শিরোনাম
মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ‘মুসলিম ফ্রন্ট’ মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের কোনো ভূমিকা ছিল না : মাহমুদুর রহমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর ছদ্মবেশে বিহারে ৮ বছর, থাইল্যান্ডে পালাতে গিয়ে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার দেশ ছাড়ার আগে যা বলতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১২৯৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি, আরও ৬ জনের প্রাণহানি পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে : ধর্ম উপদেষ্টা রাঙ্গামাটিতে ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার যখন তারা ডেকেছে গিয়েছি, এটা তো রুটি-রুজির জায়গা ৩ পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ক্ষমতায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা

বান্দরবানে কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
  • ১১৮ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- বান্দরবান সদর উপজেলা বম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা লাইমি পাড়া থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নারী শাখার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম (১৮) কে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব- ১৫।

শুক্রবার (১৭মে) সন্ধ্যায় ৬টায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে র‍্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃত নারী আকিম বম বান্দরবান সদর উপজেলার লাইমি পাড়ার সিয়াম থাং বমের মেয়ে। সে কুকি-চিনের এই সমন্বয়ক দেশে-বিদেশে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব বলেন, এ পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে কুকি-চিন আর্মি (কেএনএ) -এর কেন্দ্রীয় কমিটির বান্দরবান সদর শাখার সমন্বয়ক ও প্রধান রসদ সরবরাহকারী চেওসিম বম এবং কেএনএফ এর সভাপতি সানজু খুম বম’সহ তিনজন কেএনএফ সন্ত্রাসী র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আকিম বম’কে প্রসঙ্গে বলেন, বিগত ২০২৩ সাল দিকে কাল্লা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে অধ্যয়নকালে মাইকেল নামে একটি ছেলের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং মাইকেলের মাধ্যমে সে কেএনএ ট্রেনিং এ যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেই সুবাদে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শুরু দিকে আকিম ও মাইকেল সন্ধ্যা বেলায় পায়ে হেঁটে কেএনএ এর ট্রেনিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং পরবর্তী দিন ভোর পাঁচটার দিকে তারা রোয়াংছড়ির গহীন পাহাড়ী জঙ্গলস্থ ট্রেনিং সেন্টারে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছানোর পর ভান থার ময়-বম নামে কেএনএ এর একজন নারী কমান্ডারের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং ট্রেনিং সেন্টারে তাদেরকে স্বাগত জানায়। গ্রেফতারকৃত নারী ভাষ্যমতে, সেখানে আরো অনেক মেয়ে ছিল, তবে তাদের বেশিরভাগই মুখে কালি মাখতো। তাদের ট্রেনিং সেন্টারের নাম ছিল কেডিওন (ঈশ্বরের দিকে)। আকিম বম’সহ তাদের ব্যাচে ২০ জন প্রশিক্ষণার্থী ছিল। তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতো ৪-৫ জন এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য আলাদা সদস্য নিয়োজিত ছিল।
কেএনএফ নারীদের ট্রেনিং এর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভোররাত তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠে নারীদের ট্রেনিং শুরু করতো। প্রশিক্ষণ হিসেবে শারীরিক প্রশিক্ষণ বিশেষ করে মার্শাল আর্ট ট্রেনিং গ্রহণ করতো। তাদের বেত দিয়ে আঘাত করা হতো এবং কষ্টসহ্য করা শেখানো হতো। এছাড়াও লাঠি দিয়ে আঘাত ও টর্চার করা হতো, যাতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে। প্রশিক্ষণে প্রধানত তাদের জঙ্গলে পাহাড়ি এলাকায় নিজেদের কিভাবে লুকিয়ে রাখতে হয় সেটা শেখানো হতো। এছাড়াও জঙ্গলে বৈরী পরিবেশে কিভাবে টিকে থাকতে হয় সেই প্রশিক্ষণও দিতো। এ সকল প্রশিক্ষণ সকাল ১০টা পর্যন্ত চলমান থাকতো। তারপর ১০টার দিকে খাবার দেয়া হতো। প্রশিক্ষণকালে তারা সাধারণত ভাত ও কলার ভুঁড়ি খেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতো। মাঝে মধ্যে বনের পাখি, কাঠবিড়ালি শিকার করতে পারলে তা রান্না করে খেতে দিতো। প্রশিক্ষণরত কেএনএফ সদস্যরা সাধারণত প্রতি সাত দিন পর তাদের মুখের কালি পরিবর্তন করতো।
র‍্যাব বলেন, ট্রেনিংয়ের সব সময় মেয়েরা নেতৃত্ব দিতো, বিশেষ করে ভান থার ময়-বম নামে একজন নারী নেতৃত্বের ছিল। তবে ছেলেরা এসে ভান থার ময়-বমকে দিক-নির্দেশনা দিতো। প্রাপ্ত নির্দেশনানুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রশিক্ষণে থাকা মেয়েদের একদলে ৫০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের ব্যাচে ট্রেনিং চলাকালীন সেখানে মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণে থাকা ছেলেরা আসতো। প্রায় তিন শতাধিক পুরুষ সদস্য প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিল বলে জানতে পেরেছি।এছাড়া রুমা এলাকায় আরো দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ প্রশিক্ষণরত ছিল। সাধারণত ছেলেদের সাথে মেয়েদের যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হতো না এবং ছেলেদের মুখে কালি মাখানো থাকতো।
প্রশ্নের জবাবে গ্রেফতারকৃত নারী সঙ্গী মাইকেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাইকেল কেএনফের একজন অস্ত্র চালানোসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অন্যতম সদস্য। সেই বর্তমানে পার্বত্য এলাকাতে আছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা অনেক ভিডিওতে দেখেছি, কেএনএফের অনেক নারী সদস্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে কেএনফের অন্যতম নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এবং গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য যে, এ পর্যন্ত ২৪জন নারীসহ ৮৬ জনকে রুমা ও থানচি ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনায় ৯টি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৬০ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত চলতি বছরে ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপক অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা দেড় মাসেও উদ্ধার করা যায়নি। সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে।

সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions