ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকা জামায়াতে ইসলামী। সভা-সমাবেশের মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া এ দলটি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস সংকট, শিক্ষা কারিকুলামে পবিত্র ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়সহ বিভিন্ন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুকে সামনে এনে গণসংযোগ করছে তারা।
জানা যায়, বহু স্তরের রাজনৈতিক ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের সাংগঠনিক স্তরভিত্তিক সম্মেলন ও সভা করে যাচ্ছে নিয়মিত। একই সঙ্গে দলটির নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা ও নতুন আন্দোলন সামনে রেখে অনেক জেলা ও মহানগরীতে কমিটি নবায়ন করা হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কোথাও কোথাও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সরাসরি ঘোষণা না থাকলেও বিগত বছরগুলোতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ সব কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির অন্যতম এই রাজনৈতিক মিত্রটি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দলটি অনেকটা কৌশলী আন্দোলন করেছে। জড়ায়নি বড় ধরনের সহিংসতায়। দলটির নেতাদের দাবি, ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াত যে কৌশল নিয়েছে, তা নিছক কোনো রাজনেতিক পশ্চাৎপদতা ছিল না। তাদের কর্মপরিকল্পনায় সেটিই ফুটে উঠেছে। দলটি মনে করে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর সেটি প্রমাণে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। এখন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা ভোটের নানা অনিয়ম ও জালিয়াতি তুলে ধরে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তারা। তাদের দাবি তারা সফল হয়েছে। এজন্য দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সে সময় বিবৃতিও দিয়েছেন। দলটির একাধিক সূত্র জানায়, দলের ভিতরে যতই চাপ থাকুক, আপাতত হার্ডলাইনে যাবে না জামায়াত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম ও মিটার ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদসহ দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে জামায়াত। তবে সব ক্ষেত্রেই সহিংসতা এড়ানোর নীতিতে দৃশ্যত অনড় থাকার বিষয়টি চোখে পড়ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। কিন্তু দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার প্রশ্নে জামায়াতের মতো একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনের যে কোনো অঙ্গীকার নেই সে বিষয়ে পর্যবেক্ষক মহল একমত। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বর্তমান অবস্থান কতদিন ধরে রাখবে দলটি তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে সরকার ও সরকারি দলের অভ্যন্তরে। তবে দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনে নেতা-কর্মীদের সম্পদ ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় রাখার বিষয়টি জামায়াতের দলীয় ফোরামে নিয়মিত আলোচনায় থাকছে। সেখানে দলটির তৃণমূল নেতাদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে তাগিদ রয়েছে। সে লক্ষ্যে সংগঠন গোছানো ও রাজপথে কার্যকর ভূমিকা রাখার বিষয়ে নীরবে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রেরিত জামায়াতের বিবৃতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাবেক এমপি শাহজাহানকে আমির করা হয়েছে। এ ছাড়া যশোর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জেও দেওয়া হয়েছে নতুন কমিটি। এর মধ্যে শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে সক্রিয় করছে তারা। একইভাবে দলটির ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বেও এসেছে পরিবর্তন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মঞ্জুরুল ইসলামকে সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলামকে করা হয়েছে সেক্রেটারি। এর আগে গত বছরের ১০ জুন ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করেন জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা। রাজধানীবাসীকে নতুন করে জানান দেন নিজেদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নতুন করে ক্ষমতায় এসে দেশ ও জাতিকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করতে সর্বস্তরের জনশক্তিকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি জানান, রুকনরা সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। তাই চলমান আন্দোলনকে বেগবান ও সফল করার জন্য তাদের ময়দানে সৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাই কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংগঠনের বিচার করার সুযোগ না থাকায় ঝুলে যায় জামায়াতের বিচার কার্যক্রম। আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হলেও সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার এখনো ঝুলেই রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন