শিরোনাম
খাগড়াছড়িঃ সংঘাত থেকে শুরু হোক শান্তির পদযাত্রা। আওয়ামী লীগ জাপাসহ ১১ দলের কার্যক্রম বন্ধ চেয়ে রিট মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে ২৫২ এসআইকে অব্যাহতির প্রসঙ্গ পার্বত্য টাস্কফোর্সে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে কোন জাদুতে সওজের কাজ বাগাল অনভিজ্ঞ এনডিই,প্রাক-অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক পদোন্নতির হাওয়া বইছে প্রশাসনে, এসএসবির টেবিলে ৮৫০ নথি সাবেক ডিএমপি কমিশনার ফারুকের ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ! বিশ্বের বহু পলাতক স্বৈরশাসক টাকা দিয়ে রাজনীতিতে ফিরেছে,হাসিনার শক্তি পাচারের টাকা পর্যটকদের জন্য আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি ও ৫ নভেম্বর থেকে খাগড়াছড়ি খুলে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৭৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

বিভিন্ন বিভাগে রক্তের একই পরীক্ষার দাম ভিন্ন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৬৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- চিকিৎসার জন্য রক্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর জন্য রয়েছে আইন, বিধি ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে বহু পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তত সাতটি বিভাগ রক্তের এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় করে। তবে রক্তের একই পরীক্ষার জন্য সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নেয়া ফির ভিন্নতা রয়েছে। উপরন্তু সরকার নির্ধারিত ফির তুলনায় রাখা হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের নির্ধারিত ফি মানতে বাধ্য নয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ আসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, ভাইরোলজি, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি, হেমাটোলজি ও প্যাথলজি বিভাগ মোটা দাগে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করে। রক্তের একই পরীক্ষার সেবামূল্য বিভাগভেদে আলাদা। এতে রোগীদের মাঝে রয়েছে অসন্তোষ। পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় দামের ভিন্নতা রয়েছে বলে দাবি বিভাগগুলোর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ওইসব বিভাগ ঘুরে ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রক্তের সাধারণ যেসব পরীক্ষা রয়েছে তার প্রায় প্রতিটিই ওই সাত বিভাগ করে থাকে। খুবই সাধারণ পরীক্ষা সিবিসি বা সামগ্রিক রক্ত গণনার জন্য হেমাটোলজি ও ল্যাবরেটরি বিভাগ নেয় ৩৫০ টাকা। এর সঙ্গে ইএসআর যুক্ত করা হয়। যদিও ইএসআর সিবিসির সঙ্গে নিরীক্ষা হয়ে থাকে। আর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ সিবিসির জন্য মূল্য নেয় ২৫০ টাকা। রক্তের প্রোটিন এস ও প্রোটিন সির জন্য ল্যাবরেটরি মেডিসিন ৩ হাজার টাকা করে ফি নিলেও হেমাটোলজি বিভাগ নিচ্ছে ৫ হাজার টাকা করে।

ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ এইচবিএসএজি র‍্যাপিড টেস্টের জন্য ১৫০ টাকা নিলেও ভাইরোলজি বিভাগ একই পরীক্ষার জন্য ৪৫০ টাকা নেয়। হাসপাতালে বিনামূল্যের শয্যার রোগীদের জন্য রক্তের পিসি (প্লাটিলেট কাউন্ট) পরীক্ষার জন্য ৮০০, ভাড়া শয্যার জন্য ৯০০, কেবিন বা বহির্বিভাগের জন্য ১ হাজার ৫০, ডে কেয়ার ইউনিটের জন্য ৯০০ টাকা নেয়া হয়। রক্তের আইসিটি ক্রস ম্যাচের (রক্তদাতার সঙ্গে গ্রহীতার রক্তের মিল দেখা ও রোগ নির্ণয়) ওই হাসপাতালের রোগীদের থেকে ৩৫০ ও বহির্বিভাগের রোগীদের থেকে ১ হাজার টাকা নেয়া হয়। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ৩৫০, ম্যালেরিয়া র‍্যাপিডের জন্য ৩০০, অ্যান্টিবডি আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড টরিটেশনের জন্য ২ হাজার ৫০০, এবিও গ্রুপিং কনফার্মেশনের জন্য ৫০০, আইজিজি বা ইমিউনোগ্লোবুলিন জি (ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা আছে সেটা বোঝার জন্য) পরীক্ষার জন্য ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

হেমাটোলজি বিভাগ রক্তের এবিও গ্রুপি ও আরএইচডি টাইপিংয়ের জন্য ১৫০, ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য ১৫০, ক্রস ম্যাচিং (স্ক্রিনিংসহ) ১ হাজার ৫০০, ক্রস ম্যাচিং (আইসিটি) ৩০০, অ্যান্টিবডি আইডেন্টিফিকেশনের জন্য ১ হাজার, এপিটিটির (সক্রিয় আংশিক প্রোথ্রোম্বিন টাইম) জন্য ৫০০, প্রোথ্রোম্বিন টাইম বা পিটির (রক্ত জমাট বাঁধতে কত সময় লাগে তা জানতে) জন্য ফি ৩৫০ টাকা নেয়া হয়। মাক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের আইজিজি পরীক্ষার জন্য ৬ টাকা নেয়া হয়।

শরীয়তপুর থেকে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব তোতা মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে এসেছিলেন রক্তের গ্রুপ জানতে। এতে তাকে দিতে হয়েছে ৩৫০ টাকা। বুধবার তিনি অন্তত পাঁচটি পরীক্ষা করিয়েছেন। এর জন্য তার প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের জন্য এসব পরীক্ষার ফি ২ হাজার টাকারও কম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৮ বছর বয়সী আরাফাত (ছায়া নাম) রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এক মাস ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি। তার বোন জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে চিকিৎসার জন্য। ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের ব্লাড ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় বুধবার তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, নিয়মিত এ বিভাগে আসতে হয় তাকে। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ বিভাগে। তার ভাইয়ের জন্য এফেরেসিস বা প্লাটিলেট মেশিন দিয়ে একজন দাতার শরীর থেকে রক্ত টেনে নিতে তাকে প্রতি ব্যাগের জন্য পৌনে ১৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই প্লাটিলেট আলাদা করার জন্য যেকোনো সরকারি বিশেষায়িত (টারশিয়ার) হাসপাতালে খরচ হতো পৌনে ৪ হাজার টাকা। এখানে সবকিছুর জন্যই খরচ বেশি মনে হচ্ছে তার।

ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ৩০ বছর বয়সী চুয়াডাঙ্গার তৌফিককে (ছায়া নাম) তার শ্যালক এ হাসপাতালে এনেছেন। বৃহস্পতিবার এক ব্যাগ রক্ত দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এজন্য ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে এসেছেন। দাতার কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করার জন্য তাকে ৮০০ টাকা দিতে হয়েছে।

নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও রোগীর দেহে পরিসঞ্চালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ওই আইন ২০০২ সালে প্রণয়ন করা হয়। এতে সুনির্দিষ্টভাবে রয়েছে কে রক্ত পরীক্ষা করতে পারবে ও সংরক্ষণ করতে পারবে। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের সরকারি হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করে। তবে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো ওইসব পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি নিয়ে থাকে।

সরকার নির্ধারিত ওই ফিতে প্লাটিলেটের জন্য ৫০, এপি ২০, ব্লাড কালচার ২০০, লিপিড প্রোফাইল ৩০০, ব্লাড সুগার ৬০, ব্লাড ইউরিয়া ৫০, সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও সিরাম কলস্টেরল ৫০, রক্তের স্ত্রিনিং ২৫০, গ্রুপিং ও রেসার (ডি) ফ্যাক্টর ৫০, ক্রস ম্যাচিং ১০০, অ্যান্টিবডি নির্ণয়ে ২০০, অ্যান্টিবডি টাইটার ৩০০, এইচআইভি ২০০, এইচবিএসএজি ৫০, জেনারেল ওয়ার্ড, পেয়িং বেড ও কেবিনের রোগীদের জন্য রক্ত স্ক্রিনিং, গ্রুপিং ও ক্রস ম্যাচিং যথাক্রমে ২৫০, ৩৫০ ও ৫০০ টাকা নির্ণয় করা হয়েছে। অন্যান্য পরীক্ষা যেমন—সি৩, সি৪, বিএনএ, অ্যান্টিএইচবিই, অ্যান্টিএইচবিএস, অ্যান্টিএইচভি আইজিএম, অ্যান্টি টক্সো আজিজি, অ্যান্টি রুবেলা আইজিএম ইত্যাদির জন্য ৭০ থেকে ৩০০ টাকা নির্ধারণ রয়েছে। এ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষার মূল্য সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কোনো কোনো পরীক্ষার ফি চার গুণ বা ৪০০ শতাংশের বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম দাবি করেন, সরকারি হাসপাতাল বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে কিট ও ব্যাগ বরাদ্দ পায়। পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রযুক্তি আলাদা হওয়ার কারণে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষার ফি ভিন্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ রক্তের পরীক্ষা করে শুধু তাদেরই যারা এখানে রক্ত দেয় বা রক্ত নেয়। এখানে কোনো রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীরা আসেন না। রক্ত নেয়ার পর ওই রক্ত ঠিক আছে কিনা বা রোগীর দেহে দেয়ার পর কোনো জটিলতা হবে কিনা তা দেখা হয়। আমরা প্রডাক্টবেজ কাজ করি আর অন্যান্য বিভাগের কাজ প্রডাক্টবেজ নয়। তারা রোগ নির্ণয় করে। আমাদের কাজ মূলত ব্লাড ব্যাংকের। আমরা নির্ধারিত ফি-ই নিয়ে থাকি। সরকার ২০১০ সালে সে মূল্য নির্ধারণ করেছিল তা ২০২২ সালে সংশোধন হয়েছে।’

সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেখান। তাতে বলা হয়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সভার আলোকে রক্তের ৪০টি পরীক্ষার ফি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিধিমালা-২০০৮’-এর আলোকে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে যে মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ ফি নিচ্ছে। ওই অফিস আদেশের অনুলিপি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলম বলেন, ‘একটা সময় পরীক্ষার মূল্য সব বিভাগে অভিন্ন ছিল। এক-দেড় বছর আগে মূল্য সমন্বয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন হয়। সার্ভিস কমিটির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ হয়। আমাদের ল্যাবরেটরি সার্ভিসের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগেই একই মূল্য নেয়ার কথা। এর বাইরেও কিছু টেকনিক্যাল ইস্যু আছে। যেমন আমাদের যেসব টেস্ট মাইক্রোবায়োলজি বিভাগও করে, তাতে যে রিএজেন্ট ক্রয় করা হয় তার দামের কারণে ফি বাড়তে পারে। মেথডের ওপর ফির পার্থক্য সৃষ্টি হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিভাগগুলো পরীক্ষার ফি নিজেরাই নির্ধারণ করে আমাদের অবহিত করে।’ তবে একই পরীক্ষার ফি বিভাগভেদে ভিন্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। বণিক বার্তা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions