ডেস্ক রির্পোট:- বরগুনার বামনা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য গরুর বকনা বাছুর ও মাছ ধরার জাল বিতরণে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সুফলভোগী জেলেরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বরগুনার বামনা উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ১৬ জন দরিদ্র জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা দামের মোট ১৬টি বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়। দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮টি প্রুপে (প্রতি গ্রুপে ৫ জন করে) মোট ৪০ জন দরিদ্র জেলেদের প্রতি গ্রুপকে ৬০ হাজার টাকার ছন্দি জাল বিতরণ করা হয়। যাতে করে জেলেরা অবৈধ কারেন্টজাল ব্যবহার না করে তাই সরকারিভাবে এই সুতার জাল বিতরণের মাধ্যমে জেলেদের বৈধ পন্থায় মাছ শিকারে উৎসাহিত করা হয়।
আমারে দেলহে গ্যাদা একটা বাছুর, হ্যার ঠ্যাং ভাঙ্গা। হ্যাঁ বাছান যাইবে না, আমি হ্যাঁ আনি নায়। যেয়ারে বলছে আমনেরে পরে একটা কিন্না দিমু আনে, আমনে এ্যাতো বারাবারি করলেন ক্যা? মৎস্য অফিসের এ্যাক স্টাফ কয়, দিমু না তোমারে গরু, য্যা হরতে পারো হইরো যাইয়া! গরুর বকনা বাছুর না পেয়ে কালবেলাকে কথাগুলো বলছিলেন দরিদ্র জেলে তালিকায় নাম থাকা বামনা সদর ইউনিয়নের পূর্ব সফিপুর গ্রামের ছয়জদ্দিন ফকিরের ছেলে আবদুল ছত্তার ওরফে শাহজাহান। যদিও পরে সুস্থ সবল বকনা বাছুর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
আবদুল সত্তার বলেন, গরুর এ বকনা বাছুর পেতে প্রত্যেক সুফলভোগীদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ক্রয় বাবদ পাঁচশত টাকা করে নিয়েছেন উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মচারী। তবে তারা নাম বলতে পারেননি ওই কর্মচারীর। তাছাড়া মরাধরা (শুকনো ও ছোট) গরু দিয়েছেন সুফলভোগীদের। এই গুলাই কি সরকার আমাদের সাহায্য দিয়েছেন?
গরুর দাম ও আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, প্রতিটি গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে হবে। নামমাত্র গরু দেওয়া হয়েছে।
ওই একই ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের জিতেন দাসের ছেলে জেলে সুভাস দাস বলেন, স্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ আমাদের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা করে নিয়েছে। সেই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে আমাদের গরু নিয়ে আসতে হয়েছে। লোকমুখে শুনেছি সরকার থেকে আমাদের ২৬ হাজার টাকা বাজেট ছিল। আমার এই গরুর দাম ২৬ হাজার টাকা নেই। আমাকে যে গরু দেওয়া হয়েছে তার দাম সর্বোচ্চ ১২-১৩ টাকা আছে। বিতরণকৃত ১৬টি গরুর মধ্যে দুগ্ধপোষ্য ছোট গরুও ৫ থেকে ৭টি ছিল। সেগুলোও সুফলভোগীরা নিয়ে গেছে।
একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির রাখাল বলেন- ফ্লইড, পইন ও টাকাসহ যে মালামাল পেয়েছি তার দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হবে।
সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের হাকিম ফরাজীর ছেলে জেলে আব্দুল রহিম ফরাজী বলেন, আমার গরুটির দাম বিশ হাজার টাকা হবে। এর চেয়ে ছোট গরু দেওয়া হয়েছে। আমার কাছ থেকেও স্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ পাঁচশত টাকা নেওয়া হয়েছে।
গরুর দাম জানতে চাইলে বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ত্রিশ হাজার টাকা থাকবে না তো। এখানে ভ্যাট, আইটি যাবে, ওডিটের কিছু খরচ থাকে জানেন তো আপনারা যারা করেন। তাছাড়া বাজারে ১টি গরু কিনতে গেলে শতকরা ৩-৫ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। প্রতিটি সাতাশ হাজার টাকায় গরু কেনা হয়েছে। ওখানে তো কিছু ড্যামারেজ দিতেই হবে। গরু তো সব একই মায়ের পেটে হয় নাই। দেখা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে হয়। মোটামুটি একটা গড়ে কিনতে হয়। তবে গরুর দাম কমের অভিযোগটি অস্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমানে গরুর দাম অনেক বেশি। এটি তারা সঠিক অভিযোগ করেনি।
প্রথমে তিনি ১৬ জন সুফলভোগীকে গরু বিতরণের কথা বললেও পরবর্তীতে অসুস্থ গরুর কথা স্বীকার করে ১৫ জন সুফল ভোগীকে গরু দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে ওই একজনকে গরু দেওয়ার কথা বলেন। তবে স্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ পাঁচশত টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
জালের মূল্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্যাট ট্যাক্স বাবদ সাড়ে ১০% বাদ দিয়ে বাকিটা তারা পাবেন। তাতে সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজার টাকার মতো জাল পাবে প্রতিটি গ্রুপ। জালের মূল্যের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ওরা ব্যবহার করে কারেন্ট জাল, ওরা কারেন্ট জাল পাইলে খুশি। একটা সুতার জালের প্রায় ৬০ কেজি ওজন, সেটার দাম ১৫ হাজার টাকা হলে সেটা অবাস্তব।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিম্বজিৎ কুমার দেবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বিতরণ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিতরণ কমিটির সভাপতি আল ইমরান বলেন, গরু ক্রয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বর্তমানে গরুর দাম একটু বেশি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গরুগুলো ক্রয় করেছেন। তবে অভিযোগের বিষয় সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।কালবেলা