ডেস্ক রির্পোট:- সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপ্যায়নের নামে ১ কোটি ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ওই সংস্থার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষ থেকে বেনামে দেওয়া এক চিঠিতে এ অভিযোগ করা হয়। চিঠিটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশন একাডেমিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেবিচকের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সাধারণ প্রশিক্ষণের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপ্যায়নের নামে উত্তোলন করা অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীর পরিচয়ে একটি বেনামি অভিযোগ প্রশাসন বিভাগে পাওয়া যায়। ওই অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
বেবিচকের এ সূত্র থেকে জানা যায়, প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া বেনামি ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন তারা। তাদের চাকরির বিধিমালা মোতাবেক বাধ্যতামূলক সিভিল এভিয়েশন একডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বর্তমানে একাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে প্রায় ২০০ প্রশিক্ষণার্থী আছেন জানিয়ে তারা অভিযোগ করেন, তাদের নামে সরকারি নির্দেশনা বা নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন লাঞ্চ পরিবেশন বাবদ ৫০০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু তাদের মো. মনির হোসেন ও নাহার হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন ১২০ টাকার খাবার বক্স দেওয়া হয়, যা খুবই নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর। ওই খাবার খেয়ে তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং কেউ কেউ ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রশিক্ষণে দায়িত্বরত সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সহকারী পরিচালক (মিটিওরোলজি) মো. মজিবুর রহমান মিয়াজি ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. মল্লিক তায়জুল ইসলামকে এসব নিম্নমানের খাবার পরিবেশন না করার জন্য বলা হলেও তারা এ বিষয়ে কান না দিয়ে উল্টো প্রশিক্ষণে ফেল করিয়ে দেবেন বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ করা হয়।
চিঠিতে বিভিন্ন কোর্সে প্রতি মাসে প্রায় ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য মজিবুর রহমান মিয়াজি ও মো. মল্লিক তায়জুল ইসলাম যোগসাজশ করে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২০ টাকার খাবার পরিবেশন করছেন বলে অভিযোগ করা হয়। ফলে তারা প্রতিদিন জনপ্রতি ৩৮০ টাকা লাঞ্চের খাবার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর গড়ে ২০০ জনের প্রতিদিনের লাঞ্চ বাবদ ৩৮০ টাকা করে মোট ৭৬ হাজার টাকা, প্রতি মাসে গড়ে ২২ দিন হিসাবে ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং এভাবে গত ১ বছরে শুধু খাবার বাবদ ১ কোটি ৬৪ হাজার টাকা ওই দুই কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া ওই টাকার ভাগ একাডেমির পরিচালকও পেয়ে থাকেন, যা ওপেন সিক্রেট বলে একাডেমির সবাই জানেন বলেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া চিঠিতে আরও বলা হয়, তাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে দিলে নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণের খরচ জমা দিতে হয়। অথচ নিম্নমানের ১২০ টাকার খাবার খেয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় তাদের ৫০০ টাকা হিসাবে জমা দিতে হয়। না দিলে পিডিআর আইনে মামলা করা হয়, যা একেবারেই অমানবিক। এ যেন জুলুমের পর জুলুম বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ অবস্থায় তারা ভয়ে সদর দপ্তরের পরিচালক ও সদস্যদের কাছেও কোনো অভিযোগ দাখিল করতে সাহস পাচ্ছেন না জানিয়ে সচিবের কাছে তারা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান। একই সঙ্গে আত্মসাৎ করা টাকা তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন একাডেমির অভিযুক্ত মিটিওরোলজির সহকারী পরিচালক মো. মজিবুর রহমান মিয়াজি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমি কারও কাছে কিছু বলতে চাই না। এটি নিয়ে অফিশিয়ালি তদন্ত চলছে। এটা চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। এটা আসলে হেডকোয়ার্টার্স অর্থাৎ বেবিচক থেকে শাহজাহান কবির নামে একজন আপার ডিভিশন অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে জয়েন করেছেন। তিনি এ কাজটি করেছেন। তিনি অফিসে বসে কম্পিউটার থেকে কাজটি করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছি। ওই কম্পিউটারটি জব্দ ও এর স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছি। এই শাহজাহানের বিরুদ্ধে বেবিচকে থাকতেও এমন বেনামে চিঠি দেওয়া, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।’ এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে বেবিচকের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কী উত্তর এসেছে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবিদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন একাডেমি থেকে একটি উত্তর এসেছে। তবে সেখানে কী বলা হয়েছে তা জানা যায়নি।’ পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই চিঠি ও উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে এখন এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’খবরের কাগজ