মালয়েশিয়া যেতে না পারা শ্রমিকদের হাহাকার, টাকার কী হবে,হোয়াইট ক্রিমিনালদের ধরবে কে?

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪
  • ১৮৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি অবদান প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রাজনৈতিক কারণ ও দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি আস্থাহীনতায় প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে। বিদেশে আসা-যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে শ্রমিকদের সঙ্গে কি অমানবিক আচরণ করা হয় তা সবাই জানেন। এবার দেখা গেল গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে রেমিট্যান্স আনতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকদের সঙ্গে সমাজের মর্যাদাবান ব্যক্তিদের প্রতারণার চিত্র। কিভাবে তাদের টাকা লুটে নিচ্ছে ভদ্রবেশী প্রতারক চক্র। জাতিসংঘ পর্যন্ত এই প্রতারণা ধরে ফেলেছে।
এখন টক অব দ্য কান্ট্রি মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা। ঢাকা ও কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র প্রতিদিন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে। দেশে কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় বিদেশে কাজের জন্য কেউ জমি বন্ধক রেখে, কেউ গরু বিক্রি করে, কেউ ব্যাংকঋণ নিয়ে, কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩১ মে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পেরে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। দেশের হাই সোসাইটির মুখোশধারী হোয়াইট ক্রিমিনালদের (হোয়াইট-কলার অপরাধ হচ্ছে উচ্চ সামাজিক মর্যাদার একজন ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত অপরাধ; যারা প্রতারণাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক লাভের জন্য অহিংস অপরাধ এবং ব্যবসা করেন) সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে সবকিছু খুইয়ে বুক চাপড়াচ্ছেন। এই উঁচুতলার হোয়াইট ক্রিমিনালদের মধ্যে যেমন আছেন জনপ্রতিনিধি, তেমনি কেউ কেউ নিজেদের পাশাপাশি স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের প্রতারণা চক্রে ঢুকিয়েছেন। সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কেউ বিদেশে পাচার করেছেন; কেউবা নিজেদের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে জমি-গরু বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে যারা মালয়েশিয়া যেতে পারলেন না তা তাদের কি হবে? তারা কি টাকা ফেরত পাবেন? কোন প্রক্রিয়ায় তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। আর যে সমাজের উপর তলার হোয়াইট ক্রিমিনালরা সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকা লুটে নিলেন তাদের কি বিচার হবে? সরকার কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সবকিছু তদন্ত হবে। এমপি জানি না, চিনি না, রিক্রুটিং এজেন্সি চিনি। দায়ী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়েও দেশটিতে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী যেতে পারেননি। কর্মীদের যেতে না পারার কারণ খুঁজে বের করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিব (মন্ত্রণালয়ের) নূর মোহাম্মদ মাহবুবকে কমিটির প্রধান করে গঠিত কমিটি ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। কমিটি তাদের সুপারিশ দেবে। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কোনো অঘটন তদন্তের কমিটি গঠন করলে সে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট কি কোনোদিন আলোর মুখে দেখেছে?
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যাদের অবহেলার কারণে ৩১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারল না, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সিরাজগঞ্জের কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন মো. আবদুল মোমিন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই চলছিল চারজনের সংসার। তবে আরো কিছুটা ভালো থাকার আশায় মালয়েশিয়া যেতে একই এলাকার ফজলুল হক নামে এক দালালের মাধ্যমে আল হেরা ওভারসিজ রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে তুলে দেন প্রায় ৬ লাখ টাকা। এরপর থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে দালালের পেছনে ঘোরা শুরু হয় এই মালোয়েশিয়া অভিবাসন প্রত্যাশীর। শেষ পর্যন্ত ৩১ মে নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিনেও টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি তার।
তিনি বলেন, এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ৬ লাখ টাকা ঋণ নেই। মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা হলো না; এখন আমি কোন মুখে বাড়ি ফিরে যাব? নাটোরের সিংড়া উপজেলার কৃষক হাবিবুর রহমানের শেষ সম্বল ছিল চারটি গরু আর ১৬ শতাংশ জমি। মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন দেখে বছরখানের আগে এক লাখ টাকায় সেই জমিটুকু বন্ধক রাখেন। সাড়ে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন গরুগুলো। নাটোরের হাবিবুর রহমান জমি বন্ধক ও গরু বিক্রির সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন ঢাকার পল্টন এলাকার একটি এজেন্সিকে। রিক্রুটিং এজেন্সির কথামতো মালয়েশিয়া যাওয়ার লক্ষ্যে পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ২৮ মে ঢাকায় আসেন হাবিবুর। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার দিন অপেক্ষা করে মালয়েশিয়া যেতে না পেরে বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেন। হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোম্পানির লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা অন্য দেশ দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠাবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে তো আর লোক নেবে না। তাহলে কীভাবে আমাকে পাঠাবে বুঝতে পারছি না।’ শেরপুরের মো: শাহীন পেশায় ছিলেন একজন মুদি ব্যবসায়ী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসায় পুষিয়ে উঠতে না পেরে দোকান বিক্রি করে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শাহীন জানান, ‘দোকান বিক্রি করে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে দালালের হাতে টাকা তুলে দেই।
এখন আমি নিঃস্ব হয়ে দালাল ও এজেন্সির দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। এখন আমার না বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় আছে, না আছে ঢাকায় থাকার। মরা ছাড়া সামনে আর কোনো পথ দেখছি না।’ সিরাজগঞ্জের আবদুল মোমেন, নাটোরের হাবিবুর রহমান ও শেরপুরের মো: শাহীনের মতো মালয়েশিয়া যেতে না পারা তৌহিদ, হেদায়েত, সৈয়দ আলীসহ অনেকেই বলেছেন, যে কোম্পানিকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) তারা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের এখন আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকের অফিসে গিয়েও বন্ধ পাওয়া গেছে। স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় তারা এখন আহাজারি করছেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়া যেতে ব্যয় হওয়ার কথা ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। বাংলাদেশ থেকে কৃষি, নির্মাণ, সেবা ও কারখানা ভিসায় মূলত শ্রমিক নিয়েছে মালয়েশিয়া। কৃষি ভিসায় সর্বমোট খরচ হয় ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার টাকা। মালয়েশিয়া থেকে ভিসা ক্রয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। বিএমইটি খরচ ১৫ হাজার টাকা। মেডিক্যাল বাবদ খরচ ১০ হাজার। ভিসা প্রসেসিং ১৫ হাজার এবং বিমান টিকিট ২৩ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অথচ কৃষি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। অথচ ৭ লাখ টাকা দিয়েও অনেকেই যেতে পারেননি মালয়েশিয়া।
২০২৩ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫৭ জন মালয়েশিয়া প্রবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জরিপ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভেরিটে ইনকরপোরেটেডসহ ৫টি সংস্থা। এতে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ৯৬ শতাংশ কর্মীকে অন্তত একটি উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। জমি, গরু বিক্রি করেও বিদেশ যায় কর্মীরা। অথচ প্রতারণা করে শ্রমিকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়ার কারণে মালয়েশিয়া ৪ বার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশে ৩১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে মন্ত্রণালয় (প্রবাসী কল্যাণ) অনুমোদন দিয়েছে। বিএমইটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে। আর ৩১ মে পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন গেছেন মালয়েশিয়ায়। সে হিসেবে কমবেশি ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। সংখ্যাটা কিছুটা কমবেশি হতে পারে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা ভিসা পেয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেননি, তাদের নিয়ে আসার ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তারা যেন এসে এখানে (মালয়েশিয়া) কাজ পায়।
অথচ ২৯ মে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিম জানিয়েছেন, সরকারিভাবে যারা মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসা পেয়েছেন তাদের ৩১ মে’র মধ্যেই সে দেশে যেতে হবে। এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বাংলাদেশসহ আরো ১৫টি দেশেও মেয়াদ বাড়ছে না।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়োগ নিয়ে এক লজ্জাজনক চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের ৪ জন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের পাঠানো একটি চিঠিতে। গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় নেটওয়ার্ক চক্র তৈরি হয়েছে। তারা শ্রমিক নিয়োগে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুই হয় দেশটির মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে। এই ঘুষ দিতে হয় ‘ভুয়া নিয়োগকর্তাদের জাল কোটা’ পাওয়ার জন্য। বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি অপরাধী নেটওয়ার্ক কাজ করে। তারা কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে নিয়োগের অনুমোদন নিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশন এবং বাংলাদেশি সিন্ডিকেট এজেন্টদের পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। প্রবাসী কর্মীরা অভিবাসনের জন্য সিন্ডিকেটের কাছে উড়োজাহাজ ভাড়া, পাসপোর্ট ও ভিসার খরচ ছাড়াও প্রকৃত নিয়োগ খরচের চেয়ে অনেক বেশি ফি দিয়ে থাকেন।
এদিকে জাতিসংঘের এই চিঠির পর বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি গণমাধ্যম ‘জাতিসংঘের ভাষায় প্রতারণা চক্রের’ নাম প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় সমাজের উঁচু তলার রাঘব-বোয়াল যারা সমাজের হর্তাকর্তা, ক্লিন ইমেজের অধিকারী এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তাদের কয়েকজন ‘মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ’ নিয়ে অপরাধ চক্রের সিন্ডিকেটের মূল হোতা। শুধু তাই নয়, তারা কেউ নিজেরাই কেউবা কৌশলে নিজেদের আড়াল করে স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে এই চক্রে জড়িয়েছেন। ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট’ চক্রে প্রথমে উঠে এসেছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের কোম্পানির নাম। এই কোম্পানির মালিক ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের গঠিত দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে গুরুতর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি।
তালিকায় দ্বিতীয় নাম স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড। এ কোম্পানির মালিক ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স করে তিনি মাত্র দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া পাঠান। আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল নামের কোম্পানির মারিক ঢাকার একজন এমপি। তিনি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠান ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। এই চক্র গঠনের সময় তিনি ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি। আরেকজন হলেন দুই বারের সাবেক মন্ত্রী। তিনি পুরনো ‘আদম’ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি কৌশলে স্ত্রীর নামে অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ এবং মেয়ের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্রে জড়িয়ে ৯ হাজার ৮৬১ জন কর্মী পাঠান। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা এবং বায়রার সাবেক নেতারা নিজেদের ও ছেলেমেয়েদের নামে কোম্পানি খুলে সিন্ডিকেট জড়িয়ে মালয়েশিয়ায় একচেটিয়াভাবে কর্মী পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং বায়রার কয়েকজন সদস্য জানান, বিপুল কর্মী বিদেশ পাঠানো মালয়েশিয়া চক্র হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে দেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয় না। সুযোগটি পায় অল্পসংখ্যক এজেন্সি। শুরুতে চক্রের সদস্য ছিল ২৫টি এজেন্সি। পরে তিন ধাপে বেড়ে ১০০টি হয়েছে। চক্রে নাম ঢোকাতে প্রতিটি এজেন্সির কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে। আর চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে অন্তত দেড় লাখ টাকা ‘চক্র ফি’ নিচ্ছেন। অবশ্য এ টাকার একটি অংশ চলে যায় মালয়েশিয়ার চক্র নিয়ন্ত্রকদের কাছে। বায়রার যারা এই চক্রে জড়ানোর সুযোগ পাননি তারা বেজায় ক্ষুব্ধ।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions