ডেস্ক রির্পোট:- নির্বাচন শেষ। এবার সামনে আসছে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ডলার-সংকটে রিজার্ভ কমে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে। রেমিট্যান্স আসার হার বাড়লেও এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে আসেনি। রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি। খরচ মেটাতে ধার বাড়ছে ও টাকা ছাপাতে হচ্ছে সরকারকে।
জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। বাড়তি খরচের চাপে দিশেহারা মধ্যবিত্ত। পতনে পতনে জেরবার পুঁজিবাজার। সুদের হার বাড়ানোয় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমছে। এতে বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের স্যাংশন-আতঙ্ক পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে। সব মিলিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ নতুন সরকারের সামনে আসছে। কীভাবে তা সামলানো হবে, তা নিয়ে চাপ পড়তে পারে সরকারের ওপর।
কিছুদিন ধরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করে ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, নির্বাচন হওয়ার পর সরকারকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পড়তে হতে পারে। অনেক আলোচনা, বিতর্ক, আশঙ্কা আর সমালোচনার মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এ বিষয়গুলো সামনে আসছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিদেশিদের চাপ থাকায়, কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তাদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এখনো স্পষ্ট না হলেও একটা আতঙ্ক রয়েছে যে, তাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে আগামীর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা একটা ব্যবসাবান্ধব সরকার।
অর্থনীতিকে ঠিক রাখা। অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যেমন, ডলার-সংকট, গ্যাস-সংকট ও অন্যান্য সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেবে নতুন সরকার—এই প্রত্যাশা করি।’
জানা যায়, নির্বাচনের কারণে কিছুদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মনোযোগ পায়নি দেশের অর্থনীতি। আর বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যেও একধরনের আস্থাহীনতা ছিল সামনের অনিশ্চয়তা নিয়ে। অবশেষে নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় এখন সবার নজর সরকার আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি কীভাবে চালায়, তার দিকে। বর্তমানে অর্থনীতির গলার কাঁটা ডলার-সংকট। দফায় দফায় পদক্ষেপেও ডলার-সংকট কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো তা কমছেই। গত মাসে রেমিট্যান্স বাড়া, আইএমএফের ঋণের কিস্তি, কোরিয়ান ঋণ ও এডিবির ঋণের ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এটা কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
নির্বাচনের পর যাতে পশ্চিমারা বিশ্ব বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা না দিতে পারে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাঁরা মনে করেন, স্যাংশন হলে রপ্তানি কমে যাবে, বিনিয়োগ কমে যাবে। এর ফলে কর্মসংস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার্বিকভাবে তা ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা পুরো অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো যেন তাড়াতাড়ি শেষ করে এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারি, সেদিকে জোর দিতে হবে। দুর্নীতি অনেক বেড়ে গেছে। যেকোনো কাজ করতে অনেক বেশি সময় লাগছে। এসব দিকে নতুন সরকার বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে আশা রাখি।’
অর্থনীতিতে ধীরগতির কারণে রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি চলছে। শুল্ক-কর আদায়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, বছর শেষে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) শুল্ক-করসহ সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এই সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অর্থনীতির চাকা সচল করে রাজস্ব আয়ে গতি না বাড়াতে পারলে, নতুন সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হবে এটি। এমনই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জ্বালানি সংকট, রাজস্ব বোর্ডের হয়রানি এবং ডলারের রেট নিয়ে ভয়াবহ বৈষম্য। নির্বাচনের পরে এসব সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। যারা এসব করে তাদের বিষয়ে যে করেই হোক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য জবাবদিহি দরকার। এসব দূর না হলে অর্ডার আরও কমে যাবে।
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে বের হওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পেছনে পড়ে রয়েছি। এসব মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। আমদানি পণ্যে শুল্কনির্ভরতা কমাতে হবে। নির্বাচনের পরে দেশ স্থিতিশীল থাকলে অর্থনীতি ভালো চলবে। এ জন্য কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন।