শিরোনাম
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ কোটা সংস্কার আন্দোলন চিকিৎসাধীন তিনজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০৬,ছুটির দিনেও রাজধানী ফাঁকা এএসআই মোক্তাদিরের ওপর নৃশংসতায় স্তব্ধ পরিবার সারা দেশে অভিযান,এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ ‘গুলি আর কারা করবে, আমরা নিরস্ত্র ছিলাম’-মিফতাহ সিদ্দিকী ‘এত মৃত্যু দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না’ কোটা বিক্ষোভ দমনের পর প্রান্তসীমায় বাংলাদেশ,ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট নতুন নির্বাচন দাবি ড. ইউনূসের গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ফেসবুক খুলবে কবে? এই মাধ্যম এখন আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবাধিকার দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান ৫৫০ মামলা ৬ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার

নির্বাচন বর্জন সংস্কৃতি বুমেরাং হবে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৫০ দেখা হয়েছে

নিজামুল হক বিপুল:- নির্বাচন হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান অস্ত্র। নির্বাচনই জনগণের একেবারে কাছাকাছি যাওয়ার, জনপ্রিয়তা যাচাই করার, নিজেদের নেতৃত্বের বাছবিচার করার মোক্ষম অস্ত্র বটে। সাধারণত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলো শত প্রতিকূলতার মধ্যে নির্বাচনকেই বেছে নেয় নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার কিংবা জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের হাতিয়ার হিসেবে। যেসব রাজনৈতিক দল বা তাদের নেতৃত্ব বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তনের চিন্তা করে, শুধু তারাই নির্বাচন অপছন্দ করে কিংবা নির্বাচনের ধার ধারে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরকম পরিস্থিতির কোনো সম্ভাবনা নেই। সহজ করে বললে সেরকম বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নেই, যারা বিপ্লব করে সরকার পরিবর্তন করতে পারবে বা ক্ষমতায় যেতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনকেই ক্ষমতার পালাবদলের হাতিয়ার মনে করে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সেরকমই একটি রাজনৈতিক দল। যাদের জন্ম ক্যান্টমেন্টের ভেতর। যারা তিন দফায় বেশ কয়েক বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে তারা প্রথমে ক্ষমতায় যায়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, তাতে জিয়াউর রহমানের পরোক্ষ মদদ ছিল বলে অভিযোগ আছে। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণের পর একাধিক ক্যু হয়। এর মধ্যে ৭ নভেম্বরের ক্যু-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হ্যাঁ-না ভোট চালু করেন। অর্থাৎ জিয়াউর রহমান এটা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন যে, এ দেশের মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে হলে এবং তাদের মন জয় করতে হলে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই।

১৯৮২ সালে সামরিক শাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করলেন, তিনিও একই কায়দায় নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখলেন। তার বিরুদ্ধে বারবার আন্দোলন হলো, তারপরও তিনি নির্বাচনের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মুখে।

১৯৯০-এর পটপরিবর্তনের পর ’৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। দেশে সূচনা হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের। তারপর থেকে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। যদিও বিএনপি ১৯৯৫ সালে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে জনআন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করতে বাধ্য হয়।

১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের মেয়াদের শেষদিকে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার পাঁয়তারা করলে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি করলে দেশে এক-এগারো পরিস্থিতির তৈরি হয়। প্রায় দুই বছর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনার পর ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।

এরপর আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু হয়। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তিনটি অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই। তিনটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করতে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। কিন্তু তাদের আন্দোলন আমলে না নিয়েই সরকার সংবিধান অনুযায়ী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে। যদিও সেই নির্বাচন নিয়ে বেশ সমালোচনা আছে। কারণ ১৫৩ জন সংসদ সদস্যই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান।

২০১৮ সালেও একইভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রথমে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলের নিবন্ধন রক্ষা করতে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে যায়। এ নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা সরকার পতনের আন্দোলন করে আসছে। শেষদিকে এসে ২০২২ ও ’২৩ সালে বিএনপি দেশজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে। দলটি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করে। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণ ফিরে আসে। দল চাঙ্গা হতে থাকে। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু শেষদিকে এসে সরকার পতনের একদফা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শক্ত অবস্থান নেয় দলটি।

এসব কারণে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সমমনা শরিকরা। এতে করে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এখন দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাহস, শক্তি সবই খুইয়েছেন।

বিএনপির নেতৃত্বের একাংশ বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আরেক অংশ এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন সংগঠন টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অর্থাৎ ইউনিয়ন, আসন্ন উপজেলা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে নেতাকর্মীরা আবার চাঙ্গা হবেন। তা ছাড়া এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না। এ কারণে দলের প্রার্থীরাও বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

যদিও বিএনপি বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। কিন্তু তাদের এ অবস্থান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিবর্তন হবে—এটা এখন নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। কারণ দলীয় নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে হলে ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো বিকল্প বিএনপির সামনে থাকবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বশেষ মামলায় অর্থাৎ প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় জামিন পেয়েছেন গত বুধবার। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও জামিন পেয়েছেন একই মামলায়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১১ ও ১০টি মামলা ছিল। এখন সব মামলায় তারা জামিন পেলেন। তাদের কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকল না। এতদিন ধরে বিএনপি যে নেতৃত্ব শূন্যতায় ছিল, মির্জা ফখরুলের জামিনের মধ্য দিয়ে আপাতত নেতৃত্বের সেই সংকট দূর হবে বলে ধারণা করা যায়। আগামী উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে তাদের সেই ভুলের খেসারত দিতে হবে আরও বহুদিন।

শেষ করতে চাই পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলের প্রসঙ্গ দিয়ে। পিটিআই সভাপতি ইমরান খানকে জেলে পুড়ে, একাধিক মামলায় সাজা দিয়ে সরকার কোণঠাসা করে রেখেছিল। এমনকি পিটিআইর নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ৯২টি আসনে জয়লাভ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্ব যদি এখান থেকে কিছু রাজনৈতিক শিক্ষা নিতে পারে, তাহলে তাদের দল ও অনুসারীদের জন্য ভবিষ্যতে হয়তো ইতিবাচক ফল আসবে।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions