রামগড় (খাগড়াছড়ি):- খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবাধে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পাহাড়খেকোরা নির্বিচারে কাটছে পাহাড়, বনাঞ্চল ও ফসলি জমি। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে কয়েকটি স্পটে এই পাহাড় কাটার উৎসব চললেও নির্বিকার রয়েছে প্রশাসন।
জানা গেছে, প্রতিবছর এ পাহাড় কাটা শুরু হয় বছরের শেষে বৃষ্টি না থাকলে। তবে এ বছর সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে পুরো সময়জুড়েই পাহাড় কেটে চলছে একটি চক্র। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে জরিমানা করলেও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে পুরোদমে আবারো পাহাড় কাটা শুরু হয়ে যায়। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, ইটের ভাটায় ট্রাকপ্রতি মাটি বিক্রি করা হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ভাটামালিকরা তাঁদের ১ হাজার ৮০০ টাকা করে দেয়। বাকি টাকা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করার কথা বলে রেখে দেয়। মাটি কাটায় অনেক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। মাটি বিক্রি নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামগড় উপজেলা প্রশাসন থেকে কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রকাশ্যে পৌরসভার চিনছড়ি পাড়ার ফুলকুমারি টিলা, বিড়ি কোম্পানির টিলা, আদর্শপাড়ার জামালের টিলা, হকটিলা ও শালবাগান এলাকার মন্নান কোম্পানির টিলায় নির্বাচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও উপজেলার পাতাছড়া, বলিপাড়া, বৈদ্যটিলা, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, শশ্মনটিলা, নজিরটিলা, মুসলিমপাড়া, ভতপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গার অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আইন অমান্য করে এক্সকাভেটর, কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে। ফলে পাহাড়ের ওপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা।
অভিযোগ রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন। ফলে নিজের ভিটের মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করেন না তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, রামগড়-ফেনী মহাসড়কসহ উপজেলার প্রতিটি অলিগলির রাস্তাগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি। চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনেরর কোনো সঠিক নজরদারি নেই। যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আজকের পত্রিকা