ডেস্ক রির্পোট:- প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি আসছে। ঈদের আগেই এ পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এবার শতাধিক কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। বিগত তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে শেষ সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল। টানা চতুর্থবার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রশাসনে নতুনভাবে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এরই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়মিত পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন বিসিএস (প্রশাসন) ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা। ১৭ ও ১৫ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু বিসিএস ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা গত বছরের জুনেই পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এই ব্যাচের ৯৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৭৩ জন যুগ্মসচিব। তাদের মধ্যে তিন-চারজনের যুগ্মসচিব পদে তিন বছর পূরণ হয়নি। ফলে পদোন্নতিযোগ্য আছেন অন্তত ৭০ জন। আর বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের আছেন ৪০ জনের মতো। এই ১১০ জনের সঙ্গে আগের বঞ্চিত অর্ধশত যুগ্মসচিবের বিষয়টিও বিবেচনা করবে এসএসবি। এক্ষেত্রে শতাধিক কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হতে পারেন। সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২-এ বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের যুগ্মসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, মূল্যায়ন নম্বরের অন্তত ৮৫ নম্বর পেতে হবে। যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা বা যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরিসহ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।
এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে কয়েক মাস ধরে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনেও এসএসবির সভা হয়। সভায় বিসিএস ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির অভিযোগসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, পদোন্নতি যোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়া একটা রুটিন ওয়ার্ক। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি এসএসবি রয়েছে। ওই বোর্ডে পদোন্নতি যোগ্যদের বাছাই করা হয়। বোর্ড অবশ্যই যোগ্যদের বিবেচনায় আনবে। বোর্ড চূড়ান্ত করলে তখনই অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগে অতিরিক্ত ও উপসচিব পদে পদোন্নতি দিতে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এসএসবির একাধিক বৈঠকের পর নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে সেটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন সরকার গঠনের পর পরই পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়মিত ব্যাচ হিসাবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে অতীতে বিভিন্ন সময় বঞ্চিত হওয়া (লেফট আউট) কর্মকর্তাদের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের ৪০ জনসহ ১৮তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা ১১০ জন। এ ছাড়া বঞ্চিত রয়েছেন অর্ধশতাধিক। গত জুনে তারা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। এদিকে অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনের পরই যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে উপসচিব পদে বিসিএস ৩০ ব্যাচ ও যুগ্মসচিব পদে বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাইয়ের জন্য জেলা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগে ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিষয়ে এসএসবির একাধিক বৈঠক করে কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়েও কাজ চলছে।