শিরোনাম
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব নির্বাচন চান সম্পাদকরা রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য,হাসিনার ষড়যন্ত্রে একের পর এক অস্থিরতার চেষ্টা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাচ্ছেন বড় গ্রুপের প্রভাবশালীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুষের সিন্ডিকেট,বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে দেনদরবারেও জড়িত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে-টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: জাগপা নেতা রহমত নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায় নাসির উদ্দীনকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন

চট্টগ্রাম থেকে এমপি হতে চান দেড় ডজনের বেশি নেত্রী

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৯০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিরোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। গঠিত হয়েছে সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা। রাজনীতির মাঠে এখন সবার দৃষ্টি সংরক্ষিত নারী আসনের দিকে। চট্টগ্রাম থেকে এবার কারা হচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তা নিয়ে সর্বমহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা। গত নবম, দশম ও একাদশ সংসদে চট্টগ্রাম থেকে দুজন করে সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে তিনজন হতে পারে বলে জানা গেছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে। আসন ভিত্তিক আনুপাতিক হারে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজনসহ), জাতীয় পার্টি দুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে।

অন্যান্যবারের চেয়ে এবার সংরক্ষিত আসনে চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সংরক্ষিত আসনে চট্টগ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নারীনেত্রী দলীয় মনোনয়ন নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এই ১৯ জন নারী নেত্রী মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এই তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। এর মধ্যে বেশিরভাগই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সদস্য।

তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় কারা আছেন, কারা পাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন এবং সেই সৌভাগ্যবান কারা তা নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সর্ব মহলে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সেই সৌভাগ্যবান নারী সংসদ সদস্য কারা তা জানতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন দিবেন।

সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ঢাকায় আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই গত ২০ দিন এবং অনেকেই ১৫ দিন অনেকেই এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি–প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীদের সাথে দেখা করে নানান ভাবে চেষ্টা করছেন। অনেকেই চট্টগ্রামের প্রত্যেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের সমর্থন লাভেরও চেষ্টা করছেন।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন আইন অনুযায়ী সাধারণ আসনের নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটগত সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের ভোট ফেব্রুয়ারিতে করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কারণ ১৩ মার্চ থেকে রমজান শুরু হতে পারে।

আগামী সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল হতে পারে জানিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ভোটার যারা, সংসদ সদস্যরা, তাদের তালিকা আমরা সংসদ থেকে পেয়েছি। ভোটার তালিকা যেভাবে প্রকাশ করা হয়, সেভাবে সংসদে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশ হওয়ার পর যদি কোনো আপত্তি না থাকে, সেটাই ভোটার তালিকা হবে। পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা হবে।

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা পাওয়ার পরে আগামী সপ্তাহে কমিশনে তোলা হবে। কমিশন অনুমতি দিলে তফসিল ঘোষণা হবে। আগামী সপ্তাহে যদি কমিশনের অনুমোদনে তফসিল হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।

চট্টগ্রাম থেকে এবারও সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সব দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান। শোনা যাচ্ছে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে তিনি আবারো সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়াও মনোনয়নের ক্ষেত্রে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন– চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিনী। এছাড়াও আছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাত, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে শামীমা হারুন লুবনা, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, ডবলমুরিং আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ডা. আফছারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আক্তার চৌধুরী, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও চসিক কাউন্সিলর জোবাইরা নার্গিস খান, চট্টগ্রাম মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপিকা সায়েরা বানু রৌশনী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রুমানা নাসরীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য এবং ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য সাবরিনা চৌধুরী, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চসিক কাউন্সিলর নীলু নাগ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বড় মেয়ে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজি শারমিন সুমি, সাবেক কাউন্সিলর রেহানা বেগম রানু।

এ ছাড়া একাধিক নারীনেত্রী, সাবেক কাউন্সিলর এবার দল থেকে মনোনয়ন লাভের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান গত একাদশ ও দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন। এবারও সংরক্ষিত আসনে তাঁর সংসদে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়ে তিনি বিদ্যুৎ–জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদের) সংরক্ষিত আসনের কোটায় তাঁর মন্ত্রী হওয়ার কথা সর্বমহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। গত দশ বছর একটানা সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন, দলের জন্য কাজ করেছেন। নারীদেরকে দলের কাজে এবং সমাজের কাজে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যে দায়িত্ব দেবেন তা শতভাগ নিষ্ঠার সাথে পালনের জন্য প্রস্তুত আছেন জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, নিষ্ঠা ও সততার সাথে জনকল্যাণকর কাজসহ দলীয় ও সংসদীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। সুযোগ হলে আবারও দলের আদর্শ সমুন্নত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো।

সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করছি। ইচ্ছে আছে এবার সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের ব্যাপারে। সারা জীবন তো আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছি। প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। তফসিল ঘোষণা করা হলে সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন চাইবো। তবে তিনি মনোনয়নের জন্য কোনো ধরনের দৌঁড়ঝাঁপ করছেন না বলে জানান। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে দলের জন্য আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা এবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে নানান ভাবে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। শামীমা হারুন লুবনা বলেন, রাজনীতির সাথে আমাদের পরিবারের সম্পৃক্ততার ইতিহাস ৭২ বছরের। আমার আব্বা ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সৈনিক। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত এই ৭২ বছরে আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের পারিবারিক বন্ধন। বঙ্গবন্ধু আমার আব্বাকে খুবই ভালোবাসতেন, আমাদের বাড়িতে অনেকবার এসেছেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতির শুরু। স্বৈরশাসক এরশাদ হটানো থেকে গণজাগরণ মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন সবখানে আমার অংশগ্রহণ ছিল। দলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। আমি গতবারও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন–তাহলে দলের জন্য এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো।

কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাতের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে পারিবারিক ভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভাবধারায় গড়ে উঠেছেন। প্রথমে চুনতি স্কুল এবং পরবর্তীতে নাসিরাবাদ গার্লস কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা জানান। এরপর তিনি পড়ালেখার জন্য কানাডায় চলে যান। দেশে এসে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।

সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি বিদেশে পড়া লেখা করেছি। সেখানে যে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি–সেটা দেশের জন্য কাজে লাগাতে দলের জন্য কাজ করছি। আমি আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। দলের জন্য কাজ করছি দীর্ঘদিন থেকে। দলের প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করছেন। এই কারণে আমি সংরক্ষিত আসন থেকে মনোনয়ন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নেত্রী যদি আমাকে মূল্যায়ন করেন তাহলে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে যাবো। দলের জন্য নারীদের জন্য আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করবো।

গত দুই মেয়াদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সুচিন্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। তিনি আজাদীকে বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের একজন কর্মী হিসেবে সব সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দলের জন্য কাজ করেছি। সুচিন্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে আমি চট্টগ্রামের মাদ্রাসায়–মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বদলে দেওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুলে ধরেছি। এই ক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি। আমি কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। কিন্তু কাজ করতে হলে একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। এই জন্য আমি এবারও সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন চাইবো। প্রধানমন্ত্রী যদি আমার কাজে সন্তুষ্ট হন তাহলে আমাকে মনোনয়ন দিবেন বলে আমার প্রত্যাশা।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য সারাটা জীবন কাজ করেছি নিঃস্বার্থভাবে। এখন তো অনেকেই সুদিনের নেতাকর্মী। আমরা দলের দুঃসময়ে রাজপথে সব সময় সক্রিয় ছিলাম। কখনো কিছু চাইনি। প্রধানমন্ত্রী দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করছেন। আমাদের সময়ের অনেককেই প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করেছেন। এখন তো আমাদের প্রায় শেষ বয়স। তাই আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করে হয়তো আমাকে মূল্যায়ন করতে পারেন। এজন্য এবার সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবো।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যের তালিকায় প্রয়াত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছার নামও বেশ আলোচিত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মারা যান ডবলমুরিং আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন। এই কারণে ডা. আফছারুল আমীনের পরিবারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহানুভূতি রয়েছে বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন নিবেন বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া–লোহাগাড়া আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম নেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে। তফসিল ঘোষণা করা হলে দলীয় মনোনয়ন ফরম নেবো। গত ১০ বছর ধরে নৌকার পক্ষে সাতকানিয়া–লোহাগাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছি। গ্রামে গ্রামে মেয়েদেরকে দলের পক্ষে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে দিনরাত কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে মনোনয়ন দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।

উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মহিলা আওয়ামী লীগ নিয়ে কাজ করছি। কোনো কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে রাজনীতি করিনি। দলের প্রতি ভালোবাসা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা এবং ভালোবাসা থেকে রাজনীতি করছি। ৭৯ সাল থেকে কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েছি। এবারও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইবো। মূল্যায়ন করার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

চট্টগ্রাম মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপিকা সায়েরা বানু রৌশনী বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা। পারিবারিক ভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা। কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক হিসেবে পুরো নগরীতে কাজ করছি অনেক দিন থেকে। দলের প্রতিটি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ছোটকাল থেকে শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। সংরক্ষিত আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেলে আরো বৃহৎ পরিসরে দলের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবো। এজন্য সংরক্ষিত আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন নেবো।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী বলেন, আমি স্কুল এবং কলেজ জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ছিলাম। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ধাপে ধাপে আজকে আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য হয়েছি। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে গড়ে ওঠা একজন কর্মী হিসেবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইবো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ–এর বড় মেয়ে কাজি শারমিন সুমি বলেন, আমার বাবা সারা জীবন বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। বাবা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দলের জন্য হাজার হাজার নেতাকর্মী তৈরি করেছেন। দলের জন্য আব্বা ও আমার পরিবার অনেক কষ্ট করেছেন। বাবা শেষ বয়সে খুব অল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য ছিলেন। আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক ত্যাগী নেতার সন্তানদের মূল্যায়ন করেছেন, আমার বিশ্বাস পরিবারকে মূল্যায়ন করবেন ইনশা আল্লাহ।

উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান এবং দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান এবং দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে আরো একজন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি হলেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবিহা নাহার বেগম (সাবিহা মুসা)।

একাদশ সংসদে ফটিকছড়ি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনিও সংসদ সদস্য ছিলেন। খাদিজাতুল আনোয়ার সনি সদ্য সম্পন্ন হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনপ্রতিনিধি, আইনজীবীসহ সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে এবং জাতীয় ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন নারীনেত্রীরা এবারও সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নিবেন বলে জানা গেছে। আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions