ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় পার্টিতে চলছে চরম পর্যায়ের অস্থিরতা। বিক্ষুব্ধ নেতারা বুধবার পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন। এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
বিক্ষুব্ধরা কাল ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বৈঠক ডেকেছেন এমন সংবাদ প্রকাশের পরপরই জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আহ্বান ছাড়া অন্য কারও আহ্বানে দল সংশ্লিষ্ট ঢাকায় কোনো সভা, সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করতে কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এ অবস্থায় নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় পার্টি কি আবারও ভেঙে যাচ্ছে?
জানা যায়, নানা নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে এবারের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন-দরবারের পর দলটি ২৬টি আসনে ছাড় পায়। এ ছাড়া ২৮৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা দেয় জাপা। তবে, নির্বাচনের আগেই দলের ভঙ্গুর অবস্থার চিত্র সামনে আসতে থাকে। একে একে প্রার্থীরা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আর ভোটের ফলাফলে ভরাডুবি হয় দলটির। জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে। এমনকি দলের দুর্গখ্যাত বৃহত্তর রংপুরেও অনেক প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। দলের এই ভরাডুবির জন্য নেতা-কর্মীদের অনেকেই চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করছেন। নির্বাচনের পর জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভে দলটির কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, এমরান হোসেন মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শাহাজাহান সরদার, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, বেলাল হোসেন, আবদুল হামিদ ভাসানী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন আশরাফ, সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ ইফতেখার আহসান, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, যুগ্ম যুব বিষয়ক সম্পাদক দ্বীন ইসলাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন দেওয়ান, আবদুস সোবাহান, সুজন দে, আলমগীর হোসেনসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীও তাদের দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা দলের ভিতর স্বেচ্ছাচারিতা, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের অপসারণ দাবি করেন।
জানা যায়, এর আগের দিন মঙ্গলবার ধানমন্ডির একটি অফিসে বৈঠক করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। সেখানে জাপা কো- চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, লিয়াকত হোসেন খোকা, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সালাউদ্দিন মুক্তিসহ অনেক সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ নেতারা আগামী ১৪ জানুয়ারি সারা দেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকেছেন। সেই বৈঠক থেকে দলের পরবর্তী কাউন্সিল করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ‘ভরাডুবি’র পর অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত রওশন এরশাদপন্থি নেতারা। এখন রওশন এরশাদপন্থিদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীরা। তার মধ্যে জাপার অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন। তাই এখন জাপায় আরেক দফা ভাঙন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানতে চাইলে বিক্ষুব্ধ জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আলটিমেটামের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন তো আলটিমেটামের মেয়াদ বাড়ানোর কিছু নেই। আবার গিয়ে তাদের পদ থেকে নামিয়েও দিতে পারি না। তাই আগামী ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসছেন নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা। সেই দিন তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলের পরবর্তী কাউন্সিল ডাকতে চেয়ারম্যানকে আহ্বান জানাব। তিনি যদি কাউন্সিল না ডাকেন তখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ছয় মাস আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ফলে দলের কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরবর্তী কাউন্সিলে সারা দেশে নেতা-কর্মীরা যদি চায় তারা (জি এম কাদের-চুন্নু) আবার থাকবেন, না হলে থাকবেন না। দলের চেয়ারম্যান কাউন্সিল না ডাকলে কী করবেন; জানতে চাইলে বলেন, কী আর করব? আমাদের ভালো না লাগলে বের হয়ে যাব।