বান্দরবানের পাহাড়ি পল্লীতে শুরু নবান্ন উৎসব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৩২৪ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের জীবীকার প্রধান উৎস জুম চাষ। জুমের ধান দিয়ে চলে সারাবছরে খবার। সেই নতুন জুমের ধান ঘরের তোলার মধ্য দিয়ে চলছে পাহাড়ের পল্লিতে নবান্ন উৎসবের আনন্দের আমেজ। তাইকো পাহাড়ের প্রতিটি এলাকায় চলছে নতুন ধানের নবান্ন উৎসবের মুখর।

পাহাড়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলে জুমের ধান কাটার উৎসব। এ সময়ে ব্যস্ত থাকেন নারীরা। দীর্ঘ ৯ মাসের পরিশ্রমের বিনিময়ে ফলানো পাকা সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যস্ততায় থাকেন তারা। জুমে উৎপাদিত পাকা ধানে মুখর হয়ে ওঠে জুমিয়াদের ঘর। যেন পাহাড় খুঁড়ে ঘরে তোলা হচ্ছে মূল্যবান সোনা। একদিকে সোনালি ধান, অন্যদিকে চাষিদের মুখে হাসি যেন পরিপূর্ণতা পায় পাহাড়ের জনপদ। শুধু ধান নয়, ধানের পাশাপাশি তুলা, শিম, মারফা, তিল, চিনার, বেগুন, মরিচ, কুমড়া, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, আখ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল-শাক-সবজি ফলান চাষিরা।সেই সুবাধে জুমিয়াদের ঘরে ঘরে এখন নবান্ন উৎসবের মেলা।

জুমিয়ারা জানিয়েছেন, তাদের বছর জুড়ে চলে জুমের ধান লাগানো উৎসবের আমেজ। জুম ধানের পাশাপাশি তিল, তৈল, মারফা, ভুট্টা ও রোপন করা হয়। সবশেষে শুরু হয় জুমের ধান কাটার উৎসবের আমেজ। নতুন ধান ও ফসল ঘরে তোলার পর গ্রামের গুরুজন কিংবা ধর্ম গুরুদের উৎসর্গের মধ্য দিয়ে চলে নবান্ন উসবের আমেজ। এদিনে ছোট থেকে বড় গ্রামে গ্রামে মেতে উঠেন সবাই। নতুন জুমের ধান দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আমন্ত্রণ জানানো হয় অতিথিদের। গ্রামে গ্রামে এদিনে মেতে উঠেন জুমিয়ারা।

হাতিভাঙা পাড়া গ্রামে কারবারী বাদুহা ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরাদের নবান্ন উৎসবকে মাইক্তা চাম পান্দা বলা হয়। সারাবছর কষ্ট করে ফলানো নতুন জুমের ধান যখন ঘরে তোলে তখন ঘরে ঘরে আনন্দ করে। আর সেই নতুন ধান দিয়ে গ্রামে গুরুজন, ধর্মীয় গুরুকে উৎসর্গ মধ্য দিয়ে চলে আনন্দের আমেজ।

বান্দরবানের ১১টি জাতিসত্ত্বার বসবাস। তারা বেশীর ভাগই দুর্গম পাহাড়ের বসবাস করছেন। বছরের বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে পাহাড়ের পল্লীগুলোতে নবান্ন উৎসবের ধুম লাগে। নবান্ন উৎসবকে ১১টি জাতিসত্ত্বা ভিন্ন ভিন্ন নামে বলে থাকেন। মারমাদের বলা হয় কহস থমং, ত্রিপুরাদের মাইক্তা চাম পান্দা, বমদের থ্লাইথার, চাকমাদের নুয়ো ভাত হানা, ম্রোদের চাক্লাই এছাড়াও অন্যান্য জাতিদের ভিন্ন নামে ডাকা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান-চিম্বুক সড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে পাহাড়ঘেরা গ্রাম হাতিভাঙ্গা। গ্রামের এক পাশের সুউচ্চ নীলাচলের পাহাড়। অপূর্ব নিসর্গঘেরা গ্রামটির কাছে যেতেই ঢোল-মাদলের শব্দ। গ্রামের বড় আঙিনা আর হলঘরজুড়ে বসেছে ত্রিপুরা গান আর নাচের আসর। নিজেদের সংস্কৃতি পোশাক পরিধান করে আনন্দের মাতোয়ারা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা। ঢোল ও বাশির সুরে মেতে উঠেছেন পুরো গ্রামবাসী। জুমের নতুন ধান খেতে দাওয়াতে এসেছে বিভিন্ন গ্রাম থেকে। উৎসবকে ঘিরে গ্রাম সেজেছে অন্য রকমে। শুধু ত্রিপুরা নয় ধাপে ধাপে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীরাও গ্রামের এই উৎসব উদযাপন করে থাকেন।

বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মং নু চিং বলেন, সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পাহাড়িরা তাদের উৎপাদিত জুমের ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে নিজেদের ঐতিহ্যগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকে। যাকে আমরা বলি নবান্ন উৎসব।

তিনি বলেন, বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এই উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তাদের বৈচিত্র্যময় এই উৎসব গুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উৎসবগুলোই পার্বত্য চট্টগ্রামের অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় বহন করে। নবান্নের এই উৎসবে পাহাড় জুড়ে মুগ্ধতা ও আনন্দের জোয়ার বয়ে বেড়াচ্ছে। পার্বত্য নিউজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions