জলদস্যুদের কারণে ঝুঁকিতে শিপিং ব্যবসা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪
  • ১১১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজে থাকা জলদস্যুদের ছবিটি প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ছবি : এনডিটিভি

ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের দেখার পর সেদিন আশপাশের নৌযানের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা। তবে যথাসময়ে কোনো সহযোগিতা পৌঁছায়নি। এক পর্যায়ে জাহাজটিতে জলদস্যুরা উঠে পড়ে এবং সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে, তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।

বাংলাদেশের জাহাজটি এখন আছে সোমালিয়া উপকূলে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর এতদিন ধারণা ছিল, জলদস্যুদের তারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। অন্যদিকে ইয়েমেন থেকে লোহিত সাগর ও আশপাশের নৌরুটে হুতি বিদ্রোহীরা হামলা চালাচ্ছে। ফলে সেদিকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীকে। এতে করে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে জলদস্যুরা।

সোমালিয়ার আশপাশের জলপথগুলো জাহাজ চলাচলের ব্যস্ততম নৌরুটগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। প্রতিবছর আনুমানিক প্রায় ২০ হাজার নৌযান চলাচল করে সেসব পথে। আসবাব থেকে শুরু করে শস্য, জ্বালানি প্রায় সব ধরনের পণ্য পারাপার হয় এডেন উপসাগরের ওপর দিয়ে।

সেখানে জলদস্যুদের সবচেয়ে বেশি দৌরাত্ম্য ছিল ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ইন্টারন্যাশনাল মারিটাইম ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১১ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল জলদস্যুদের আক্রমণ। সে বছর সোমালীয় জলদস্যুরা ২৩৭টি আক্রমণ চালিয়েছিল। শত শত মানুষকে জিম্মি করেছিল। পর্যবেক্ষক সংস্থা ওশেন বিয়ন্ড পাইরেসি ওই বছর হিসাব করে দেখেছিল যে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার গায়েব হয়ে গেছে। এ ছাড়া মুক্তিপণের পেছনেও কয়েক শ কোটি ডলার খরচ হয়েছে।

বর্তমানে সে তুলনায় পরিস্থিতি অনেক ভালো। জলদস্যুরা অল্প টহল দেওয়া নৌরুটগুলোতে ছোট নৌযানকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামীতে অবস্থা এ রকম হয়তো থাকবে না। এরই মধ্যে এডেন ও সোমালি অববাহিকায় অন্তত পাঁচটি জলদস্যুদের দল সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

জলদস্যু প্রশ্নে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা যদি এটিকে শুরুতেই শেষ না করে দিতে পারি, তাহলে আবারও সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।’

রপ্তানিশিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ প্রতিনিধির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, গত নভেম্বর থেকে ২০টিরও বেশি জাহাজ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে জলদস্যুরা। এর জেরে নৌরুটে সশস্ত্র রক্ষীর পেছনে ব্যয়, বিমা খরচ- সবই বেড়ে গেছে।

বিমাকারীরা বাড়তি অর্থ নেওয়া শুরু করেছেন। প্রিমিয়াম আরও ব্যয়বহুল হতে শুরু করেছে। বিমাশিল্পের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুসারে, মাত্র সাত দিনের জন্য কয়েক লাখ ডলার গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের।

সশস্ত্র রক্ষীদের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দিনের জন্য রক্ষীদল ভাড়া করার খরচ আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ খাতে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। এসব সশস্ত্র দল হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোনের বিরুদ্ধে ততটা কার্যকরীভাবে দাঁড়াতে না পারলেও জলদস্যুদের ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এদিকে কয়েকদিন আগে রুয়েন নামের একটি জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে ভারতের নৌবাহিনী। সেটি ছিল মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ। ভারতের নৌবাহিনীর অভিযানে রুয়েনে ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে।

ঘটনাটির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অপরাধ দমন শাখার উপ-পরিচালক সাইরাস মোডির মতে, ভারতের এ অভিযানের কারণে জলদস্যুরা কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একটু হলেও ভাববে।

তবে একই পথে হাঁটা প্রশ্নে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এমভি আবদুল্লাহর প্রশ্নে কোনো ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড না চালানোর পক্ষে তারা। কারণ জাহাজটি সোমালীয় উপকূলে থাকায় পরিবেশ জলদস্যুদেরই অনুকূলে থাকবে বেশি। সূত্র: রয়টার্স

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions