এ কোন রাজনীতি!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২২০ দেখা হয়েছে

শান্তনা রহমান:-বলা হয়ে থাকে কূটনীতি মানেই কূটকৌশল। রাজনীতি কী তাহলে। ইদানীং রাজনৈতিক কৌশল কূটনীতিকে হার মানিয়েছে। অন্তত বাংলাদেশে। ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় ফেরার মধ্যে যতোসব কূটকৌশল। নানা ফন্দি-ফিকির। আমরা যদি পনের বছরের রাজনীতি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো প্রতিবারই নতুন কিছু কৌশলের কাছে বিরোধী শক্তির পরাজয়, বিপর্যয়। বিরোধীরা কখনো বুঝতে পারেন, কখনো সরকার পক্ষের চালে হতবাক হন। শুধু আফসোস করেন, বলেন এ কী হলো! কিন্তু কখনো নিজেদের ভুল কৌশলের পর্যালোচনা করেন না। ভুল স্বীকার করে নতুন কোনো দিশা খোঁজেন না।
আগুন সন্ত্রাসের তকমা নিয়ে নানা বক্তৃতা, বিবৃতি দেন। বলেন, এগুলো আমাদের কাজ নয়। কিন্তু একবারও নিজেদের মধ্যে কোনো তদন্ত কমিটিও করেন না। নতুন পথ খুঁজে দেখেন না। সরকারের কূটকৌশলের কাছে এভাবেই মার খায়, পরাজিত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়াটাও এক ধরনের ভুল। যে ভুল শোধরানোর কোনো তাগিদ নেই। ধরা যাক নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া প্রসঙ্গ। এই সিদ্ধান্ত কি কখনো ভেবে চিন্তে নেয়া হয়েছে? রাজনৈতিক পণ্ডিতরা কিন্তু বলছেন, অন্তত দুটো সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। বিরোধী শক্তি হয়তো এর সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। তারা বলতে পারেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন প্রতারণা হলে আমরা কী করবো। জনগণ তো আমাদের সঙ্গেই ছিল। আগেই বলেছি যে করেই হোক ক্ষমতা দখল বা টিকে থাকা এখন রাজনীতির প্রধানতম কৌশল। এটা কখনো দেশি শক্তির মাধ্যমে, কখনো বিদেশি শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। এখানে দেশ নয়, ক্ষমতাই হচ্ছে মুখ্য। পাঠকরা হয়তো জানার চেষ্টা করবেন ভুলগুলো কী ছিল। ধরা যাক ২০১৪ সনের নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের অংশ না নেয়াটা এক মস্তবড় ভুল সিদ্ধান্ত। ইতিহাস বলছে, এই নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী শক্তি জয়লাভ করে। যা ছিল অভাবনীয়। সরকার চায়নি বিরোধীরা নির্বাচনে আসুক। কারণ তারা জানতো বিরোধীরা এলেই তাদের নিশ্চিত পরাজয় ঘটবে। তাই তারা একটি বিদেশি শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সবকিছু পাল্টে দেয়। বলে রাখা ভালো, এই পাঁচ বছরে এমন সব কাণ্ড ঘটে যাতে শাসকগোষ্ঠী বিচলিত হয়ে পড়েছিল, আলোচিত বিদেশি শক্তিও। ভুল কৌশলের কারণে পরাজয় ঘটে বিরোধী শক্তির। রাজনীতিতে নতুন খেলা শুরু হয়ে যায়। পরের খেলা আরও চমকপ্রদ এবং ভয়ঙ্কর। একটি বিদেশি শক্তির মধ্যস্ততায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল নতুন একটি ছকের কাছে আত্মসমর্পণ। রাতেই গায়েবি ভোটে ভর্তি হয়ে যায় বাক্স। হতাশ বিরোধী শক্তি। কিন্তু কী-ই বা করার আছে। পাঁচ বছর ধরে একই আওয়াজ। রাতের ভোটে বাংলাদেশের নির্বাচন কলঙ্কিত হয়। তাই কৌশলের কিছু পরিবর্তন। এবার বিদেশি শক্তির উপর শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বিরোধী শক্তি । তখনই বিদেশি শক্তির নগ্ন খেলা শুরু হয়ে যায়। নির্বাচন শুধু দু’পক্ষের মধ্যে নয়, সুপারপাওয়ারের খেলায় পরিণত হয়ে যায়। কে না জানে নিজের স্বার্থ ছাড়া কোনো শক্তিই কাজ করে না। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। এর আগে অনেক নাটকীয়তা, অনেক কৌশল দেখতে থাকে জাতি। এর সবই কি ছিল মেকি! নিজের শক্তি হারিয়ে, নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে বিরোধীরা অন্য শক্তির চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে থাকে অটল। বিকল্প চিন্তা তাদের মাথায় আসেনি। একবারও তলিয়ে দেখলো না কেন ২৮শে অক্টোবর এই বিপর্যয় ঘটলো। যদিও অনেকটা পরিষ্কারভাবে শাসকদলের তরফে বলা হয়েছিল হেফাজতের মতো পরিণতি হতে পারে। একটা ক্র্যাকডাউন যে অত্যাসন্ন তা বুঝতেই পারলো না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছিল ৩০০ ফুট রাস্তার উপর নির্মিত এক হোটেলে বসে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিরোধী শক্তির ভেতরে সরকারের এতোবেশি শেয়ারহোল্ডার যাতে করে নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে সরকারের কোনো বেগই পেতে হয়নি। কাজের কাজ হলো একদলের নয়, এক ব্যক্তির শাসনে নিপতিত হলো দেশ। এখন হাতুড়ি পেটালেও কেউ তাকিয়ে দেখে না। কারণ সন্দেহ আর অবিশ্বাস যে অনেক আগেই দানা বেঁধেছে। রাজনীতির চালে মার খেলে কোনও শক্তিকে নয়, গোটা জাতিকে মূল্য দিতে হয়। সেদিকেই কি আমরা পা বাড়িয়েছি? কতো বছরের জন্য ‘মুক্ত রাজনীতি’ বন্দি হয়ে গেল জানি না। তবে এটুকু বুঝি- পথটা অনেক লম্বা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions