বান্দরবান:- বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা মসজিদ ঘেরাও করে মুসল্লিদের মোবাইল ফোন ছিনতাই, আনসার ও পুলিশের অস্ত্র-গুলি লুট এবং সোনালী ব্যাংক লুট করা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আনসার ও পুলিশের ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। সোনালী ব্যাংকের ভল্টে এক কোটি ৫৯ লাখ ছিল। ভল্ট ভেঙে তারা টাকাগুলো লুট করেছে বলে শোনা গেলেও কর্তৃপক্ষ এখনও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, স্থানীয়দের ধারণা এ ঘটনা নব্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের তথ্য মতে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রুমা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিরা সবাই যখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন ঠিক সেই মহূর্তে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। আর এর পরপরই ৭০-৮০ জন অস্ত্রধারী মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের জিন্মি করে লুটে নেয় সবার মোবাইল ফোন।
এরপর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে খুঁজে বের করে তাকে নিয়ে মসজিদের পাশেই সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। এসময় ব্যাংকে থাকা পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যদের পিটিয়ে তাদের ১৪টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ও ম্যানেজারকে নিয়ে যায় মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সিনেমার মতো করে রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের মারধর করে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়।
কয়েকজন মুসল্লি জানান, এ ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত আর আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
এদিকে এমন ঘটনার পর আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো রুমা উপজেলা জুড়েই। আতঙ্কে কারো সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলছে না।
ঘটনার পর বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান সদর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান, জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা পরিষদসহ রুমার বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করে টহল দিচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
এদিকে সকাল ৯টায় সোনালী ব্যাংকের তালা খোলা হয় এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ব্যাংকের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভাঙচুরের পাশাপাশি ভল্ট ভাঙার স্থান পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। টাকা লুট হয়েছে কি না তা সিআইডির একটি টিম আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনার পর আমরা বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি আর যারা এতে জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু হয়েছে। টাকা লুটের ব্যাপারে এখনই সঠিকভাবে কিছু বলা যাবে না। সিআইডির তদন্ত শেষে বিস্তারিত ঘটনা জানা যাবে।
স্থানীয় তথ্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সকাল ১০টায় রুমা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে উদ্ধার করার এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করেন।
অন্যদিকে রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক লুটের পর থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকেও ডাকাতি করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে থানচি বাজার ঘেরাও করে অস্ত্রধারীরা। পরে থানচি সোনালী ব্যাংক ও পাশের কৃষি ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে লুটতরাজ চালায়। পরে বাজারের বেশ কয়েকজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে চলে যায় তারা।
কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই বলেন, তারা চোখের পলকে আমাদের ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে তারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছে কি না তা সব দেখার পর বোঝা যাবে।বাংলানিউজ