শিরোনাম

কক্সবাজার এক্সপ্রেসে যাত্রীসেবায় ৫০ ‘ট্রেন বালা’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১২৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন। এই ট্রেনে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব মনুসর আহমেদ। তাঁর সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগমও। হাতে লাগেজ ও ব্যাগ। ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে এই ব্যাগগুলো নিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। এই অবস্থায় ওই বগিতে দায়িত্বে থাকা দুজন ট্রেন বালা (নারী স্টুয়ার্ড) আসলেন। ব্যাগগুলো একজনে নিলেন, বাকিজন ওই দুই যাত্রীকে সিট পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন। এমন সেবা পেয়ে অনেকটা অবাক-ই হলেন সরকারি সাবেক এই কর্মকর্তা যুগল। কারণ ট্রেনে এমন সেবা যে আগে কখনো দেখেননি।

শুধু ট্রেনে ওঠা নয়, ট্রেন কক্সবাজার পৌঁছা পর্যন্ত এই সব ট্রেন বালা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ট্রেনের জানালা বন্ধ করা, খোলা। কারও কিছু প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেওয়া। যাত্রী নামার সময় ব্যাগগুলো ধরে ধরে নামিয়ে দেওয়া-সব কাজই করছেন তাঁরা। বিশেষ করে বয়স্কদের প্রতি মনোযোগ বেশি ছিল তাঁদের। এই চিত্রটি ছিল গত বৃহস্পতিবার।

জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মনসুর আহেমদ। তিনি বলেন, ‘বিমানে এমন সেবা পেতাম। ট্রেনে আগে কখনো এমন সেবা দেখিনি। আমার জানামতে নারী সেবক ছিল না। আমাদের মতো বয়স্কদের প্রতি আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না। যখন যা চেয়েছি, তা-ই দিয়েছেন তাঁরা।’

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক যাত্রী মরিয়ম বেগম। তিনি দুই সন্তান নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছেন। মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আগের ট্রেন বলতে বুঝতাম, দুর্গন্ধ-ময়লাযুক্ত সিট। সঙ্গে দুর্ব্যবহার। এখন ট্রেন বলতেই বিমানের ছোঁয়া। উন্নতমানের সেবা।’

এই ট্রেনের নারী স্টুয়ার্ড সাফনান বলেন, ‘ভালো মানের বেতনে আমরা চাকরি করছি। যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য ট্রেনিংও নিয়েছি। যাত্রী সেবাই আমাদের মুখ্য বিষয়।’

আরেকজন স্টুয়ার্ড ঋতু সাহা বলেন, ‘এখানকার পুরুষ কর্মচারীরাও অনেক হেল্প ফুল। সিকিউরিটিও অনেক ভালো। নিজের ঘরের মতোই কাজ করতে পারছি।’

১ ডিসেম্বর থেকে এই চিত্র এখন কক্সবাজার রুটের ট্রেনে। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়া আসা মিলিয়ে ৫০ জন নারী স্টুয়ার্ড সেবা দিচ্ছেন।

এক কথায় বলা যায়, বিমানের মতো ট্রেনেও এখন সেবা মিলছে ‘ট্রেন বালার’। এর আগে তাঁদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং-অনবোর্ড সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এটির সভাপতি হিসেবে আছেন মো. শাহ আলম। তাঁর প্রতিষ্ঠান সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন, মহানগর গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে সেবা দিচ্ছে।

রেলওয়ে জানায়, এখন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে নারীরা সেবা দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সুবর্ণ, সোনার বাংলা, তূর্ণার মতো আন্তনগর ট্রেনে নারী সেবক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ে কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং-অনবোর্ড সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘নারী সেবকদের আমরা পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করেছি। তাদের ভালো বেতনও দিচ্ছি। নারী হিসেবে যাতে কোনো সংকোচ না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখছি। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৫০ জন নারী স্টুয়ার্ড ট্রেনে যাত্রীসেবা দিচ্ছেন। নির্বাচনের পর সব আন্তনগর ট্রেনে নারী নিয়োগ করা হবে। আমাদের উদ্দেশ্যে যাত্রীরা সর্বোচ্চ যাতে সেবা পায়।’

এই বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘নারী-শিশুসহ যাত্রীসেবা উন্নয়নে নারী সেবিকারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে থাকে। সেই বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই নারী সেবক নিয়োগ দিচ্ছি। দক্ষ, চটপটে, স্মার্ট—এসব নারী সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘ট্রেন বালা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। শুধু কক্সবাজার রুটে নয়, বিরতিহীন সব কটি ট্রেনেই এ সেবা নিশ্চিত করা হবে।’আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions