ডেস্ক রির্পোট:- নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান আমানপোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ ফান্ড গঠন না করতে পারাসহ এ ধরনের আরও অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে উল্লেখ করে আমানপোর জানতে চান, এসব অভিযোগ আনার কারণ কী। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ নিয়ে দেশের ও দেশের বাইরের যেসব আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা সবাই সম্মত হয়েছে যে, এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই। তারা এ ধরনের কোনো মামলা এর আগে দেখেননি ও পরিচালনা করেননি। এটা এক ধরনের হয়রানি।
বারাক ওবামার মতো ডজন ডজন নোবেলজয়ী আপনার বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। এসব মামলার পরিণতি কি হতে পারে? আপনি কি জেলে যেতে পারেন?
আমানপোরের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে ইতোমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আমাকে ফের জামিন দিতে পারে, নয়তো আমিসহ অন্য যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা সবাই জেলে যেতে পারি। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা আরেকটি নতুন মামলা হচ্ছে। আমাদের দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ওই মামলায় সাজার মেয়াদ আরও দীর্ঘ। আমরা জানি না এসব কখন শেষ হবে।’
শেখ হাসিনা কি তাকে রাজনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস ‘আমি জানি না’। রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওয়ান ইলেভেনে তাকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জানতে চান, গত কয়েক দিন ধরে আমরা দেখলাম এবং জানলাম যে আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া হচ্ছে। আপনি বলবেন যে, আসলে কী হচ্ছে? কী হচ্ছে বিজনেসের ক্ষেত্রে। কারণ আপনি বলেছেন সেগুলো জোর করে দখলে নিয়েছে।
জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হ্যাঁ। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটছে। ৩৫ জনের একটি দল আমাদের ভবনে জোর করে ঢুকে পড়ে। আমরা যে সামাজিক ব্যবসাগুলো তৈরি করেছিলাম, যার অনেকটি দেশের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যবসা, সেই ভবন থেকে পরিচালিত হয়। কী হচ্ছে সেখানে, এটা নিয়ে সবাই ভয় পাচ্ছিলেন, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারা তখন জানায় যে, তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এসেছেন। তারা কিছু কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। তাদের দাবি এগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং এ জন্য তারা এখন সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন এবং তারা এসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিচ্ছেন।
আমানপোর জানতে চান, সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে কিছুই জোর করে বা বেআইনিভাবে করা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে। তাহলে কেন এটা ঘটছে? আপনাকে কি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে? আপনাকে কি বলা হয়েছে যে, এটা কেন হচ্ছে?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনার যদি কোনো দাবি থাকে, কোনো আইনি ইস্যু থাকে, তাহলে সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু সেগুলোর জন্য আপনি হঠাৎ জোর করে কোনো ভবনে ঢুকে যেতে পারেন না এবং বলতে পারেন না যে এগুলো আমরা নিয়ে নিচ্ছি।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর প্রশ্ন করেন, তারাই কি এখন সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে? নাকি আপনি আপনার প্রপার্টি ফিরে পেয়েছেন? কী অবস্থা এখন সেগুলোর?
জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা সেগুলো ফিরে পেয়েছি। আমরা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেখানে আমরা আমাদের ভবনে দেশের সব গণ্যমাধ্যমকর্মীকে আসার অনুরোধ করি এবং কী ঘটছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে জানাই। তারপর থেকে আমরা আমাদের ভবনের নিয়ন্ত্রণে আছি এবং তারা আর আসেনি।’
সম্প্রতি রাশিয়ার কারাগারে দেশটির বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমানপোর ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান আপনি কি বিদেশে থাকার প্রস্তাব পেয়েছেন?
উত্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি অনেক বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে এই দেশ ছেড়ে তাদের দেশে চলে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং আমার কাজ যাতে সারা বিশ্বে চলতে পারে তার সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে এগুলো শুরু করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আমি শিক্ষকতা করতাম। তারপর আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি যা করেছি, তা সবই সাধারণ মানুষের জন্য। আমি দুর্ভিক্ষ দেখেছি, মানুষের বিভিন্ন সমস্যা দেখেছি। যে কারণে আমি চিন্তা করেছি গরিব মানুষ যেন উপকৃত হয়। এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা, এটাই আমার জীবন। যার ফলে ক্ষুদ্র ঋণ এসেছে এবং বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে।’