শিরোনাম
পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,প্রথম খসড়া তালিকায় নিহত ৮৫৮ জন, আহত সাড়ে ১১ হাজার আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা, বিএনপি কোন পথে সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না, যন্ত্রগুলো কী করবে ইসি মঞ্চ প্রস্তুত আরেকটি এক-এগারোর? আসছে হাসিনা আমলের চেয়ে বড় বাজেট,আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি,দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি! বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, জয়া আহসান ও ফাহিম আহমেদ

চট্টগ্রামে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির ধুম

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১৪৫ দেখা হয়েছে

চট্টগ্রাম:- চট্টগ্রামের বাংলা সেমাইয়ের (চিকন সেমাই) খ্যাতি দেশজুড়ে। রোজা ও ঈদকে ঘিরে বেনামি সেমাই কারখানাগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। তবে সেমাই তৈরিতে চট্টগ্রামের অধিকাংশ কারখানা মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্যাঁতসেঁতে মেঝে, নোংরা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হওয়া এসব সেমাই বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে কঠোর তদারকি প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

জানা গেছে, প্রতিবছর রোজা শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকে সেমাই তৈরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এসব কারখানার মালিকরা। ঈদ উপলক্ষে এসব সেমাই তৈরি করে রমরমা ব্যবসা করেন তারা। চট্টগ্রামে চিকন সেমাই বেশি তৈরি হয় চাক্তাইয়ের কারখানাগুলোতে। তবে ঈদের পর পর অধিকাংশ কারখানা মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নেন। অপেক্ষায় থাকেন পরের বছরের জন্য।

সরেজমিনে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও রাজাখালীতে দেখা গেছে, এসব এলাকায় বর্তমানে ১৬টি কারখানা সচল রয়েছে। বেনামি এসব কারখানায় চলছে সেমাই তৈরি। প্রতিটি কারখানায় পাঁচ থেকে সাতজন করে শ্রমিক কাজ করছেন। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে কারখানাগুলোতে দম ফেলার সুযোগ নেই তাদের। শ্রমিকদের কেউ ময়দার খামি তৈরি করছেন। কেউ বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রে সেমাই বানাচ্ছেন। আবার কয়েকজন শ্রমিক সেমাই কারখানার ছাদে নিয়ে বাঁশের মাচা তৈরি করে রোদে শুকাচ্ছেন। তবে কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরির কোনো চিত্র দেখা যায়নি। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই সেমাই উৎপাদন, শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত চলছে। কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। আর ঘর্মাক্ত শরীরে কাঁধে করে এসব সেমাই রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদসহ নগরের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় এসব সেমাই। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাসহ উত্তরবঙ্গেও ট্রাকে ভরে সেমাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কারখানাগুলো টুকরি হিসেবে সেমাই বিক্রি করে। প্রতিটি টুকরিতে ৩৫ কেজি সেমাই থাকে। প্রতি টুকরি ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেমাইয়ের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তার ওপর শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। এক টুকরি সেমাই তৈরিতে গত বছর শ্রমিকরা ৬৫ টাকা নিতেন। এখন নিচ্ছেন ৭৮ টাকা। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আশপাশের বাজারে গত বছর ভ্যানে চেপে সেমাই পাঠাতে প্রতি টুকরিতে খরচ পড়ত ২০ টাকা। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ২৮ টাকা। তাই বাংলা সেমাইয়ের দামও বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে প্রতি টুকরি সেমাইয়ে বেড়েছে ২০০ টাকা।’

চাক্তাই এলাকার একটি সেমাইয়ের কারখানার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘একসময় বাংলা সেমাইয়ের খুব চাহিদা ছিল। তবে দিনকে দিন এই সেমাইয়ের চাহিদা কমে আসছে। তার ওপর উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। করোনার আগেও এখানে ৫০টির বেশি কারখানা ছিল। সামলাতে না পেরে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন কারখানার সংখ্যা ১৬টিতে নেমে এসেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানার শ্রমিক বলেন, ‘চাক্তাই এলাকায় কারখানাগুলোতে সেমাই তৈরির জন্য এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। দুই মাসের জন্য কারখানাগুলো সচল থাকে। ঈদ শেষে আবার এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন রিকশা বা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি।’

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রতি বছর রমজান এলে বেনামি কিছু প্রতিষ্ঠান সেমাই তৈরি শুরু করে। অথচ এদের কোনো লাইসেন্স নেই। সেমাই তৈরি হয় যাচ্ছেতাইভাবে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এ বিষয়ে গত বছরও বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। অথচ কোনো প্রতিকার মেলেনি। এসব সেমাই খেলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। কাজেই এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলছি।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘গত বছরও আমরা চাক্তাই এলাকায় গড়ে ওঠা এসব কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির প্রমাণও পেয়েছিলাম। তখন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছিল। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা এবারও বিষয়টি দেখব। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions