ডেস্ক রিরোট:- দেশে দুই বছর ধরে ডলার সংকট চলছে। এই সংকটে বৈদেশিক মুদ্রা আসার অন্যতম উৎস বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়েনি। বরং গত বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এফডিআই-বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেনদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সময়ে দেশে নিট এফডিআই এসেছে ২.১১৫ বিলিয়ন (২১১ কোটি ৫৯ লাখ) ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে নিট এফডিআই এসেছিল ২.৭৭৬ বিলিয়ন (২৭৭ কোটি ৬১ লাখ) ডলার। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম ৯ মাসে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এফডিআই প্রবাহ কমেছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এদিকে এক বছরের ব্যবধানে তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই অস্বাভাবিক হারে কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টম্বর সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ৬৭০ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে এসেছিল ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩৯ দশমিক ০৮ শতাংশ।
অপরদিকে গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে নিট এফডিআই ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশে নিট এফডিআই এসেছিল ৮১৯ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার।
সূত্রমতে, দেশে মহামারি করোনার আঘাত পর থেকে বিদেশি বিনিয়োগ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে করোনার প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০২১ ও ২০২২ সালে টানা বেড়েছিল বিদেশি বিনিয়োগ। তবে বিদায়ী ২০২৩ সালে এসে একপ্রকার হোঁচট খেয়েছে এই সূচকটি। এর প্রভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও পড়েছে।
এফডিআই প্রবাহ কমার পাশাপাশি নতুন পুঁজি তথা ইক্যুইটি, পুনঃবিনিয়োগ এবং ইন্ট্রা-কোম্পানি ঋণ বিনিয়োগও গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাপক হারে কমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে বিদেশিরা মূলধন (ইক্যুইটি) হিসেবে ৪৭১ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন বা ৪৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এটি তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। ২০২২ সালে ইক্যুইটি বিনিয়োগ এসেছিল ৭৭৭ দশমিক ২০ মিলিয়ন বা ৭৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
বিদেশিদের পুনর্বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে পুনর্বিনিয়োগ হিসেবে এসেছে ১ দশমিক ৬১৮ বিলিয়ন বা ১৬১ কোটি ৮১ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৯৭০ বিলিয়ন বা ১৯৭ কোটি ডলার। আর বিদায়ী বছরের প্রথম ৯ মাসে আন্তঃকোম্পানি (ইন্ট্রা-কোম্পানি) ঋণ হিসেবে এসেছে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এখানের বিনিয়োগ কমেছে ৩৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, সাধারণত তিন পদ্ধতিতে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করে থাকে। এগুলো হলো নতুন পুঁজি তথা মূলধন হিসাবে, বিদ্যমান ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে, যা ইন্ট্রা-কোম্পানি লোন নামে পরিচিত।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন। এ সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে ১৮ কোটি ১৩ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চীন থেকে এসেছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার। সিঙ্গাপুর থেকে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ও নেদারল্যান্ডও একই পরিমাণ বিনিয়োগ আসে। এছাড়া কোরিয়া থেকে এসেছে ৪ কোটি, নরওয়ে ৩ কোটি ৬৬ লাখ, হংকং থেকে ২ কোটি ৬৪ লাখ, ভারত থেকে ২ কোটি ৬১ লাখ, শ্রীলংকা থেকে ১ কোটি ৮২ লাখ ও মালয়েশিয়া থেকে ১ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।
এদিকে গত বছরের জুলাই-সেপ্টম্বরে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে টেক্সটাইল তথা বস্ত্র খাতে, এর পরিমাণ ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এরপরেই আছে ব্যাংক খাত। এর পরিমাণ ১০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার এসেছে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে। টেলিকমিউনিকেশন খাতে এসেছে ৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে ৩ কোটি ৯৫ লাখ, খাদ্য খাতে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, কেমিক্যাল ও ওষুধ খাতে ২ কোটি ৭২ লাখ ডলার, কৃষি ও মৎস্য খাতে ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার ও সার খাতে ১ কোটি ১৩ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।
তথ্যমতে, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে এফডিআই এসেছে মাত্র ৩ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার ও ইপিজেডে ২৫১ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। আর ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে অন্যান্য এলাকাগুলোয় নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ৮৬১ বিলিয়ন ডলার।