ডেস্ক রির্পোট:- দেশে ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল নয়। উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুস না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়। আরোপ করা হয় নিয়মের অতিরিক্ত কর। রয়েছে আরও নানা জটিলতা, যা নতুন ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়াকে করে প্রলম্বিত। এসব কারণে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহবোধ করেন না। এ চিত্র উঠে এসেছে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পৃথক দুই জরিপে।
সিজিএসের জরিপটি তৈরি হয়েছে গত বছরের ২৭ জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮ বিভাগের ১৯৪ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে। এতে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তাই ব্যবসা করতে গিয়ে সরাসরি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
দুর্নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রূপটি হলো ঘুস ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সুবিধা গ্রহণ। অন্যদিকে সিপিডির জরিপে করহারের চেয়ে কর প্রদানে ঘুস-দুর্নীতিকে বড় সমস্যা মনে করেন ৪৭ শতাংশ উদ্যোক্তা। এছাড়া ব্যবসার লাইসেন্স নিতে ৪৯ শতাংশ উদ্যোক্তা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ৭৫ শতাংশ উদ্যোক্তা দুর্নীতি হওয়ার তথ্য দিয়েছেন।
ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছাড়াও ১৫টি দীর্ঘমেয়াদি বড় সমস্যা উঠে এসেছে জরিপে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দুর্বল অবকাঠামো, ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা, অদক্ষ প্রশাসন, মূল্যস্ফীতি, জটিল করব্যবস্থা, উচ্চ করহার ইত্যাদি।
ব্যবসার পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা যে ভালো নয় এ তথ্য পুরোনো। দুর্নীতির পাশাপাশি নানা ধরনের প্রক্রিয়াগত ও আইনি জটিলতার কারণে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এখানে। কখনো বা প্রলম্বিত হচ্ছে প্রক্রিয়া। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। দেশে ব্যবসা সহজীকরণে ডুয়িং বিজনেস সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এছাড়া একই উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। কথা ছিল, ডুয়িং বিজনেস সংস্কার কমিটির কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করবে বিডা। এর ফলে আমরা আশা করেছিলাম, উদ্যোক্তারা শিল্প গড়ে তুলতে অতি দ্রুত তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশীয় উদ্যোক্তাদের এখনো বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়। পদে পদে দিতে হয় ঘুস। এ অবস্থার অবসান জরুরি।
বস্তুত দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশে সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় বাধা এখনো। তাছাড়া কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি, জমির নামজারি করতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা-এসবও উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। দেশে শিল্পায়ন ও দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও তারল্য সংকট ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা নিরসনে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। দৃঢ় হবে দেশের অর্থনীতির ভিত। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হলে উন্নয়নশীল এবং পরবর্তী ধাপে উন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পথটিও মসৃণ হবে, সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব, এক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। সরকারের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে।