ডেস্ক রির্পোট:- রাস্তার পাশাপাশি ফুটপাতও দখল করে নেয়া হয়েছে। শহরের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা হয়ে উঠা পোর্ট কানেক্টিং রোডের (পিসি রোড) একটি বড় অংশ অবৈধ দখলদারিত্বের কবলে পড়েছে। দুইশ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ঠিকঠাক করা রাস্তাটি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন গাড়ির অবৈধ পার্কিং এরিয়ায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও রাস্তা এবং ফুটপাতের বড় অংশ থেকে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটছে না।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে, নগরীর অলংকার মোড় থেকে নিমতলা মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ১২০ ফুট প্রস্থের রাস্তাটি বর্তমানে শহরের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা হয়ে উঠেছে। তবে এই রাস্তা নিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত ছিল না। ২০১৭ সালের শেষদিকে রাস্তাটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্রম চলাকালে নানা ধরনের অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে উঠে। প্রায় পাঁচ বছর পর গত নভেম্বরে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। ১২০ ফুট প্রস্থের পোর্ট কানেক্টিং সড়কটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। গত বেশ কিছুদিন যাবত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের জন্য শহরের প্রধান সড়ক আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ানহাট আগ্রাবাদ, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকা বেহাল অবস্থায় থাকায় শহরের বিকল্প প্রধান সড়ক হিসেবেও পিসি রোড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আগ্রাবাদ, বন্দর, ইপিজেডসহ সন্নিহিত এলাকার বহু গাড়ি এখন অলংকার কিংবা সাগরিকা হয়ে পিসি রোড ধরে চলাচল করে। কিন্তু নানাভাবে দখল এবং অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে এই রাস্তাটি মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে।
দখলদারিত্ব শুরু হয় অলংকার মোড়েই। অসংখ্য গাড়ি রাস্তাটির মোড়ে জটলা পাকায়। সাগরিকা, নয়াবাজার মোড়, হালিশহর, বড়পুল, নিমতলাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান দখল করে রাখে। শুধু রাস্তার অর্ধেকই নয়, ফুটপাতের বড় অংশও এসব গাড়ির দখলে চলে যায়। বড়পুল থেকে নিমতলা পর্যন্ত অত্যন্ত চমৎকার ফুটপাতের উপর দিয়ে মানুষের হাঁটাচলার উপায় থাকে না। রাস্তাজুড়ে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং ভাড়ায় চলাচল করা মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন গাড়ির দখলদারিত্ব এত ব্যাপক যে রাস্তায় গাড়ি এবং ফুটপাতে সাধারণ মানুষের চলাচল পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ পথচারীদের ক্ষোভ থাকলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল হালিশহর বড়পুল এলাকার চৌধুরী কামাল বলেন, এলাকার ফুটপাত খুবই সুন্দর করে গড়ে তোলা হয়েছে। একটি ওয়াকিং ওয়ে হিসেবে ব্যবহারের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এই ফুটপাতে হাঁটার কোনো উপায় থাকে না। ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানের পেছনের অংশ ফুটপাতের উপরে তুলে দিয়ে পার্কিং করা হয়। সন্ধ্যার পথে ফুটপাতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম চলে। ট্রাক কাভার্ডভ্যানের পেছনের অংশে ঢেকে যাওয়া ফুটপাত ধরে তখন আর চলাচল করা সম্ভব হয় না।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামের এক পথচারী বলেন, ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। এই রাস্তাটি শহরের দুঃখ হয়ে উঠেছিল। সেই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেলেও এখন অবৈধ দখলদারিত্ব নতুন যন্ত্রনা সৃষ্টি করেছে।
বন্দর জোনের ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাস্তাটিতে দখল করে রাখা গাড়িগুলোর অধিকাংশই বন্দরকেন্দ্রীক। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এসব গাড়ির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিলে বিভিন্ন সংগঠন এমনভাবে জিম্মি করে যে উল্টো ক্ষমা চাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ ইচ্ছে করলেও এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও তিনি স্বীকার করেন।