ডেস্ক রির্পোট:- ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশন নানা উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে না। দিনদিন ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপে ভোটার আরও কমেছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৬.১০ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৭.৫৭ শতাংশ।
কিন্তু গত বুধবার শেষ হওয়া তৃতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৬.২৪ শতাংশ। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসি নানা উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় কোন্দল, একটি বড় দলের ভোটে না আসা, প্রার্থীর অজনপ্রিয়তা, শহর এলাকায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি এবং বৈরী আবহাওয়া, হাওরে ধান কাটার ব্যস্ততার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। কেননা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে যে ভোট পড়েছিল; উপজেলা নির্বাচনে সেই ভোটাররাও কেন্দ্রে আসছেন না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ে ছিল। কিন্তু উপজেলায় ভোটারের উপস্থিতি ৩৬-৩৭ শতাংশের ওপরে উঠছে না।
এদিকে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৩৬.২৪ শতাংশ। ৯ উপজেলায় ২৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। গতকাল মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো তথ্য একীভূত করে এ তথ্য জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন হয়।
ভোটের পরিবেশকে ‘শান্তিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে। উপস্থিতির যে তথ্য পেয়েছি, সেটা ৩৫ শতাংশের কমও হতে পারে, বেশিও হতে পারে। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৮৭ উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ২ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৮৫ জন। এদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৩ জন। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ৩৬.২৪ শতাংশ। এ ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ৫৮.৮৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদরে ১৩.৬৪ শতাংশ। এর আগে ৮ মে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৬.১০ শতাংশ। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৭.৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে এক উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ৭৪.৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৭.৫৭ শতাংশ। ইসির এ ধাপের একীভূত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে। এ ধাপে সবচেয়ে ভোটের হার বেশি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৭৪.৯৫ শতাংশ। সব থেকে কম ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোটের হার ১৭.৯৮ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে বেড়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭টি উপজেলায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুই উপজেলায় তিনটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় নির্বাচন হলেও তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ওই তিনটির ফলাফল ইসি থেকে সমন্বয় করা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৩টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদের ফলাফল সমন্বয় করা হয়েছিল। এতে দেখা গেছে- ব্যালটে অনুষ্ঠিত ১২৯টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩৮.৪৭ শতাংশ। আর ইভিএমে অনুষ্ঠিত ২৩টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩২.১৭ শতাংশ। ইসির জনসংযোগ পরিচালক জানান, ১৫৩টি উপজেলায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলা পরিষদে চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ এবং ৯ জুন স্থগিত উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা আছে।
আইনের বাইরে কাউকে সেবা দেওয়া যাবে না : ইসির নতুন সচিব : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন সচিব শফিউল আজিম বলেছেন, কাউকে আইনের বাইরে গিয়ে সেবা দেওয়া যাবে না। গতকাল বিদায়ী সচিব ও নতুন সচিবের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। শফিউল আজিম বলেন, আমরা তো রাজনীতির ভিতরেই বসবাস করি। গণতন্ত্র সরকার রাজনৈতিক দল জনগণ সবকিছু মিলিয়েই গণতন্ত্র। কাউকে আইনের বাইরে গিয়ে সেবা দেওয়া যাবে না। যেটি প্রাপ্য সেটি একশ ভাগ দেওয়া সম্ভব।