বান্দরবান:- সমতল পেরিয়ে পাহাড়েও রয়েছে নামে-বেনামে সাবেক আইজিপি বেনজিরের আহমেদের শত একর অবৈধ জায়গা রয়েছে। পার্বত্য বান্দরবান জেলা সদরের সুয়ালক এলাকায় লিজ ছাড়া দখলে রয়েছে একশত একরের বেশি জায়গা। এসব জায়গার দেখাশোনা জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় তার সহযোগী মংওয়াই চিং মারমা নামে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক লীগে সভাপতিকে। কিন্ত সেখানেও সুযোগ বুঝে ফায়দা লুটে নেওয়ার চিত্র দেখা মিলেছে। এবার সাবেক আইজিপির সহযোগী স্থানীয় নেতা মংওয়াই চিং মারমা বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জায়গা দখলের সন্ধান পাওয়া গেছে। বেনজিরের ক্ষমতার ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে কয়েক একর জায়গা দখল, গাছ কেটে বিক্রি ও সড়ক চলাচলের পথ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে সহযোগী মংওয়াই চিং মারমা বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের জায়গা দখলে নিয়েছেন মংওয়াই চিং মারমা। বেনজির লিজ নেয়ার জায়গা ২৫ একর নামে থাকলে তার সহযোগী মংওয়াচিং মারমা জোরপূর্বকভাবে দখলে নিয়েছেন একশত একরের বেশি। সেখানে “মং” নিজের নামেও কয়েক একরের মত জায়গা দখলে নেয়ার অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জোড়পূর্বকভাবে চলাচলের জায়গা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ এই স্থানীয় এই নেতার বিরুদ্ধে। সেসব দখলকৃত জায়গা ভুক্তভোগীদের কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো আইনের মামলা ও হুমকি-দুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বেনজির আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজিরের নামে ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগে ও ৩ নম্বর শিটে ২৫ একর জায়গা লিজ নেন। সেটি এসপির জায়গা নামে পরিচিত এসব জমিতে রয়েছে কোটি টাকার সম্পত্তি। একই সালে বেনজিরের সাথে নোটারী পাবলিক মাধ্যমে চুক্তি করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মংওয়াই চিং মারমা। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেনজিরে সহযোগী হিসেবে জেলা শহরে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন, রয়েছে বিলাস বহুল গাড়িসহ পেয়েছেন বিভিন্ন পদ-পদবী। এতে তিনি শান্ত হননি জোরপূর্বকভাবে মালিকানাধীন জায়গা থেকে গাছ কেটে বিক্রি, জায়গা দখলসহ স্থানীয়দের অত্যাচার করে যাচ্ছেন এই নেতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মালিকানাধীন পাহাড় ঘেঁষে বেঁধেছেন কাটা তারের বেড়া। অপরদিকে অন্যের পাহাড়ের জোরপূর্বকভাবে ঘর তৈরী করেছেন। দুই পাশে অন্যের পাহাড় থেকে প্রায় গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, মুরুং ঝিড়ি ঝরনাতে যুদ্ধ বাগানে দুইজনের জায়গা চলাচলে রাস্তা বন্ধ করে দেন এই নেতা। যার কারণে বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সেসব দখলকৃত জায়গা ভুক্তভোগীদের কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো আইনের মামলার হুমকি-ধমকি ভয় দেখান এই নেতা।
ভুক্তভোগী ক্যসিংমং, চিংশৈনু, নুম্যাসিংসহ বেশ কয়েকজন জানান, মংওয়াই চিং মারমা বেনজিরের প্রভাব দেখিয়ে আমাদের জায়গা থেকে গাছ কেটে নিয়ে গেছে। আমাদের জায়গা উপর রাস্তা বানিয়েছে। বাগানে যাওয়ার রাস্তার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির টাকা খুজতে গেলে উল্টো মামলা হুমকি-ধমকি ভয় দেখান মংওয়াইচিং। এখন আমরা খুব অসহায়। আমাদের জায়গা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বেনজিরের সহযোগী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মংওয়াই চিং মারমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে যদি জোরপূর্বকভাবে জায়গা দখলে নিয়ে থাকি তাহলে তাদেরকে প্রমাণ করতে বলেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, দুদকের নির্দেশনায় বেনজিরের সম্পত্তিসহ সবকিছুর তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি। যা করার দুদক তদন্ত করবে।
ভুক্তভোগীদের সম্পত্তি ফিরিয়ে পাবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রশাসক বলেন, এখন কোন কিছু বলতে পারছি না। দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সেখান থেকে কোন নির্দেশনা আসলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।