যাপক আলতাফুন্নেসাকে নিয়োগ দিয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা দায়িত্ব নেওয়ার পর জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের শুরু হয় ট্রাস্টিদের মধ্যে। গত বছর ১৪ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. নাজিমুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরামর্শ করে আলতাফুন্নেসা যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতেন। পরে তাদের মধ্যে ট্রাস্ট পরিচালনা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা দায়িত্ব নেওয়ায় চক্রান্তকারীরা তাকে ব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ট্রাস্টের অর্থ লুটপাট করতে শুরু করে। অর্থ লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ায় অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিন্তু পরে তাদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। এভাবে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসৎ ব্যক্তিদের হাতে। প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. নাজিমুদ্দিন আহমেদ একদিকে আর অন্যদিকে ট্রাস্টি ডা. মঞ্জুর কাদির আহমেদ, ডা. আবুল কাশেম চৌধুরী, সন্ধ্যা রায় ও ডা. কনা চৌধুরী। শুরুর দিকে আলতাফুন্নেসা ট্রাস্টি নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি ডা. মঞ্জুরদের পক্ষে অবস্থান নেন। এরপর থেকে ডা. মঞ্জুর কাদির ও তার অনুসারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঘটনা প্রবাহের একপর্যায়ে চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা পদত্যাগ না করেই পারিবারিক কারণ দেখিয়ে কানাডা চলে যান। যাওয়ার আগে ডা. আবুল কাশেম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে যান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আলতাফুন্নেসার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি ফোনকল কেটে দেন।
ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. আবুল কাশেম চৌধুরী দুর্নীতি ও অনিয়মের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ট্রাস্টিদের মধ্যে একমাত্র ডা. নাজিমুদ্দিন ছাড়া অন্য কারও মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। জাফরুল্লাহ ভাই জীবিত থাকাকালে ডা. নাজিমুদ্দিনকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিতেন। কিন্তু তিনি ঠিকমতো তা করতেন না। ফলে চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব দেন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসাকে। ডা. নাজিমুদ্দিনসহ আরও যারা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন, তারা কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাস্টিদের মধ্যে বিরোধের পাশাপাশি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতিও বাসা বেঁধেছে। ইতিমধ্যে ৩০ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের ঘটনা জানা গেছে। ভুয়া কাগজে গাছ বিক্রির অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পের সিনিয়র অর্থ ব্যবস্থাপক রাজীব মুন্সীকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
গণস্বাস্থ্যে লুটপাট : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে ট্রাস্টি ডা. মঞ্জুর কাদিরের নাম জড়িত রয়েছে। হয় তিনি নিজে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন অথবা অন্য দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। তার দুর্নীতির বিষয়টি চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা ও প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গঠন করা তদন্ত কমিটিতে উঠে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. মঞ্জুর নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে সাভারে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া তিনটি প্রকল্প থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভুয়া কাগজ দেখিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাঁচ হাজার গাছ বিক্রি করা হয়। কেন্দ্রের চার সদস্যর কমিটির তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে এবং এ ঘটনায়ও ডা. মঞ্জুর কাদিরের নাম উঠে এসেছে। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলের বিভিন্ন অনিয়মেও তার নাম বারবার উঠে এসেছে।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. মঞ্জুর কাদির আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনোটাই সত্য নয়। যেহেতু কাজকর্মে আমি বেশি সক্রিয় থাকি ফলে আমাকেই বেশি টার্গেট করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারেনি।’
ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে তিন দশকের কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায়ে জড়িত থাকলে ভাইয়ের নজর এড়াতে পারতাম না। আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ করছি। অথচ তারা বলছে আমি অনেক ফ্ল্যাট কিনেছি, যা সত্য নয়।’
এফোর্ডেবল হেলথ কেয়ার ট্রাস্টে দুর্নীতি : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ ট্রাস্টের অধীনে গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের জন্য ১০ কোটি টাকা অনুদান দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট স্থাপনে ১০ কোটি টাকা দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ফজলে হাসান আবেদ। এফোর্ডেবল হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ডা. মুহিব উল্লাহ। তিনি ট্রাস্টের কার্যক্রম গোপনে পরিচালনা করেন এবং কোনো তথ্য ও হিসাব বিবরণী কাউকে জানতে দেননি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলে এফোর্ডেবল হেলথ কেয়ার ট্রাস্টে দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। তদন্তে ডা. মুহিব উল্লাহ ছাড়াও এ ট্রাস্টের দুর্নীতির সঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি মঞ্জুর কাদিরের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। শুধু তাই নয়, হেলথ কেয়ার ট্রাস্টে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডা. মুহিব উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকেও চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানানো হয়।
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে একজন : ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অর্থ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ কবিরের নেতৃত্বে গত বছর ১ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত তদন্ত পরিচালিত হয়। তদন্তে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডার আহ্বান না করে কার্যাদেশ ও ১ কোটি ২ লাখ ৭১ হাজার টাকার বিল দিয়েছেন ডা. মুহিব উল্লাহ। লুটপাট করতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সমন্বয়ক হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে সাত, আট ও নয়তলার সম্প্রসারণে টেন্ডার আহ্বান না করে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। করোনার সময় টেন্ডার না দিয়ে এসি সংস্কারের বিল দেখান ২২ লাখ ৩৩ হাজার টাকার। এ দুটি কাজ পায় মেসার্স মহিউদ্দিন ট্রেডার্স। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে বিদেশি কোটায় দেশীয় শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন তিনি। এ ছাড়া হাসপাতালের জন্য ডায়ালাইসিস বেড, মনিটর, ভেন্টিলেটর, হেমোডায়ালাইসিস ও বিভিন্ন মেশিন এবং করোনার কিট তৈরির মালামাল আমদানিতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে ডা. মুহিব উল্লাহর বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডা. মুহিব উল্লাহ পাঁচ বছর ধরে ভারতের একটা প্রতিষ্ঠান থেকেই ডায়ালাইসিসের মালামাল অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে আমদানি করছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে গত ১৬ জানুয়ারি তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা। কিন্তু তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন ট্রাস্টি ডা. আবুল কাশেম চৌধুরী। পরে তার বহিষ্কার প্রত্যাহার করে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্পে দুর্নীতি : গণস্বাস্থ্য গ্রামীণ স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সিনিয়র পরিচালক ডা. রেজাউল হক সাভারে গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্যবীমার পাইলট প্রকল্প থেকে ২০১৭ ও ’১৮ সালে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তার দুর্নীতির প্রমাণ উঠে আসে ডা. মিজানুর রহমানের তদন্ত প্রতিবেদনে, যা ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর জমা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে বড় বড় আরও কয়েকটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের দুর্নীতি : গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের ঢাকা ডিপো থেকে ২০১৭-২২ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডিপো ইনচার্জ রাফিউল ইসলাম। দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে গঠন করা তিনটি কমিটিতে তার এ অর্থ আত্মসাতের সহযোগী হিসেবে উঠে এসেছে বর্তমান ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায়ের নাম। তিনটি কমিটির প্রতিবেদনের পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা ও ট্রাস্টি বোর্ড। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে।
মামলা পাল্টা মামলা : গণস্বাস্থ্যের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় ট্রাস্টিরা একে অন্যের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা, ৫টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও লিগ্যাল নোটিসসহ ২৪টি অভিযোগের নথি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। এসব নথিতে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মামলা, জিডি, লিগ্যাল নোটিস ও কারণ দর্শানোর নোটিস হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. নাজিমুদ্দিন বেশিরভাগ অভিযোগ করেন। এর মধ্যে ডা. নাজিমুদ্দিন আলতাফুন্নেসা ও অন্য ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা, জিডি ও উকিল নোটিস করেছেন। ডা. নাজিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেসা একটি ও ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন একজন পরিচালক। ডা. মুহিব উল্লাহ চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। অন্য মামলাও বিভিন্ন ট্রাস্টি ও পরিচালকরা একে অন্যের বিরুদ্ধে করেছেন।
ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাস্টি ডা. মনজুর কাদিরসহ অন্যদের দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এসব ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা গত ২৪ মে দেশ ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য ডা. জাফরুল্লাহ চালাতেন। আমি কখনই যেতাম না, শুধু মিটিংয়ে অংশ নিতাম। তিনি মৃত্যুর আগে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তিন-চার মাস ভালোই চলছিল। এরপর ধীরে ধীরে দুর্নীতির খবর বের হতে শুরু করে।’
গণস্বাস্থ্যকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আলতাফুন্নেসাকে নিয়ে কাজ শুরু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে একটি জালিয়াত চক্র আলতাফুন্নেসাকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে যায়। তখন তারা আমাকে গণস্বাস্থ্য থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওখানে এখন ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে।’
আক্ষেপ করে ডা. নাজিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জানি না গণস্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে পারব কি না। ৮২ বছর বয়সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’দেশ রূপান্তর