শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

নিজ বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ২৫ কোটি টাকা লুট

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪
  • ১১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর মতিঝিলের ২৮/১ টয়েনবি সার্কুলার রোড এবং উত্তরার বাসা নম্বর ১৪, রোড নম্বর ২৮, সেক্টর ৭—এই বাড়ি দুটির মালিক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক। বাড়ি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও কাগজে-কলমে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ১০ বছরে তিনি বাড়িভাড়া বাবদ ২৫ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন। মূলত ড. সাদেক অবৈধভাবে ভিসির দায়িত্ব পালনের সময় ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাড়িভাড়া বাবদ এই অর্থ পরিশোধ করা হয়।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যক্রম, জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিপুল অর্থ আয় করলেও প্রভাষকদের বেতন দেওয়া হতো মাত্র ১৩ হাজার টাকা। অভিযোগ ওঠার পরও সরকারি কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই অবৈধভাবে ১০ বছর ভিসির দায়িত্ব পালন করেছেন ড. মোহাম্মদ সাদেক।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
তদন্ত কমিটি আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল হস্তান্তর না করা, ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক ডাকা হবে। ওই বৈঠকে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতিঝিলের টয়েনবি সার্কুলার রোডের বাড়িটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখিয়ে ১০ বছরে ন্যূনতম ২০ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো না। এ ছাড়া উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বাড়িটিকেও ভাড়া ক্যাম্পাস দেখিয়ে চার কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বাড়ি দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী সরকার ও কমিশন কর্তৃক ক্যাম্পাসের জন্য অনুমোদিত নয়।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের বাড়িটি ১০ তলা। নিচতলায় দোকান। পরের দুই তলায় বিভিন্ন অফিস এবং ওপরে আবাসিক হোটেল। বাড়িটি কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানাতে পারেনি। আর উত্তরার বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেটি ছয়তলার একটি আধুনিক আবাসিক ভবন।

ইউজিসি বলছে, আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে কমিশন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাস বাড়ি নম্বর ২৫, সড়ক নম্বর ৫, সেক্টর ৭, উত্তরা মডেল টাউন। এই বাড়ির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে গত ১০ বছরে ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাসের পর আইন অনুযায়ী সব আউটার ক্যাম্পাস অবৈধ ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে কয়েক কোটি টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম স্থানান্তরিত হওয়ার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি চার লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৮ টাকা ক্যাম্পাসের বাড়িভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক ২০১২ সালের পর থেকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত না হয়েও ভিসির পরিচয় প্রদান, শিক্ষার্থীদের মূল সনদসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক ও একাডেমিক দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি প্রায় এক দশক ধরে অবৈধভাবে ভিসি থাকাকালীন আইনবহির্ভূত ও এখতিয়ারবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা এবং পদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি গুণগত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থায় মনোযোগী হয়। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের আনাচকানাচে সার্টিফিকেটসর্বস্ব ক্যাম্পাস খুলে বসে। এমনকি সৌদি আরবেও অনুমোদন ছাড়া আউটার ক্যাম্পাস খোলে। এসব ক্যাম্পাসের মাধ্যমে তারা অসংখ্য সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের পরিবার কুক্ষিগত করে রেখেছে। বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তাঁর ছেলে ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেক। ড. সাদেক বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য না হলেও বিওটি পুনর্গঠন, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি, ব্যাংক হিসাব পরিচালনাসহ নানা ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বিওটি সভায় কোনো মতদ্বৈধ দেখা দিলে ড. সাদেকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়, যার পুরোটাই আইনবিরুদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে ইউজিসি দেখেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ তহবিল আইন অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়নি। কারণ আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড মনোনীত একজন কর্মকর্তা ও ট্রেজারারের স্বাক্ষরে হিসাব পরিচালনা হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত ট্রেজারার ছিলেন না। সাধারণ তহবিলে শিক্ষার্থীদের বেতন, ফি জমা করে সেখান থেকে খরচের বিধান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসবের কিছুই মানা হয়নি।

ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যক্রম এবং জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. সাদেক, তাঁর স্ত্রী সালেহা সাদেক এবং তাঁদের ছেলে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর সাদেক পরস্পর যোগসাজশে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। আয়কর ফাঁকিসহ বিপুল অর্থের এফডিআর ও পাচার, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন এবং ঢাকায় ১০০ বিঘা জমি ও অসংখ্য ফ্ল্যাট ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। এসংক্রান্ত অভিযোগগুলো রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বেতন বিবরণী পর্যালোচনা করে ইউজিসি খুঁজে পায়, শিক্ষকদের যে বেতন দেওয়া হতো তা রীতিমতো অপ্রতুল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রভাষক পর্যায়ে একজন শিক্ষকের বেতন ১৩ হাজার টাকা এবং অধ্যাপক পর্যায়ে একজন শিক্ষকের বেতন ১৯ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। যদিও ড. সাদেক শিক্ষক হিসেবে বেতন নেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর সাদেক নেন ৭৫ হাজার ৯৬০ টাকা।

ইউজিসি তাদের সুপারিশে বলেছে, ‘ড. সাদেক ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে ভিসি পদে থেকে যেসব কার্যক্রম চালিয়েছেন তা শুরু থেকে বাতিল ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হিসেবে বিবেচিত হবে। একই সঙ্গে তিনি যেসব সুবিধা নিয়েছেন তা ফেরত দিতে হবে। ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া হিসেবে আত্মসাৎ করা সব অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলে ফেরতের সুপারিশ করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বেতন যাতে জাতীয় বেতন স্কেলের নিচে না হয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আয়-ব্যয় সরকার অনুমোদিত একটি সিএ ফার্ম দিয়ে পুনরায় নিরীক্ষার সুপারিশ করা হলো।’ একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিনিয়োগ বা তহবিল অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর না করার সুপারিশ করা হয়।

সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অচলাবস্থা নিরসনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করে জরুরি ভিত্তিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেক বলেন, ‘আমাদের উত্তরার বাড়িটিতে কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চলেছিল। আর মতিঝিলের বাড়িটিতে আগে আউটার ক্যাম্পাস ছিল। আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর ওই বাড়িটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’ তবে কত দিন অফিস আর স্টোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।

ড. জাফর সাদেক আরো বলেন, ‘আমাদের ট্রাস্টি বোর্ড নিজেই চলবে। এর জন্য ট্রাস্ট ডিড সংশোধন করতে আমরা আইনজীবীর কাছে দিয়েছি। এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বর্তমান বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক করা হয়েছে।’

তবে গতকাল অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহজাহান খানকে ফোন করা হলে তাঁর অফিস থেকে বলা হয় তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে আবার ফোন করলে বলা হয় তিনি বেরিয়ে গেছেন।কালের কণ্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions