ডেস্ক রির্পোট:- গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল বুধবার ইফতারের আগমুহূর্তে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে স্থানীয় শফিকের টিনশেডের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা দগ্ধদের প্রথমে একটি স্থানীয় ক্লিনিক নিয়ে যান। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন রত্না (৪০), রহিমা (৩), শারমিন (১১), সুফিয়া (৯), মুনসুর (৩০), মেরাজ (১৩), তারেক রহমান (১৮), সুমন (২৫), শিল্পী (৪৫), আজিজুল হক (২৪), রামিশা বেগম (৩৬), নিরব (৭), লালন (২৪), মো. নাঈম (১৩), মুনাফ (১৮), কবির (৩০), নূর নবী (৫), সাদিয়া খাতুন (১৮), মশিউর (২২), জহরুল ইসলাম (৩২), মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ (৪০), নিলয় (১০), কমলা খাতুন (৭৫), কদ্দুস (৪৫), মো. সোলাইমান (৬), তাওহীদ হোসেন (৭), তৈয়বা (৩), লাদেন হোসেন (২২), ইয়াসিন আরাফাত (২১), মোসা. নারগিস (২৫), রাব্বি (১৩), মহিদুল ইসলাম (২৫), মোতালেব (৪৮), সোলাইমান মোল্লা (৪৫), নাদিম (২২) ও সুমন (২৫)।
আহতদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হলে তাদের স্বজনরা ভিড় করেন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দগ্ধদের স্বজনরা জানিয়েছেন, সিলিন্ডার থেকে লিক হওয়া গ্যাসের কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮টি শিশু রয়েছে। যাদের অধিকাংশেরই শরীর পুড়ে গেছে। দগ্ধদের মধ্যে ৫ জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন মো. নাইম, আরিফুল ইসলাম আরিফ, মো. সোলাইমান, রাব্বি ও মোহিদুল। এই ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের মধ্যে ব্ল্যাক ইউনিটে ১৭ জন, ইয়োলো ইউনিটে ৬ জন, রেড ইউনিটে ১০ জন ও গ্রিন ইউনিটে ৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা শামসুন্নাহার বেগম জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় শফিকের টিনশেড বাড়িতে অনেক ঘর রয়েছে। সেখানে ছোট ছোট ঘরে আলাদা পরিবার থাকে। তিনি জানান, সেখানকার একটি ঘরের বাসিন্দা গতকাল বিকেলে রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কিনে আনেন। এরপর সেটি সংযোগ দেওয়ার সময় সেখান থেকে লিক হয়ে প্রচুর গ্যাস বের হতে থাকলে তিনি সিলিন্ডারটি ঘরের সামনে ফেলে দেন। পাশেই মাটির চুলায় রান্না করছিল আরেকটি পরিবার। সেখান থেকে আগুনের সংস্পর্শে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে আশপাশে থাকা নারী, শিশুসহ ৩৬ জন দগ্ধ হন।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসা আলো নামে এক গৃহবধূ জানান, সিলিন্ডারটি পড়ে থাকতে দেখে সবাই এক স্থানে জড়ো হন। এতে দগ্ধের সংখ্যা বেড়েছে।
এ বিষয়ে কোনাবাড়ী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. আশরাফ জানান, প্রথমে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনে সূত্রপাত হয়। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল আরেফিন বলেন, সংবাদ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম যায়। সেখানে গিয়ে দগ্ধ কাউকে পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কোনাবাড়ী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ইফতারের আগে তিনজন দগ্ধ রোগী এসেছিলেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কোনাবাড়ী পপুলার হসপিটালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. জাহিদ জানান, সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ ১০ জনের অধিক রোগী এসেছিলেন। তাদের সবার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পরে তাদের গেট থেকেই অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ, কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গতকাল রাতে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধদের স্বজনরা ছোটাছুটি করছেন। যারা আইসিইউতে ভর্তি আছেন তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কারণ তাদের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আহত শিশু রাব্বির বাবা শাহ আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দগ্ধ হলে আমার ছেলে চিৎকার করে ওঠে। তার অবস্থা গুরুতর।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ দগ্ধরা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দগ্ধদের দেখতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, যারা ভর্তি হয়েছে তাদের সবার ইনহেলেশন বার্ন আছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন।