শিরোনাম
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে তীব্র ক্ষোভ জনমনে: বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি আওয়ামী লীগ পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির জন্য দায়ী : ওয়াদুদ ভূইয়া রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে মোটরসাইকেল-চোলাইমদসহ গ্রেপ্তার ৩ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের তিন সদস্য নিহত বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক

আনার ‘খুন’ না অন্তর্ধান

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪
  • ১০৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে কি হত্যা করা হয়েছে? হত্যা করা হয়ে থাকলে তার লাশ কোথায়? নাকি তিনি এখনো জীবিত? এসব মৌলিক প্রশ্নের উত্তর না মেলায় এমপি আনার ইস্যুতে এখনো আইনানুগ কোনো উপসংহার টানা যাচ্ছে না। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। আন্তঃরাষ্ট্রীয় তদন্ত চলছে। তদন্তের মাধ্যমেই সম্ভব এমপি আনারের অবস্থান ও পরিণতি নির্ণয়, যা একান্তই বাংলাদেশ এবং ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিজস্ব বিষয়। কিন্তু সরকারদলীয় এই এমপির আপাত অন্তর্ধান যে বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসেছে সেগুলো তার ‘একান্তই নিজস্ব বিষয়’ বলে একপাশে সরিয়ে রাখার মতো নয়। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আনার আসলেই খুন হয়েছেন কি নাÑ প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় সংসদের একজন আইন প্রণেতার ব্যক্তিজীবন কতটা কুৎসিত, পঙ্কিল আর অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে পারে সেটি বোধহয় আনার নিখোঁজ না হলে আন্দাজই করা যেত না।
সংবাদ মাধ্যমে আনারের ‘খুন হওয়া’র তথ্য প্রচারিত হয়েছে। কতটা নৃশংসভাবে তাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে তুলে ধরা হচ্ছে সেই বিবরণ। এই ‘হত্যা’য় কে, কিভাবে, কোন্ পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন তাদের নামধাম চাউর হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুইয়া, তার এককালীন সহযোগী সাইফুল মেম্বার, ফয়সাল আলী, তানভীর ভুইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে। তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ভারতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ‘কসাই’ জেহাদকে। সিয়াম নামের একজন নেপালে পালিয়ে গেছে মর্মে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে এই ‘হত্যাকাণ্ড’র ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে যার নাম মুহুর্মুহ প্রচারিত হচ্ছে তিনি হচ্ছেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি আনারের বাল্যবন্ধু। এমপি আনারের ঘটনায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শাহীন রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতারকৃতদের ‘স্বীকারোক্তি’ হিসেবে আনার ‘হত্যা’র রোমহর্ষক বিবরণ উঠে আসছে। সর্বশেষ আনারের দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে খাল-বিল, নদী-নালায় অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় নৌ সেনা।
কেন ‘খুন’ হতে পারেন আনার : লাশ না পাওয়া সত্ত্বেও আনারকে যদি ‘খুন’ হিসেবেই ধরতে হয় তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, কেন খুন হতে পারেন তিনি? বাংলাদেশ এবং ভারতীয় পুলিশের অভিন্ন ভাষ্য, পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে আক্তারুজ্জামান শাহীনই আনারই খুন করেছেন। তদন্ত শেষ না হলেও নিশ্চিত ‘খুন’ হিসেবে ধরে নিয়ে এগোচ্ছে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্য কোনো কারণ বা ক্লু উদঘাটনে লক্ষ করা যাচ্ছে অনীহা। অথচ আওয়ামী লীগের টিকিটে হওয়া তিন তিনবারের এমপি আনোয়রুল আজীমের অতীত, সাম্প্রতিক জীবনযাত্রা, তার পেশা, সাহচর্য, সম্পর্ক, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবন রয়ে গেছে অস্পৃশ্য। এগুলো পর্যালোচনা করলেও মিলতে পারে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন নাকি এখনো জীবিত আছেনÑ এ প্রশ্নের উত্তর। উন্মোচিত হতে পারে আনারের অজানা অধ্যায়।
জেলে পরিবারের (নিকারী সম্প্রদায়) সন্তান ছিলেন আনার। জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পিতা-ইয়াকুব আলী। মায়ের নাম জহুরা খাতুন। ৪ ভাই ৬ বোনের মধ্যে আনার অষ্টম। আনার বসবাস করতেন কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডস্থ বাসায়। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। মাছের আড়ৎ আনারের পারিবারিক ব্যবসা। বড় ভাই আলী আবেদ এখনো আড়তে মাছের কারবারে যুক্ত। শৈশবে আনারের ঝোঁক ছিল খেলাধুলায়। ফুটবল ও ক্রিকেটে ছিলেন দক্ষ। দুটোতেই জেলা পর্যায়ে খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি ছিল। ৯০-এর দশকে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচনে হেরে যান। হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। বিচার এড়াতে তিনি ভারত পালিয়ে যান। ২০০০-২০০৮ পর্যন্ত ৩টি হত্যাসহ ২১টি মামলা হয় আনারের বিরুদ্ধে। ৩টি মামলা হয় স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১০টি বিস্ফোরক দ্রব্য ও পাঁচটি দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায়। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম ওঠে। পলাতক অবস্থায় তাকে ফের রাজনীতিতে টেনে আনে আওয়ামী লীগ। সব মামলা প্রত্যাহার করে তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ২০০৯ সালে আনার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টিকিটে আনার তৃতীয়বারের মতো এমপি ‘নির্বাচিত’ হন। বার বার দলের মনোনীত প্রাথী করার ব্যাখ্যা হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আনারের জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ তোলেন। অথচ তার মৃত্যুর খবরে অনেক স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে বলে জানা যায়। দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সর্বহারা চরমপন্থিদের গডফাদার ছিলেন এমপি আনার। ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টির সরকার আমলে আনার চোরাচালান কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে চোরাচালান করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ পাচার করতেন। করতেন মাদক চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা।
আনারের সম্পদ-সাম্রাজ্য : আপাত সাদাসিধে বেশে চলাফেরা করতেন আনার। সাধারণ পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াতেন মোটরসাইকেলে। এটি তার প্রথমবার এমপি হওয়ার সময়কার পরিস্থিতি। কিন্তু গত এক দশকে আনার হয়ে যান বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক। যদিও তার সম্পদগুলো খুব একটা দৃশ্যমান নয়। প্রায় সব সম্পদই তার নিকটজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক অনুসারীদের নামে। কালীগঞ্জ পৌরসভার মধুগঞ্জ বাজারে ৩তলা একটি ভবন। এটিতে সপরিবারে বসবাস করতেন আনার। শহরের মুরগি হাটা মোড়ে রয়েছে একটি মার্কেট। মেইন বাসস্ট্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধা ভবনের পেছনে আছে ৫ শতক জমি। বাসস্ট্যান্ডের শ্রীলক্ষ্মী হলের পাশে ভাগ্নের নামে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলা ভবন। এটিতে হাসপাতাল করার কথা। পরিবহন ব্যবসা আছে তার। দুই মেয়ে অরিন-ডরিনের নামে যথাক্রমেÑ ২টি বাস ও ৫টি ট্রাক আছে। বাসস্ট্যান্ডের কোটচাঁদপুর রোডে আছে ভবন। এটিতে ‘রায় সুইট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট ভাড়ায় চলছে। জীবননগর সীমান্ত এলাকায় আনার আত্মীয়-স্বজনের নামে কিনেছিলেন প্রায় ২শ’ বিঘা জমি। এখানে একটি নতুন স্থলবন্দর চালু হতে পারে। এটি জেনে আগেভাগেই বিভিন্ন নামে কিনে রাখেন জমি। ২০ বছর আগে তার নামে এই এলাকায় ১০-১৫ বিঘা জমি কেনা ছিল। গত ৫-৭ বছরে আরও জমি কেনা হয়েছে। কালীগঞ্জে নিজ মালিকানাধীন শ্রীলক্ষ্মী সিনেমা হলটির জমিসহ কেনেন ১২ কোটি টাকায়। আয়েশা তেল পাম্পের পাশে ২ কোটি টাকায় কিনেছেন ১০ শতক জমি। মুরগিহাটার পাশে কেনেন ৭ কোটি টাকায়। এসব সম্পদ নিজ ভাগ্নে, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নামে দলিল করেছেন।
জানা গেছে, ভারতের কলকাতায় গোপাল বিশ্বাসের যে বাড়ি থেকে তিনি নিখোঁজ হন, তিনতলা ওই ভবনটির মালিকও আনোয়ারুল আজীম। গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে তার রয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের কারবার।
আনারের অন্ধকার জগৎ : ছাত্রজীবন থেকেই খেলাধুলার আড়ালে আনার ছিলেন অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। ওই সময় ২৩টি মোটরসাইকেল দিয়ে শুরু করেন সীমান্তে কালোবাজারি। তার বাহিনীর সদস্যদের কাছে থাকতো পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া বিশেষ টোকেন। টোকেন দেখালেই তার মাদক আর চোরাই পণ্যের চালান ছেড়ে দিত পুলিশ। চরমপন্থি লাল দলের প্রধান হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ডা: টুটুলকে ২০০৯ সালে র‌্যাব তুলে নিয়ে যায়।
পরদিন তার লাশ পাওয়া যায় নওগাঁওয়ের গোদাগাড়ি এলাকায়। ওই সময় তার পরিবার সন্দেহ করেছিল, আনার লাল দলের প্রধান ডা: টুটুলকে র‌্যাবের হাতে তুলে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন। নিহত টুটুল এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কথিত পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের চাচাতো ভাই। ‘হত্যাকাণ্ড’ বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়ার ভগ্নিপতি। এ কারণে শাহীন ও শিমুল আগে থেকেই এমপি আনারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে ডিবির ভাষ্য। শিমুলকে র‌্যাবের মাধ্যমে ‘ক্রসফায়ার’ দিতে চেয়েছিলেন আনার। শিমুল কৌশলে পালিয়ে বাঁচে। শাহীন ও শিমুলের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল এমপি আনারের ওপর। এরপর ৫০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে মাফিয়া চক্র ও শাহীনের সঙ্গে। কয়েক জন বড় ব্যবসায়ী ও সরকারদলীয় দুই সাবেক এমপি মাফিয়া চক্রের সদস্য। তবে চক্রের একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এমপি আনার। মাফিয়ারা শাহীনকে দিয়ে তার ফুফাতো ভাই শিমুল ভুঁইয়াকে কাজে লাগিয়ে এমপি আনার ‘খুন’ করা হয়েছে মর্মে ভাষ্য গোয়েন্দা পুলিশের। অন্ধকার অপরাধ জগতের ডন ছিলেন আনার। একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আনারকে ছিনিয়ে নেয় তার বাহিনীর সদস্যরা। আনার অন্তর্ধানের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যদিও সামনে অনেক ক্লু আসতে শুরু করেছে। এখনো কলকাতায় আনারের কথিত ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়নি। আনার ৮ বছর ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় অনেক সোনা চোরাকারবারির সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। গড়ে ওঠে অবৈধ ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তাদের কাউকেই ন্যূনতম সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। যে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে আনারকে হত্যা করে খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে মর্মে প্রচার করা হচ্ছে, সেই ভবনের কোনো নিরাপত্তা প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ওই অ্যাপার্টমেন্টের কোনো বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বলা হচ্ছে, আনারকে হত্যা করে লাশ থেকে চামড়া পৃথক করা হয়। হাড়-মাংস আলাদা করা হয়। এসব কাজ কথিত কসাই জিহাদ করেছে মর্মে দাবি করা হচ্ছে। অথচ একজন পেশাদার কসাইয়ের পক্ষে এত অল্প সময়ে হাড়-মাংস পৃথক করা প্রায় অসম্ভব। এ কাজে শব্দ হওয়ার কথা। এ শব্দ ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের কান এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। তারা কেউ কেন টের পাননি এমন প্রশ্ন উঠেছে।
ফ্ল্যাটে ছিলেন শিলাস্তি রহমান নামের নারী। বলা হচ্ছে, তাকে দিয়ে হানি-ট্র্যাপ করা হয়েছিল আনারকে। তাকে ঘিরেও রয়েছে বহু প্রশ্ন। দানা বেঁধেছে রহস্য। কারণ আনার আগে থেকেই ছিলেন বহুগামী। শাহীনের কোর্ট চাঁদপুরের (এলেঙ্গা) বাগানবাড়িতে প্রায়ই বসতো নারী আর মদের আসর। ঢাকার গুলশান এবং বসুন্ধরার ফ্ল্যাটেও বসতো এমন আসর। এসব ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদে খুলতে পারে রহস্যের জট। আনার অন্তর্ধান এখনো রহস্যজালে আকীর্ণ। এই রহস্য উদঘাটনে নিয়োগ করা হয়েছে যে পুলিশ সদস্যকে, সেই শহিদুর রহমান রিপনকে হঠাৎ বদলি করা হয়েছে, যা রহস্যকে আরো ঘনীভূত করেছে। কারণ শহিদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি আনারের এলাকায়।
এদিকে শহিদুর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে কর্মরত। আগে তিনি আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা ও বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার ঘটনার রহস্যও উদ্ঘাটন করেন। গত রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে তাকে বদলি করে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কলকাতায় গিয়ে এমপি আজীম নিখোঁজের পর থেকেই ডিবি কর্মকর্তা শাহিদুর ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমপি আনার ও শাহিদুরের বাড়ি একই জেলায়। তিনি নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে ও কলকাতার পুলিশের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এমপি আজীম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেন। এমপি আজিম হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের সহযোগী সিয়াম নেপালে ধরা পড়ার খবর মিললে তদন্তের কাজে নেপাল যান। এদিকে ঠিক কী কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র গণমাধ্যমকে বলছে, এটি নিয়মিত বদলি।
এদিকে আনারের অন্তর্ধান রহস্যের জট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত তার স্ত্রী মুখ খোলেননি। তার ছোট মেয়ে ডরিন ইতোমধ্যেই পিতাকে ‘মৃত’ সাব্যস্ত করে একটুকরো মাংস দেখতে চেয়েছেন। পিতার শোকে যখন মুহ্যমান থাকার কথা, ডরিন তখন শোক ভুলে আনারের অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করার প্রত্যয়ে স্থানীয়দের দোয়া ও সহযোগিতা চাইছেন। এমনকি তিনি পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তৃতা করছেন রাজনৈতিক নেতার মতোই। আনার অন্তর্ধানের রহস্য ভেদে আর কী কী বিষয় সামনে চলে আসে সেটিই এখন দেখার বিষয়।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions