দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের তাগিদ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৫০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আশাবাদী যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন (একটানা চতুর্থ) পঞ্চম মেয়াদের সরকার তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পূরণ করবে যেগুলো ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের (নির্বাচনী) ইশতেহারের অংশ হলেও এখনও পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি।

প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী সহ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন, নতুন সরকারের অগ্রাধিকার হবে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে সকল প্রতিশ্রুতি ছিল সেগুলো পূরণ করা।

১৭ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করা ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ এর সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “এই আশ্বাস আমাদেরকে আশাবাদী করে তোলে যে ক্ষমতাসীন দল- আওয়ামী লীগ সবসময় তাদের পাশে দাঁড়ানো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।”

হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ০৯ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে ইসলামপন্থী মৌলবাদী শক্তিগুলোও শক্তিশালী হয়েছে। সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো যথাযথ আইনি বিধানের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষায় সরকারকে তাগিদ দিচ্ছে।

ক্ষুব্ধ রানা দাশগুপ্ত বলছিলেন, হাসিনার অধীনে পর পর মেয়াদের সরকারগুলো এই দাবিগুলোর সাথে একমত হয়েছিল। এমনকি তাদের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তও করেছিল। কিন্তু, পূরণ করেনি।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যেসব দাবি স্থান পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু (বিশেষ) সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুদের জন্য জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

হাসিনা সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চারজনকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করে ইতিবাচকভাবেই তার মেয়াদ শুরু করায় রানা দাশগুপ্ত এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু নেতারা আশাবাদী। বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া ৩৬ সদস্যের মন্ত্রীসভায় সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যমন্ত্রী, সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ভূমিমন্ত্রী এবং কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন।

রানা দাশগুপ্ত বলছিলেন, “আমাদের অতীতে বোকা বানানো হয়েছে…এবারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হবে বলেই আমাদের আশা।” চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির বলেন, ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ওপর সুশীল সমাজকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সরকারকে পাকিস্তানপন্থী এবং মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দমন প্রক্রিয়াও শুরু করতে হবে কারণ এই শক্তিগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারপন্থী বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শুধু সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোই নয়, প্রায়ই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা- প্রতিবেশী ভারতেরও হাসিনা এবং তার নতুন মন্ত্রীসভার কাছ থেকে একই রকম প্রত্যাশা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মিডিয়া আউটলেট সদ্য শপথ নেওয়া মন্ত্রীসভাকে প্রগতিশীল এবং আধুনিক এক দল বলে অভিহিত করেছে, কিন্তু ‘ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি এস্টাবলিশমেন্ট’ এর একটি সূত্র বলেছে যে হাসিনাকে এমন অভিনন্দন জানানোটা বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে।

সূত্রটি বলছিল, “এটা সত্য যে মন্ত্রীসভায় চট্টগ্রাম থেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর মতো তরুণ মুখ রয়েছে যারা খুব প্রগতিশীল এবং উদার, কিন্তু মন্ত্রীসভার সব সদস্যকে নিয়ে একই রকম কথা বলা যায় না… নিজের একজন সিনিয়র উপদেষ্টার উপর প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। পাকিস্তানের সাথে তার নৈকট্যের ভালোই খবর রয়েছে।”

সূত্রটি আরও বলেছে, “তার মন্ত্রীসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অতি-ডানপন্থী রক্ষণশীল ইসলামিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ হেফাজত-ই-ইসলামের সাথে নিজের সংযোগের জন্য পরিচিত।
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং আগামী দিনগুলোতে তার পারফরম্যান্স লক্ষ্য করতে হবে।”

নতুন মন্ত্রীসভার সদস্যদের প্রাথমিক কিছু মন্তব্য অবশ্য এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, হাসিনার টিম মৌলবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করতে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারে অতিরিক্ত পথ হাঁটবেন।

নতুন তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, শুক্রবার তার এক্স অ্যাকাউন্টে মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, “বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক এক রাষ্ট্র, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র… মৌলবাদ এবং ধর্মান্ধতা গণতন্ত্র বিরোধী।”

তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আরাফাতের নিয়োগ রানা দাশগুপ্ত এবং শাহরিয়ার কবিরের মতো লোকদের কাছ থেকে সাধুবাদ পেয়েছে। কারণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এই তরুণ অধ্যাপক ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারনৈতিক মূল্যবোধের প্রতীক এবং মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রায়ই সাহসী বক্তব্য রেখেছেন।

রানা দাশগুপ্ত বলছিলেন, “মন্ত্রীসভায় এই নতুন নিয়োগ গুলোর মধ্যে কয়েকটি সত্যিই উৎসাহজনক… তবে, আমরা চাই সরকার আলোচনার পথে হাঁটুক এবং নিজের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করুক।”

তার মতে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় কোটিরও বেশি মানুষের কাছে সরকার এই আইন প্রণয়নের জন্য ঋণী, যারা হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের আহ্বানকে অস্বীকার করে যাদের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটের হারকে সম্মানজনক- ৪১.৮ শতাংশে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

নির্বাচনে হাসিনা প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- সম্মানজনক সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা কারণ বিএনপি এমন একটি ধারণা তৈরি করেছিল যে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে আগ্রহী নয়। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, নির্বাচনের দিন ভোটের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সারা দেশে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করেছে।

মোহনা আক্তার নামের একজন ব্যাংকার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে ০৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, “আমরা ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছেছি এবং ছোট ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজগুলো তুলে ধরেছি… এটা আনন্দের বিষয় যে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট দিয়েছে। নতুন সরকার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের উচ্চতর গতিপথে নিয়ে যাবে- এটাই আমাদের আশা।”

[ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ এ দেবদ্বীপ পুরোহিতের এই রিপোর্ট ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন তারিক চয়ন]

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions