শিরোনাম
পার্বত্য চট্টগ্রম চুক্তির ২৭ বছর পূর্তিতে রাঙ্গামাটিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ নতুন সরকার আসার পর দেশে জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ছে : ঊষাতন তালুকদার রাঙ্গামাটিতে ২১০ কোটি টাকার কমলা উৎপাদন ভারতের পতাকায় ‘প্রণাম’ করলে চিকিৎসা পাবে বাংলাদেশীরা মন্দির খোঁজার জন্য তারা মসজিদ ভেঙে ফেলতে চাইছে : মেহেবুবা মুফতি পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও টেকসই ও বেগবান হবে: প্রেসিডেন্ট শ্বেতপত্রে হাসিনার কালো অধ্যায়,প্রধান উপদেষ্টা বললেন ঐতিহাসিক দলিল বিচ্ছেদের জল্পনার মাঝেই নতুন অধ্যায় শুরু করছেন ঐশ্বরিয়া ব্যাংক খাতে সৃষ্ট মন্দ ঋণ দিয়ে করা যেত ২৪টি পদ্মা সেতু,শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন বিক্ষোভে উত্তাল জর্জিয়া, ‘বিপ্লবের চেষ্টা’ বললেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট

জোড়াতালির কারিগরি শিক্ষা,প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৮২ শিক্ষক পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৩৪ জন। শিক্ষকের ১৪৮টি পদ ফাঁকা রেখেই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। একই অবস্থা কর্মচারী পদের ক্ষেত্রেও। ১৫৯টি পদের মধ্যে ৯৫টিই ফাঁকা। সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক ও জনবল দিয়ে কোনোরকম ক্লাস ও অন্যান্য কাজ চালানো হচ্ছে। ল্যাবের যন্ত্রপাতিও অনেক পুরোনো। আবার ল্যাব পরিচালনা করার মতো জনবল সংকটও প্রকট। অবকাঠামো ও শিক্ষক-কর্মচারীর অপ্রতুলতার কারণে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। কারিগরির মূল পাঠ ব্যবহারিক হলেও একজন শিক্ষকের অনুপাতে ১০৩ জন শিক্ষার্থী হওয়ায় সেটি যথাযথ হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার ছাত্র হোস্টেলের দরজা-জানালা ভাঙা, বাথরুম নোংরা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষ পঞ্চম সেমিস্টারের একজন ছাত্রী বলেন, এখানে চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক ল্যাব নেই। পুরোনো ল্যাব ও যন্ত্রপাতি দিয়েই কোনোরকম চলছে। ক্লাসও ঠিকমতো হয় না। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার অতিথি শিক্ষকদের বেশিরভাগেরই কারিগরির অভিজ্ঞতা নেই। যে কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাইরে প্রাইভেট, কোচিংয়ে পড়েন।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী প্রদীপ্ত খীসা বলেন, পিএসসি থেকে কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই শিক্ষক সংকট কেটে যাবে। ল্যাবগুলো যে পুরোনো তা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে জায়গাও কম। ক্লাসরুম সংকটের কারণে ল্যাবে ক্লাস নিতে হয়। সে কারণে অবকাঠামো নির্মাণ অতীব জরুরি। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের দুটি হোস্টেলে ১২০ জন করে ২৪০ জন এবং ছাত্রীদের হোস্টেলে ৪০-৫০ জনের আবাসন সুবিধা দেওয়া যায়। এসব সংকট দ্রুত নিরসন করা গেলে দক্ষ ও কর্মক্ষম প্রকৌশলী তৈরি করা সম্ভব।

শুধু ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নয়, দেশের প্রায় সব পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) নানা সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে প্রধান সংকট শিক্ষকের। যে কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক এনে ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে তাদের দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতও কাঙ্ক্ষিত নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হওয়ার কথা ছিল ১ : ১২। সেখানে এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১ : ৫০। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সেটি ১ : ১০০ ছাড়িয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ল্যাব সংকটও। পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে শিক্ষাদান চলছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে শ্রেণিকক্ষ সংকটও প্রকট। সে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে ল্যাবেও ক্লাস নিচ্ছে। কিন্তু সেখানে জায়গা সংকুলান হয় না। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থাও অপ্রতুল।

তথ্যমতে, দেশে তিনটি স্তরে কারিগরি শিক্ষার পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এগুলো হলো সার্টিফিকেট স্তর (এইচএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও বেসিক ট্রেড কোর্স); ডিপ্লোমা স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং ডিগ্রি স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে বিএসসি-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-টেকনিক্যাল এডুকেশন)। এর বাইরে আছে বিভিন্ন মেয়াদি শর্টকোর্স। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৬৮৪টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৩০ জন।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৯১টি। সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে এখনো অর্ধেকের বেশি শিক্ষক পদ ফাঁকা রয়েছে। শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মচারী সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

দেশের প্রথমসারির কারিগরি প্রতিষ্ঠান ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। গত সপ্তাহে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে শিক্ষক বা কর্মকর্তার ১৩৪টি পদের মধ্যে ৮১টি পদই ফাঁকা রয়েছে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরের ১০০টি পদের মধ্যে ৬৪টি এবং কর্মচারীদের ৪৪টি পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৭টি। প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাহানা বেগম কালবেলাকে বলেন, এখানে শিক্ষক ও ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতও অনেক বেশি। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি কেনার পর্যাপ্ত টাকা পেলেও অবকাঠামো কম। একটি ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। সেটি হয়ে গেলে আশা করছি সংকট কেটে যাবে।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে জানা গেছে, এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোট পদ ৬৬৭টি। এর মধ্যে শিক্ষকের ৩৯৪টি পদের মধ্যে ২৭২টি ফাঁকা। অন্যদিকে কর্মচারীর ২০ শতাংশ ফাঁকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা বলেছেন, ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা পলিটেকনিকের যাত্রা শুরু। এখন শিক্ষার্থী ১০ হাজারের বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী আবাসন বৃদ্ধি পায়নি। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী কাজী জাকির হোসাইন বলেন, পিএসসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চলমান থাকলে সংকট দ্রুত নিরসন হবে। ১১ তলা একটি ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে গেছে। সেটি নির্মাণ হয়ে গেলে কয়েক বছরের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে কারিগরির জন্য সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে পলিটেকনিকের পদ ৭ হাজার ৪৫১টি। পলিটেকনিকে নন-ক্যাডার থেকে ৩৮তম বিসিএসে ৩৯৫ জন, ৪০তম বিসিএসে ২৭৮ জন এবং ৪১তম বিসিএসে ২২৩ জন শিক্ষক তথা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টিএসসিতে ১ হাজার ৪০০ পদে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। সরকারের অর্থবছর অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগও ভাগ করা আছে। এসব নিয়োগ হয়ে গেলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আমান উল্লাহ খান ইউসুফজী বলেন, ১২ হাজার পদ সৃষ্টি করে ২৫ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। জুন-জুলাইয়ে আরও কিছু শিক্ষক নিয়োগ হতে পারে। তবে এসব শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি সরকারের নজরে আসা দরকার। তিনি বলেন, মানসম্মত ও দক্ষ শিক্ষার্থী পেতে হলে অবকাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে হলে শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মোটকথা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ বলেন, কেবিনেট থেকে মন্ত্রণালয়—সবাই কারিগরি শিক্ষার প্রসার চায়। কিন্তু যারা এটি বাস্তবায়নে মূল কাজটি করবেন তারা পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সংকট নিরসনে কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা যথাযথও নয়, পর্যাপ্তও নয়। অনেক আগে যেমন ল্যাব সুবিধা ছিল, তা আগের মতোই রয়ে গেছে। এজন্য কারিগরি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দরকার।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজিজ তাহের খান বলেন, শিক্ষকের কিছু পদ রয়েছে যেগুলো চাইলেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। এগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হয়। আবার পিএসসি থেকেও নিয়মিত শিক্ষক পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। অন্য সংকটগুলো নিরসনেও কাজ করছি।

কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৫০ শতাংশের বেশি শিক্ষক পদ এখনো ফাঁকা রয়েছে। তবে, সব পদে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিএসসিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু সমস্যা হলো অনেকেই নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করেন না। সেখানে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। তিনি বলেন, অবকাঠামোসহ শিক্ষক নিয়োগে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। সব সংকটের সমাধান হতে ৪-৫ বছর সময় লেগে যাবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরিতে যোগদানের পরপরই শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। এটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত, চলতেই থাকবে।

টেনেটুনে চলছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো:

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষের পদ খালি। চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। বিভিন্ন পদে ২৩৫ জনবল চাহিদার বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৫১ জন। এই প্রতিষ্ঠানে এখন শূন্য পদ ১৮৪টি। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৪২০টি পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ২৫৭টি। দুটি উপাধ্যক্ষ পদের দুটিই খালি। ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচটি টেকনোলজিতে ১১১ শিক্ষক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৩৪ জন। এর মধ্যে তিনজন রয়েছে প্রেষণে। প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও তাদের জন্য আবাসন সুবিধা নেই। জমির অভাবে ল্যাবের আয়তনও বাড়ানো যাচ্ছে না। উপেন চন্দ্র রায় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এভাবেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হয়ে গেল। না পেলাম শিক্ষক, না পেলাম হল সুবিধা। আবাসন সুবিধা না থাকায় যাতায়াতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’

বরিশাল পলিটেকনিক ১৪৩ শিক্ষক পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪৩ জন। ১৯৫টি কর্মচারী পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮৩ জন। মৌলভীবাজার পলিটেকনিকে শিক্ষকদের ১২৬টি পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৯৮টি। এ ছাড়া, ৭৬টি পদে টেকনিক্যাল স্টাফ থাকার কথা থাকলে আছে ২৭টিতে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্টাফ ৩৯ জন থাকার কথা থাকলেও চারজন আছেন। এই পলিটেকনিকে স্টেপ প্রকল্পের আওতায় ১৪ শিক্ষক কর্মরত থাকলেও প্রায় চার বছর ধরে কোনো বেতন পাচ্ছেন না তারা।

টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও একই দশা:

সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ৭০টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩১ জন। মানিকগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মোট ৭৭টি পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৪৬টি। তবে সম্প্রতি পাঁচ শিক্ষক নতুন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যে ধরনের পড়াশোনা, তাতে এখনকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনুযায়ী পড়ানো সম্ভব নয়। প্রচুর শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। উড ও মেটাল ওয়ার্কের মতো বিষয়গুলোর জন্য কোনো ল্যাব বা ওয়ার্কশপ নেই। আবার কম্পিউটার ল্যাবে শিক্ষার্থী অনুযায়ী কম্পিউটারের স্বল্পতা রয়েছে। এগুলো নিশ্চিত না করলে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা ছাড়াই পাস করে বের হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি সিদ্দিক আহম্মেদ বলেন, সরকারকে খুশি করতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখানো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটি করতে গিয়ে দক্ষতা পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কারিগরিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৫০। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। একজন শিক্ষকের পক্ষে এত বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আবার পেপারওয়ার্ক বেশি হওয়ার কারণেও শিক্ষকরাও ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিলেবাস পরিবর্তন করা হচ্ছে না। এটি নিয়মিত পরিবর্তনের জন্য একটি গবেষণা সেল দরকার। পাশাপাশি কারিগরি বোর্ড বা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন পদে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

বেসরকারির অবস্থা আরও নাজুক:

সরকারির চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থা বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা যায়, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক ও আধুনিক ল্যাব নেই।

ফেনীর বেসরকারি কমপেক্ট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে চারটি টেকনোলজিতে দুইশর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ইগলু চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, একটি ল্যাব দিয়ে তারা চলছেন। তাদের একটি সিএসটি ল্যাব সংকট রয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল কিছু যন্ত্র আছে, যেগুলোর অনেক বেশি দাম হওয়ায় তারা সংগ্রহ করতে পারেননি।

শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য:

শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শুধু ভবন নির্মাণ করলেই সংকটের সমাধান হবে না। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষ প্রশিক্ষক এবং শিক্ষক পাওয়া। যেসব শিক্ষক আমরা পাচ্ছি তারা কারিগরি শিক্ষার জন্য উপযুক্ত নন। আবার কারিগরি শিক্ষার শিক্ষক রাতারাতি পাওয়া যাবে না। ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের নিয়োগ করা ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে না। এজন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এখন কারিগরি শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষায় নিয়ে আনতে হবে। আমরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করছি।কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions