অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৯৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রর্পোট:- মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের গোলাগুলি ও সংঘর্ষের কারণে দেশটির রোহিঙ্গারা নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করছে। তবে রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড।

টেকনাফ সীমান্তে গতকাল শনিবার সরেজমিনে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের মাঝি আবু বক্কর বলেন, মিয়ানমারের সাগরের তীরে হাজার হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান দেখা গেছে। কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা দেখা যায়। সেসব নৌকায় করে এই পারে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। কিন্তু বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের ভয়ে তারা অনুপ্রবেশ করতে পারছে না।

স্থানীয় জেলে কবির আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের এলাকায় আরাকান আর্মি ঢুকে পড়েছে। এতে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় তাদের অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাই কয়েক হাজার রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বিলে, সাগরের তীরে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কোন মুহূর্তে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করবে জানি না। রাতের বেলায় তারা শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তবে তাদের ঠেকিয়ে রাখছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড।

এদিকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, সাবরাং ও সেন্টমার্টিনের নাফ নদীর বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

মিয়ানমারের মংডুর সিকদার পাড়ার রোহিঙ্গা সেলিম বলেন, আমাদের তিনটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা প্রাণে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে চরে আশ্রয় নিয়েছি। সাগরে বাংলাদেশের বাহিনী বেশি থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করব সেখানে ঢোকার। না হলে বাঁচতে পারব না।

তিনি বলেন, হেলিকপ্টার থেকে বোমা মারছে। আমাদের কয়েকটি গ্রাম থেকে গোলাগুলি হচ্ছে। গ্রামগুলো হচ্ছে মংডু কাদিরবিল, নুরুল্যাহ পাড়া, বাগগুনা, নর বাইন্যা, থানাশো। এসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জলসীমাজুড়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক স্পিড বোট দিয়ে টহল দেয়া হয়। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

গুলিবিদ্ধ নারীসহ ৫ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারীসহ ৫ জন অনুপ্রবেশ করেছে। গতকাল বিকাল ৪টায় মিয়ানমারের ছোট একটি মাছ ধরার ডিঙি নৌকা দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসে অবস্থান করে। এদের নৌকার মাঝিমাল্লাও ছিল।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বিকালে একটি ডিঙি নৌকায় মিয়ানমার থেকে ৫ রোহিঙ্গা এসে আমাদের জেটিঘাটে এসে পৌঁছে। খবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শুনেছি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।

তবে এ বিষয়ে টেকনাফ বর্ডার গার্ড বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

জেটিঘাটের ঝুপড়ি দোকানদার মো. সেলিম জানান, মিয়ানমারের একটি ডিঙি নৌকা শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসে পৌঁছে। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ নারীসহ ৫ জন রোহিঙ্গা আছে। রোহিঙ্গা নারী শরীরে স্যালাইন টাঙানো দেখা যায়।

বিডিনিউজ জানায়, গুলিবিদ্ধ নারী মিয়ানমারের নলবনিয়া এলাকার বাসিন্দা হাফেজ আহমদ উল্লাহর স্ত্রী সফুরা খাতুন। হাফেজ আহমদের বড় বোন রমজান বেগম টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগে থেকেই বসবাস করেন।

রমজান বেগম বলেন, আমার ছোট ভাই হাফেজের স্ত্রী সফুরা মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সে শুক্রবার সকালে গুলিবিদ্ধ হয়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে আনা হলেও বিজিবি তাদের পাড়ে উঠতে দিচ্ছে না।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। যেসব স্থান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে, সেখানে রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই চৌকি ঘিরেই চলছে এই সংঘর্ষ।

তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের প্রচুর গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তবে রাতভর কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি। শনিবার সকাল থেকে কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দে মাটি কেঁপে ওঠে। সেই সঙ্গে গোলাগুলির শব্দ কানে ভেসে আসে। দুপুরের পর শব্দ শোনা যাচ্ছে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions