রাঙ্গামাটি:- পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় ১৪৪টি ক্রিক উন্নয়নের বাঁধ ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি। এছাড়া বিদ্যমান ক্রিক সংস্কার করা হয়েছে ৭৩, যার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৩১টি সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে ৭৮টি, এরমধ্যে রাঙ্গামাটিতে ২৬টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দুইটি অভয়াশ্রম নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থাপিত ক্রিকের মাধ্যমে ১৯০ মে.টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্টেক হোল্ডার ক্যাম্পেইন বিষয়ক কর্মশালায় এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় পরিষদের এনেক্স ভবন সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সভাপতি দীপংকর তালুকদার, এমপি। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল্লা আল হাসান। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মো. এরশাদ বিন শহীদের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অধীর চন্দ্র দাশ। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা হিজবুল বাহার ভ‚ঁঞা। তিনি জানান, সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে তিন পার্বত্য জেলায় ৩৯৮০ জন সুফলভোগীকে এরমধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ১৪৮০ জন সুফলভোগীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান করা হয় তিন পার্বত্য জেলায় ৭৭৫ জন নিবন্ধিত জেলে পরিবারের মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ৩৭৯ জন নিবন্ধিত জেলে পরিবারের মধ্যে বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান করা হয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি ও সদর উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদে দুটি মাছের অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাউখালী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারসহ খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলাধীন মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারসমূহ মেরামত ও সংস্কার করা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, আমাদের কিছু বন্ধু আছে তারা সরকারের সবকিছুই ষড়যন্ত্রের চোখে দেখেন। সরকারের উন্নয়ন প্রোগ্রামে কেউ আসতে চাইলে বাধা দিবে, যারা এসব তোয়াক্কা না করে এসব অনুষ্ঠানে আসে তাদেরকে সরকারের দালাল বানানোর চেষ্টা করে। তারা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আর আমরা বলি বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভিন্ন করার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আর সেই তালে পার্বত্য চট্টগ্রামেরও উন্নয়ন হচ্ছে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে, সব জায়গায় বিদ্যুৎ গেছে, স্কুল, কলেজ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। মানুষ দুবেলা পেটভরে খেতে পারছে আর এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার ফলে। তিনি বলেন, জেলেরা যাতে মাছ আহরণ বন্ধকালীন অনাহারে না থাকেন, সেজন্য আমরা তিন মাস ২০কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়ার আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী সেটা মেনে নিয়েছেন। যার ফলে শুধু রাঙ্গামাটিতেই ২২ হাজার জেলে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে ৩ মাস চাল বরাদ্দ পাচ্ছে। এছাড়া মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিন পার্বত্য জেলায় প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেটার সুফল বর্তমানে এলাকার মানুষ পেতে শুরু করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অংসুইপ্রæ চৌধুরী বলেন, আমাদের মাননীয় সাংসদ দীপংকর তালুকদার প্রধানমন্ত্রী থেকে এসব প্রকল্প নিয়ে এসেছিলেন শুধুমাত্র এই এলাকার মানুষের ভাগ্যেন্নয়নের লক্ষ্যে তাই যারা সুফলভোগী তারা এর সদ্ব্যবহার করবেন। আর এর ফলে নিজেদের যেমন ভাগ্যেন্নয়ন সম্ভব হবে তেমনি ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
কর্মশালায় প্রকল্প পরিচালক জানান যে, পার্বত্য অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ এবং পার্বত্য জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য অঞ্চলে মাছের উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পাহাড় ২৪