রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটিতে স্বাধীনতা দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকালে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহিদ মিনারের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল নিয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে তালাবদ্ধ পেয়ে তারা ঘুরে গেছেন। আবার অনেকেই ফটকেই ফুলের ঢালা রেখে চলে যান।
এদিকে প্রশাসনের এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
জেলা সিপিবির সভাপতি সমীর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া শংকর এক বিবৃতিতে প্রশাসনের এক তরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিপিবি জানায়, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সব শহিদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও পুষ্পমাল্য নিয়ে শহিদ বেদিতে অর্পণ করার জন্য প্রবেশ করতে গিয়ে দেখা যায়- শহিদ মিনারে প্রবেশের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ। প্রশাসনের এই ধরনের এক তরফা চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিপিবি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, খেলাঘরসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমমনা সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানায়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া শংকর বলেন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকালে ফুল দিতে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখে ওখানে আমরা প্রতিবাদ করি। অনেকেই দেখেছি দেয়াল টপকে গিয়ে ফুল দিয়েছে, কেন দেয়াল টপকে ফুল দিব আমরা। এটাই প্রথমবার এখানে এসে ফুল দিতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। যদি তারা স্থান পরিবর্তন করে থাকে তাহলে সেটি প্রচার করা হয়নি। আমার সেটি জানিও না। পরে শুনেছি উপজেলা পরিষদ অফিসের পাশে শহিদের নামের তালিকাসহ স্মৃতিস্তম্ভ আছে সেটিকে প্রশাসন স্মৃতিসৌধ বানিয়ে ফেলেছে। তাহলে এভাবে হঠাৎ পরিবর্তন কেন?
তালাবদ্ধ থাকায় জেলা সিপিবি ও যুব ইউনিয়ন তালাবদ্ধ গেটের সামনের পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং প্রতিবাদ জানায়। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তালাবদ্ধ শহিদ মিনারে একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। অপর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ফুল দিতে এসে তারাও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।
জাতীয় পার্টির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মো. হারুন মতব্বর বলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দেয় কিন্তু স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিজয় দিবসে সব সময় আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে আসছি। আজ সকালে শহিদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে জানতে পারি এ বছর হঠাৎ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফুল দেয়ার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই বিষয়ে আমরা জানতাম না। পরে আমরা আবার উপজেলা কার্যালয়ের ওখানে গিয়ে ফুল দিয়ে আসি। পরে শুনেছি গতকাল যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে স্থানটি উল্লেখ ছিল।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র জেলার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা সকালে গিয়ে শহিদ মিনার তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা জানি না কোথায় প্রশাসনের লোকজন ফুল দিয়েছে। পরে দলীয় লোকজনসহ আমরা দেয়াল টপকে গিয়ে ফুল দিয়ে চলে আসি। এভাবে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে সেটিও আমরা জানি না বা আমাদের জানানো হয়নি। আমি মনে করি এখানে যেসব শহিদের নাম আছে তাদের অবমাননা করা হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর জাতীয় বিভিন্ন দিবসে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হলেও এবছর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমবারের মতো শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। অনেকেই হয়ত ভুলবশত না জেনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চলে গিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি সভায় এই বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দপ্তরে দপ্তরে চিঠি ও শহরে মাইকিং করা হয়েছে। প্রচারণার জন্য সব চেষ্টাই করা হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এটি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ মাইকিং করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ না জানে তাহলে আমার কী করার আছে? তাহলে বলতে হয়, যারা ওখানে গিয়েছেন তারা উদ্দেশ্য মূলকভাবে গেছেন।