ডেস্ক রির্পোট:- শিগগিরই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হতে যাচ্ছে বলে আলোচনা চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। একাধিক সাবেক নারী প্রতিমন্ত্রী আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পর এ গুঞ্জন জোরালো হয়।
সরকার ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হবে। এ ছাড়া আরও একাধিক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেগুলোতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের পাশাপাশি তরুণ প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে দক্ষতা ও তারুণ্যের সমন্বয় ঘটানো হবে। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হলে এতে একাধিক নারী যুক্ত হবেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। তবে কিছু মন্ত্রণালয় যেমন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এগুলোতে কোনো না কোনো সময় মন্ত্রী আসবেন। সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের পর নারীদের মধ্যে থেকে মন্ত্রী আসতে পারেন।’
গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এর আগের সরকারের মন্ত্রিসভা তুলনামূলক বেশ বড় ছিল। সে মন্ত্রিসভায় ৪৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মন্ত্রিসভায় ফেরার আলোচনায় রয়েছেন সাবেক চার নারী প্রতিমন্ত্রী। ওই চারজনের মধ্যে থেকে অন্তত দুজনের আবারও মন্ত্রিসভায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। এ চারজন হলেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
দলীয় একাধিক সূত্রমতে, সাবেক চার প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে তারানা হালিমের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের সময়ে পরপর দুটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথমে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারানা হালিম নবম ও দশম সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি এবার আবারও সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়ে সরকারের প্রভাবশালী একটি অংশের সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে খানিকটা অভিমান করেই সে সময়ে তিনি দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তবে গত বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হওয়ার পর দলীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন। বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তারানা হালিম সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানেরও মন্ত্রিসভায় ফেরার গুঞ্জন রয়েছে। তিনি খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। মন্নুজান সুফিয়ান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পাননি। গত বুধবার তাকে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, অতীত অবদানের কারণে মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের। মন্নুজানের স্বামী আবু সুফিয়ান বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আবু সুফিয়ান খুলনার খালিশপুরে শ্রমিক নেতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে খালিশপুরেই দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে আবু সুফিয়ানকে। এরপর সেখানে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে একাধিক মেয়াদে আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। দুর্দিনের নেতা হিসেবে মন্নুজানকে আবারও মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ও মেহের আফরোজ চুমকিরও মন্ত্রিসভায় ফেরার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সরকারের বিগত মেয়াদে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নারী নেত্রীও প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় আছেন। দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানমের নাম দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মাঝে আলোচনায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানান, সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা আগামীকাল রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।খবরের কাগজ