ডেস্ক রির্পোট:- ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে আজ শক্তিশালী ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরপেক্ষ ভেন্যু কুয়েতের জাবেদ আল-আহমাদ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় (কুয়েত সময় রাত সাড়ে ৯টা) শুরু হবে ম্যাচটি। শক্তি ও র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিন কতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষা করছে তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে বাংলাদেশ। তবে সউদী আরবে দুই সপ্তাহের নিবিড় অনুশীলনের তুষ্টি, দলের অন্দরে বয়ে যাওয়া ঐক্যের সুর, একটা দল হয়ে ওঠার আত্মবিশ্বাস, সব মিলিয়ে নিজেদের উপর আস্থাও কম নয় বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের। তারাও কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছেন।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যের ব্যবধান ৮৬ ধাপ। তবে এবারের বাছাই পর্বে এক জায়গায় দুই দল পাশাপাশি। আর তা হচ্ছে, উভয়েই সন্ধানে আছে প্রথম জয়ের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ৭-০ গোলে হেরে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে লেবাননের সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে লেবাবনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল ফিলিস্তিন। তাই প্রথম জয়ের তাড়না নিয়েই নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ও খেলোয়াড়দের কথায় পরিষ্কার যে, লড়াইটা হবে ফিলিস্তিনের আক্রমণভাগের বিপক্ষে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের। তাই তো রাকিব হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা ব্যস্ত সময় কাটতে পারেন আক্রমণভাগ থেকে নিচে নেমে তপু বর্মণ, রহমত মিয়াদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রক্ষণে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলতে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে আক্রমণের সুযোগ যে কম আসবে, তা বুঝতে পারছেন রাকিবও। তবে বাছাইয়ের প্রথম ধাপে মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করা এই ফরোয়ার্ড আশা ছাড়ছেন না। দলীয় সংহতি ও ঐক্য আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে তাকে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে গতকাল দেশে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় রাকিব বলেন,‘রক্ষণ, আক্রমণ সব নিয়েই কোচ কাজ করেছেন। আমরা ফরোয়ার্ড হিসেবে চেষ্টা করব সুযোগ পেলে গোল করার। আসলে এটা নিয়ে কোচ কাজ করছেন, আজকেও (গতকাল) আমাদের ভিডিও সেশন ছিল ওদের শক্তির দিকগুলো নিয়ে, দুর্বলতা নিয়ে। ওরা যে শক্তিশালী দল-তা আমরা জানি। আমরা নিজেদের দিক থেকে চেষ্টা করব মাঠে যতটুকু ভালো করা যায়। আমরা সুযোগ পেলেই গোল করার চেষ্টা করব।’ তিনি যোগ করেন,‘অনেক দিন আমরা একসঙ্গে আছি। ফলে ভালো একটা ‘কম্বিনেশন’ তৈরি হয়েছে। আশা করি, ম্যাচে এটা আমাদের কাজে দেবে। এখানকার আবহাওয়াও ভালো (রাতে)। সউদী আরবের মতোই ঠা-া আবহাওয়া। এই কন্ডিশনও ইনশাল্লাহ ম্যাচে আমাদের কাজে দেবে।’ আরও একটি চাওয়া আছে বাংলাদেশ দলের। আর তা হচ্ছে- কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সমর্থন। কুয়েত সিটিতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। এবার মাঠে তাদের পাশে চান রাকিব,‘দেখছি এখানে আমাদের অনেক প্রবাসী ভাই আছেন এবং আমাদের নিয়ে তাদের আগ্রহ অনেক। আশা করব, তারা যেন মাঠে এসে আমাদেরকে সমর্থন দেন। ইনশাল্লাহ আমরা তাদের জন্য ভালো কিছু করব।’
ডিফেন্ডার রহমত মিয়া মনে করেন, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, বনিবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শক্তিশালী ফিলিস্তিনের বিপক্ষে রক্ষণের দৃঢ়তা ধরে রাখার প্রশ্নে আশাবাদি তিনি। রহমত বলেন,‘প্রথমত আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাচের আগে দলের সবাই সুস্থ আছে। সউদীতে শুরু (ক্যাম্প) করেছিলাম, সেখানে আমরা দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছি। সব মিলিয়ে বলতে পারি, সবাই ক্যাম্পটা ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। সবাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং আশা করছি, ইনশাল্লাহ দল ভালো করবে। যদি বাংলাদেশ দলের এই সময়ের খেলা দেখেন, তাহলে দেখবেন, শুধু ডিফেন্ডাররাই রক্ষণের কাজ করে না, পুরো দলই রক্ষণের জন্য কাজ করে। আমি মনে করি, সবাই মানসিকভাবে সেভাবেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আছে। ভালোভাবে খেলেই ইনশাল্লাহ দেশে ফিরতে পারব।’
কুয়েতের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই সউদী আরবে ১৫ দিন কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছিল বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে কুয়েতে এসে মঙ্গলবার মরুভূমিতে বিরল বৃষ্টি দেখেছেন খেলোয়াড়রা। রহমতের মনে হচ্ছে, ম্যাচের দিন বৃষ্টি হলে তাদের জন্য ভালোই হবে,‘মরুভূমিতে সাধারণত বৃষ্টি হয় না। সৌদিতে ১৪-১৫ দিন অনুশীলন করেছি, কিন্তু ওখানে আমরা বৃষ্টি পাইনি। কুয়েতে এসে পেলাম। এটা আমাদের জন্য ভালো। ম্যাচের দিন বৃষ্টি হলে আমরা মানিয়ে নিতে পারব, ইনশাল্লাহ।’
আজ বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার দেড় যুগ আগে ফিলিস্তিনের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের এবং সেটা ঘরের মাঠে। ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচে বাংলাদেশ ১-১ গোলে ড্র করেছিল ফিলিস্তিনের সঙ্গে। এরপর টানা ৫ বারের সাক্ষাতে সবগুলো ম্যাচই হেরেছে লাল-সবুজরা। সর্বশেষ দুই দলের দেখা হয়েছিল ২০২১ সালে কিরগিজস্তানে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ২-০ গোলে। তবে কুয়েত সিটিতে যে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল সেই ফিলিস্তিন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। গত জানুয়ারিতে কাতারে হওয়া এশিয়ান কাপেই তারা নিজেদের বদলে যাওয়া রূপটা দেখিয়েছে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলতে জায়গা পেয়ে। এমন একটি দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে ‘কঠিন পরীক্ষাই’ দিতে হবে, এটা অনুমেয়।