খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ বছেরর বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য। প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী আকবর আজাদ। তিনি বলেন , উপজেলায় ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আছে মাত্র ১২টি বিদ্যালয়ে। বাকি স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য। সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। শিক্ষক সংকটের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়। বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের পক্ষে ৬টি ক্লাসরুমে পাঠদান করা সম্ভব নয়। প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য হওয়ার কারণে পাঠদান প্রায়শ ব্যাহত হয়।
হাফছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শান্তনা মারমা বলেন, ‘আমরা এখানে ৪ জন সহকারী শিক্ষক আছি। এর মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন সময় দাপ্তরিক কাজে বাইরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের পাঠদানে সমস্যা হয়। যারা পদোন্নতির যোগ্য তাদেরকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে সংকট দূর হবে।’
খাগড়াছড়ির ৫শ ৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ২শ ৯৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য। যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে সেখানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির যোগ্য সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিলে নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি সংকট অনেকটায় দূর হবে। সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অনেক শিক্ষক ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় হতাশ।
খাগড়াছড়ির বদুংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সজল কুমার গর্জ্যা বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছরের মতো চাকরিকাল অতিবাহিত করেছি। পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় অনেক শিক্ষক পায়ে হেঁটে দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু আমরা প্রতীক্ষিত পদোন্নতি পাচ্ছি না। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি খুবই জরুরি।’
গুইমারার শশ্মানটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে স্কুলে শৃঙ্খলা থাকে না। প্রধান শিক্ষক একজন টিম লিডার কিন্ত সেই পদটি যদি শূন্য হয় তাহলে শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকে না।’
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ত্রিপুরা বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ। অনেক শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়েই চাকরি জীবন থেকে অবসরে চলে গেছেন। অনেক সহকারী শিক্ষকের চাকরি বয়স ২৫ বছর হয়ে গেছে অথচ তারা এখনো পদোন্নতি পায়নি। এতে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের মামলার কারণে কয়েকটি উপজেলায় পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে তবে জেলার লক্ষ্মীছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় কোন মামলা নেই। সেখানে ৭৭ জন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির যোগ্য। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চাইলেই এসব শিক্ষকদের পদোন্নতি দিতে পারে।’
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য হওয়ার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘জেলায় ২শ ৯৩টি পদশুন্য আছে। ইতোমধ্যে যারা পদোন্নতির যোগ্য তাদের কাগজপত্র গত বছরের ডিসেম্বরে আমরা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। অধিদপ্তরে যাচাই বাছাই চলছে। আমরা প্রত্যাশা করছি চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষকেরা পদোন্নতি পাবে।’সূত্র: আজাদী।