শিরোনাম

তথ্য গোপন রেখেই মেয়াদ পার সাবেক এমপি পারভীনের দ্বৈত নাগরিকত্ব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৬৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দ্বৈত নাগরিকের বাংলাদেশের সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই জটিলতায় নির্বাচন করতে পারেননি বেশ কয়েকজন। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সব রকম বিধিবিধান পাশ কাটিয়ে শুধু সংসদ সদস্যই নির্বাচিত হননি, নির্বিঘ্নে পাঁচ বছর দায়িত্বও পালন করেছেন পারভীন হক সিকদার। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এই সদস্য একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তথ্য গোপন করে এমপি নির্বাচিত হয়ে সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের এই পরিচালক। নানা মহলে সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, একসঙ্গে দুই দেশের নাগরিক হলেও একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র কিংবা হলফনামার কোথাও এই তথ্য উল্লেখ করেননি পারভীন হক সিকদার। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময়ও কেউ এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি। ফলে অন্যদের সঙ্গে তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান। তবে সংসদের মেয়াদ শেষে জানা গেল, দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন, যা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা’ ও ‘সরকারি তহবিল খরচের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

নির্বাচন কমিশন বলছে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই, নির্বাচন এবং নির্বাচিত হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর কারও এমপি পদ বাতিলের এখতিয়ার নেই তাদের। তবে সংক্ষুব্ধ কেউ চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আদালত তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করে রাষ্ট্র থেকে নেওয়া সব সুযোগ-সুবিধা এবং প্রয়োজনে আরও বেশি ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পারভীন হক সিকদার ১৯৬৩ সালের ৩ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার এবং মা মনোয়ারা সিকদার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রথমে ২০০৫ সালের ৬ অক্টোবর পারভীন হক সিকদারকে ১০ বছরের জন্য পাসপোর্ট দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল তাকে আবারও ১০ বছরের জন্য পাসপোর্ট দেয় দেশটি। এর মেয়াদ চলতি বছরের ৬ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা। অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

পাশাপাশি ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও নবায়ন করা হয়। যার মেয়াদ গত ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। তবে একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে তিনি ২০১৯ সালে একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি এবং মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামায় সেই তথ্যও উল্লেখ করেননি। এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন করেন। এই অনুচ্ছেদের ২ এর (গ)-তে উল্লেখ রয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।’

অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তথ্য গোপন করে প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ রয়েছে। ফলে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য পারভীন হক সিকদার দুটি অপরাধ করেছেন। এসব কিছু অন্ধকারে রেখে ২০১৯ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন ব্যাংক খাতের আলোচিত এ নারী। একাদশ সংসদের পুরো মেয়াদও শেষ করেছেন তিনি।

জানা গেছে, পারভীন হক সিকদার ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এক আলোচিত মুখ। এমপি হিসেবে সরকারি সব সুবিধার পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে নানা ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়েছেন। বিশেষ করে নিয়ম ভঙ্গ করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণসহ নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছে তার নাম।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন আসিফ সরকার নামে শরীয়তপুরের এক ভোটার। সেখানে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা, দুর্নীতি ও সরকারি তহবিল খরচের’ অভিযোগ এনে তা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেন তিনি। সেখানেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে সর্বশেষ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। তার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রিটকারীর পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থাকা সত্ত্বেও তা ত্যাগ না করে এবং সেই তথ্য গোপন করে পারভীন হক সিকদার রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণামূলকভাবে সংসদ সদস্য পদে থেকেছেন। সাংবিধানিকভাবে এটি একটি অপরাধ। আবার ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেও গণ্য হয়। তিনি অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সংসদীয় সুবিধা, সম্মানী, শুল্কমুক্ত গাড়ি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে কমিশনের আওতায় আর কিছু থাকে না। তখন সেটি স্পিকার এবং আদালতে চলে যায়। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটি আদালত সিদ্ধান্ত দিতে পারে।’

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি অহরহ ঘটনা। কোনোটি প্রকাশ পায় আবার কোনোটি পায় না। তবে এটি অনৈতিক, অবৈধ এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি যত সুবিধা নিয়েছেন, প্রমাণ সাপেক্ষে আদালত তা জরিমানাসহ আদায়ের আদেশ দিতে পারেন। নির্বাচন কমিশনও চাইলে ফের মামলা করতে পারে।’কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions