ডেস্ক রির্পোট:- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একটা-দুইটা নয়, হাজার হাজার বেনজীর ও আজিজ তৈরি করেছে সরকার। আমরা যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাই তখন ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। আর তাকে (বেনজীর) জামাই আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে তুলে দিয়েছে, যেন দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। সেই ব্যবস্থাটা করেছে এই সরকার।’
শনিবার (১ জুন) বিকালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা-সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সরকার হচ্ছে চোরের রাজা বাটপার। যারা চুরি করে তাদের সব সময় প্রশ্রয় দেয়। কারণ, তারা বাটপারি করে। আরেকজন সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ, যার একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল আল–জাজিরাতে। সেখানে দেখেছি কীভাবে তিনি তাদের ভাইদের রক্ষা করার জন্য প্রভাব খাটিয়ে তাদের মুক্ত করেন। পরে পাসপোর্ট ও ভিসা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এখন টনক নড়েছে। তারা বলছে, এখন নাকি তারা তদন্ত করবে। শুধু একটা বেনজীর বা একটা আজিজ নয়, হাজার হাজার বেনজীর ও আজিজ তৈরি করেছে সরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। কখন করেছেন, যখন তিনি র্যাবের ডিজি ছিলেন, পুলিশের আইজি ছিলেন। যার বেতন সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেশি হয় না, সেই লোকের এখন দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যখন এটা ফাঁস হয়ে গেল এবং যুক্তরাষ্ট্র যখন স্যাংশন দিল তারপর কিন্তু তাকে তারা আইজিপি করেছে এবং সব দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন সরকারকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো তোমরা তো সব দুর্নীতিপরায়ণ লোককে, যারা মানুষের অধিকারকে খুন করেছে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে তাদের তোমরা পুরস্কৃত করছো। সুতরাং তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, ‘বেনজীর মে মাসের ৪ তারিখে পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছে। কাগজে-কলমে বলছে মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ৬০ কোটি টাকাই নয়, আরও অসংখ্য টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এরা কি চোখে আঙুল দিয়ে বসেছিল? ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কি চোখে আঙুল দিয়ে বসেছিল? সরকার কি চোখে আঙুল দিয়ে বসেছিল? আসলে তাকে জামাই আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে তুলে দিয়েছে সরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ যে দেশে আমরা বাস করি, তাকে বলি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশটা স্বাধীন করবার জন্য যাদের দায়িত্ব ছিল, তখন তারা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যখন পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছিল, তাদের বেশির ভাগ নেতা পালিয়ে চলে গেছে এবং মূল নেতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এই কথাগুলো বললে তারা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটাই হলো চিরন্তন সত্য। শহীদ জিয়া ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাই করেননি, এরপর যখনই বাংলাদেশের সামনে আরও বড় সংকট উপস্থিত হয়েছিল ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে, তখন মানুষের সামনে ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।’
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও সদর মেট্রো থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল ইসলাম ও ড. অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান প্রমুখ।