শিরোনাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় আন্তর্জাতিক চাপে সরকার বাংলাদেশ নিয়ে আমার মন্তব্য বিজেপি বিকৃত করেছে-মমতা ব্যানার্জি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে,পাল্টাপাল্টি দোষারোপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ কোটা সংস্কার আন্দোলন চিকিৎসাধীন তিনজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০৬,ছুটির দিনেও রাজধানী ফাঁকা এএসআই মোক্তাদিরের ওপর নৃশংসতায় স্তব্ধ পরিবার সারা দেশে অভিযান,এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ ‘গুলি আর কারা করবে, আমরা নিরস্ত্র ছিলাম’-মিফতাহ সিদ্দিকী ‘এত মৃত্যু দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না’ কোটা বিক্ষোভ দমনের পর প্রান্তসীমায় বাংলাদেশ,ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট

৪২ লাখ মামলার পাহাড়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪
  • ৭১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শ্যামল কুমার সিংহ। বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায়। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে বিরোধ চলছে। শ্যামল কুমার জানান, ১৯৯৪ সালে জাল দলিল করে বরুড়ার লগ্নসার মৌজায় ১২০ শতাংশ ধানি জমি জোরপূর্বক দখল করেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাচ্চু মিয়া। সালিশ করে জমি ফিরে পাননি। থানা পুলিশ করেও কাজ হয়নি। পরে জমি উদ্ধারে ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন শ্যামল। ২০০২ সালে আদালতের রায়ে তিনি হেরে যান। পরের বছর কুমিল্লা জেলা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন। ৫ বছর পর ২০০৭ সালে চূড়ান্ত রায় হয়।

রায়ে শ্যামল কুমারকে জমি বুঝিয়ে দিতে ডিক্রি জারি করেন আদালত। তবে এক বছর পরে ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন বাচ্চু মিয়া। দুই বছর পর ২০১০ সালে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দেয়া রায় স্থগিত করেন। আটকে যায় শ্যামলের জমি ফিরে পাওয়ার আশা। তখন থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। প্রায়ই কার্যতালিকায় আসে তবে আইনজীবী না থাকায় শুনানি হয় না। শুধু শ্যামল কুমারের মামলাই নয়, দেশের বিভিন্ন আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার মহাজট লেগে আছে। লঘুদণ্ডের মামলা নিষ্পত্তিতেও যুগের পর যুগ কেটে যায়। ১০ থেকে ৫০ বছরেও অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয় না। দেওয়ানি মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ফলে যুগ যুগ ধরে বহুবিধ সংকটে পড়ে মামলার ভারে জর্জরিত বিচার বিভাগ। মামলা নিষ্পত্তিতে গতি ফেরাতে গিয়েও দেরি হচ্ছে। শুধু নিম্ন আদালতই নয়, মামলার পাহাড় জমেছে উচ্চ আদালতেও। গেল একদশক ধরে মামলা দায়েরের চেয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার নিম্নমুখী। এতেই অনিষ্পন্ন মামলা বেড়েছে নজিরবিহীনভাবে। জট নিরসনে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েও কাজের কাজ হয়নি। সব উদ্যোগই মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪২ লক্ষাধিক। জানা গেছে, বিচারকের স্বল্পতা, সাক্ষীদের গরহাজির, বার বার সময় প্রার্থনা ও কিছু আইনজীবীর ভূমিকার কারণে প্রতিদিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

আইনজীবীরা বলছেন, মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি কম। মামলা বাড়ছে ১০০টি। নিষ্পত্তি হচ্ছে না তার অর্ধেকও। এতে জটের পরিসংখ্যান দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আদালতের কর্মঘণ্টা বাড়ানো, হাইকোর্টের সব বেঞ্চে রিট আবেদন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার শুনানির এখতিয়ার, বাৎসরিক অবকাশ কমানো গেলে কিছুটা হলেও জট কমানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া তদন্ত, চার্জশিট দাখিলে গাফিলতি ও সময়মতো সাক্ষী হাজির না হওয়াই মামলা নিষ্পত্তির মূল বাধা, এমনটিই জানান আইনজীবীরা। বিচার সংশ্লিষ্টরা আদালতে বিচারক সংকটকেই মামলা জটের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। দেশে বর্তমানে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন বিচারক। এত অল্পসংখ্যক বিচারক দিয়ে এই পাহাড়সম মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা। অধস্তন আদালতে থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় বিচারক নেই। তাই মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আমাদের যে পরিমাণ বিচারক থাকা দরকার। সেই পরিমাণ বিচারক নেই। মামলার জট থাকবেই। মানুষ সামান্য বিষয়েও কারণে-অকারণে মামলা করে। যা বাড়িতে বসেই সামাজিকভাবে সমাধান করা যায়। তবুও তারা মামলা করে। এ কারণে মামলা বেড়ে যায়। জট কমাতে হলে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক বিচার শালিসে জোর দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলা সংখ্যা ৪২ লাখ ১৫ হাজারের অধিক। প্রতিনিয়তই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে মামলা রজুর চেয়ে নিষ্পত্তির হার অনেক কম।

গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, আপিল বিভাগে ২১ হাজার ১৮৪টি মামলা বিচারাধীন। যার সংখ্যা এখন ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, মামলাজট শুরু হয় বিচারিক আদালত থেকে। কিন্তু এ জট কমাতে আগে থেকেই সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন থেকে পরিকল্পনা নিয়ে নিম্ন আদালতের কর্মঘণ্টা বাড়ানো, হাইকোর্টের সব বেঞ্চে রিট আবেদন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার শুনানির এখতিয়ার, বাৎসরিক অবকাশ কমানো গেলে কিছুটা হলেও জট কমানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি একান্ত প্রয়োজন। এতে তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। মামলা ফাইল হলে এটা মীমাংসা করা যায়। পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে। ক্রিমিনাল মামলাও এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। এ ব্যবস্থা না হলে বিচারব্যবস্থায় ধস নামবে। জনগণ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিচার পাচ্ছে না। এডিআরের ফলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মামলা করার প্রবণতা দূর হবে।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions