ডেস্ক রির্পোট:- কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া মাঝিরকাটার বহুল আলোচিত শাহিনুর রহমান শাহীনকে হত্যার চেষ্টার গুলিতেই ঘটনাস্থলে মারা গেছে শাহিনের বন্ধু ইরফান মাহমুদ (২১)। মৃতের বাড়ি পার্শবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ইসলামপুর গ্রামে। সে এ গ্রামের শফিউল্লাহ পুতুর ছেলে। অপর দিকে সন্ত্রাসীদের টার্গেট শাহীন অল্পের জন্যে বেঁচে যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামু থানাধীন গর্জনীয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মাসুদ রানা ও এলাকাবাসী।
তারা বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (১২ মার্চ) সকাল পৌঁনে ১০টায় মাঝিরকাটার বেলতলী-ছাগলখাইয়া জঙ্গলাকীর্ণ সড়কের জামবাগানের মুছতলী পয়েন্টে।
ঘটনায় নিহতকে উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্যে কক্সবাজার পাঠানো হয়েছে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ৯টি গুলির খোসা। তাদের ধারণা, সন্ত্রাসীরা কোন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশের উদ্ধার করা গুলিগুলোর খোসার দৈর্ঘ্য ৩.৯ সেন্টিমিটার। যা ভারী অস্ত্রের।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র মতে, সকালে গোলাগুলির ঘটনার পরপর পুলিশ, বিজিবি, পিবিআই ও সিআইডি কর্মকর্তা যথাক্রমে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ অরূপ কুমার, সিআইডির ইনস্পেক্টর মিতাশ্রি বড়ুয়ার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের টিম, গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মাসুদ রানা; এসআই মোজাম্মেল হক ও বিজিবি ছাগলখাইয়া বিওপি ক্যাম্প সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯টি গুলির খোসাসহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে সন্ত্রাসীদের টার্গেট আহত শাহিনুর রহমান শাহীন তৎক্ষণাৎ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তিনি অল্পের জন্যে বেঁচে গেছেন। সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে অন্তত ২৩/২৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। প্রথম ২ রাউন্ড গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তৃতীয় নম্বর গুলি আসে তার দিকে। নিজেকে বলি দিয়ে তাকে বাচিঁয়েছে ইরফান। নতুবা তিনি নিশ্চিতভাবে মারা যেতেন।
অপর প্রশ্নের জবাবে শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, সে সকাল পৌঁনে ৯টায় বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে ছাগলখাইয়া তার রাবার বাগান দেখতে যাওয়ার পথে এ হামলার শিকারে পড়েন। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা ৮/১০ জন ছিলো । তাদের মধ্যে ১ জনের মুখ খোলা। তাকে তিনি চিনেছেন। বাকিদের চিনেন নি। মনে করা হচ্ছে প্রভাবশালীরা তাকে হত্যার জন্যে তাদেরকে ভাড়া এনেছে। তারা তাকে এ দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চায়। যে কোন মুহূর্তে তারা তাকে মারবে। কারণ এই পাহাড়ি পয়েন্টে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আস্তানা রয়েছে। তাদের পথের কাটা হয়ে গেছে সে।
শাহীনের দাবি, তার বন্ধুু ইরফান মাহমুদ নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের পীরে কামেল শাহ আবদুল গনী সাহেবের নাতী। সে পাহাড়ের সুন্দর দেখতে নাইক্ষ্যংছড়ির ছাগলখাইয়া এলাকা দেখতে যাচ্ছিলো। তিনি ২টি মোটরসাইকেল যোগে যাওয়ার পথে জঙ্গলে উৎপেতে থেকে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে । যারা গুলি করার পরপর পাহাড়ি পথ দিয়ে বাইশারীর দিকে পালিয়ে যায়। তিনি প্রশাসনের কাছে এসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এ সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন, গর্জনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি হাফেজ আহমদ, সমাজসেবক মোহাম্মদ আমিন ও যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামসহ অর্ধশত নানা পেশার লোক ।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাহীনের কিছু প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে। যাদের অধিকাংশের বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে। বাকিরা গর্জনিয়ায়। তারাই ভাড়া করা লোক এনে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন পুরো এলাকা থমথমে।
লোকজন ভয়ে দিনাতিপাত করছে। অনেকে এ পাহাড়ি পথ দিয়ে চলাচল করছে না। পরপর কয়েটি ঘটনার পর অনিরাপদ হয়ে গেছে মাঝিরকাটা-ছাগলখাইয়া এ সড়কটি।
এদিকে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ অরূপ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।