মিয়ানমারে যুদ্ধ: দিন দিন সংঘাত ছড়াচ্ছে দক্ষিণে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৪৫ দেখা হয়েছে

কক্সবাজার:- মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষের জের ধরে এতদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করলেও এবার সংঘাত ছড়িয়েছে জেলার সর্ব দক্ষিণে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমাটিনের দিকে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, দেশটির মংডু শহরে লড়াইয়ের কারণে শুক্রবার দিনেও থেমে থেমে কয়েকটি গোলার শব্দ ভেসে আসে এপারে।
সীমান্ত দূরে হওয়ার কারণে ঘুমধুম ও পালংখালীর মত ভয়াবহতা বা আতঙ্ক নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হলেও গুলির শব্দ ভেসে আসায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে একটু আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বলেন, মাঝে মধ্যে মর্টারশেলের শব্দ শোনা গেলেও এখানে তেমন ঝুঁকি নেই। কারণ দ্বীপ থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।

জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডু ও আশপাশের এলাকাগুলোয় বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। সেখানে গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে রোহিঙ্গারা এপারে আসতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের এক জনপ্রতিনিধি জানান, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে রাখাইন রাজ্য। যেসব স্থান থেকে গুলির আওয়াজ আসছে, সেখানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কয়েকটি চৌকি (ক্যাম্প) রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ক্যাম্প এলাকায় এখন লড়াই চলছে। যে কারণে সেখান থেকে গোলার শব্দ ভেসে আসছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে একটু আতঙ্ক রয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহি উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশ, সে কারণে গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে।

তবে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের প্রভাব পড়তে শুরু করে এপারে। তবে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সংঘাত তীব্র হয় এবং এপারে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া রকেট গোলার আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। সংঘর্ষ চলাকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ সে দেশের ৩৩০ জন এ দেশে ঢুকে পড়েন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা এবং বর্তমানে নতুন পুরনো মিলে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সাড়ে ছয় বছর পার হলেও মিয়ানমারের নানা ছলচাতুরির কারণে একজন রোহিঙ্গাকে সেদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির এবং নোয়াখালীর সাগরদ্বীপ ভাসানচরে বসবাস করছে। তবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যেহেতু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, সেহেতু এই ইস্যুতে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এখন বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions