রাঙ্গামাটি:- গত দুই-তিন দিন ধরে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ও সড়কে অবাধে বিচরণ করা বেওয়ারিশ কুকুর ধরা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মিজোরাম থেকে আসা কুকি সম্প্রদায়ের শিকারিরা বেওয়ারিশ কুকুরগুলো ধরছে। তবে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়াও অনেকের পালিত কুকুর ধরা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকালেও রাঙ্গামাটি জেলা শহরের কয়েকটি এলাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর ধরে নিয়ে যাচ্ছিল শিকারিরা।
স্থানীয় কয়েকজন তরুণ-তরুণী শিকারিদের পর্যবেক্ষণ করে রিজার্ভবাজার চেঙ্গী মুখ (নাপ্পিঘাটা) এলাকায় পৌঁছান। সেখানে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কুকুরগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরণের ফাঁদ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।
কুকুর উদ্ধারে যাওয়া তরুণদের তথ্যমতে, বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়াও মানুষের পালিত কুকুর ধরা হয়েছে। গত দুই-তিনদিন ধরে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ২০টি কুকুর ধরা হয়েছে।
মিজোরামের শিকারিদের কুকুর ধরার ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন তরুণ-তরুণী বুধবার সকালে চেঙ্গী মুখ এলাকায় গিয়ে কুকুর নিয়ে যেতে বাধা দেন।
পরে বিষয়টি জানাজানির পর সেখানে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেলী রুদ্র উপস্থিত হন। সহকারী কমিশনার নেলী রুদ্রের উপস্থিতিতেই কুকুরগুলো উদ্ধার করে আনেন ওই তরুণ-তরুণীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুকুর উদ্ধার কাজে জড়িত একজন জানান, ‘আমার এক ছোট বোন জানিয়েছে গত পরশুদিন (সোমবার) টিটিসির মুখ থেকে পাঁচটি কুকুর ধরা হয়েছিল।
তাই আমরা ধারণা করছি, মিজোরাম থেকে আসা কুকি সম্প্রদায়েরর এসব শিকারিরা গত দুই তিনদিন ধরেই রাঙ্গামাটি শহর থেকে কুকুর ধরে যাচ্ছে। আজ (বুধবার) সকাল থেকে আমরা তাদের ফলোকরি এবং রিজার্ভবাজার চেঙ্গীমুখ এলাকায় যাই। সেখানে তখন চারজন কুকুর শিকারি ছিল।
তিনি আরও বলেন, চেঙ্গীমুখে একটি বোটে ২০টি কুকুর ছিল। আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জনকে বিষয়টি জানানোর পর জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সেখানে যান। তার উপস্থিতিতে আমরা কুকুরগুলো উদ্ধার করে জেলা শহরের রাজবাড়ী, কলেজগেইট, কল্যাণপুর ও ভেদভেদি এলাকায় ছেড়ে দিই।
এর আগে, ৪-৫ মাস আগেও তারা রাঙামাটি শহর থেকে ৭টি কুকুর ধরেছিল। তখনও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তারা কুকুরগুলো ছেড়েছিল। কিন্তু এরপরও তারা আবার কুকুর ধরতে এসেছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেলী রুদ্র জানান, শহর থেকে কুকুর ধরে রিজার্ভবাজার এলাকায় নিজে যাওয়া হয়েছিল। আমরা সেখানে গিয়ে কুকুরগুলো ছেড়ে দিয়েছি।
কারা কুকুরগুলো শিকার করেছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে চাননি। তবে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের অফিসিয়ালি নাম্বারে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত জেলার বরকল উপজেলা হয়ে ভারতের মিজোরাম থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে রাঙ্গামাটি শহরে কুকুর ধরতে আসে এসব শিকারিরা। এর আগে, ২০২১ সালের আগস্টে রাঙ্গামাটি শহর থেকে বেশ কিছু কুকুর ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী বাজার, বাবু ছড়া ও থানা বাজার থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যায় মিজোরাম থেকে আসা শিকারিরা।
প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এ মালিকবিহীন প্রাণিনিধন বা অপরসারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, (ক) এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতিত, মালিকবিহীন কোনো প্রাণিনিধন বা অপসারণ করা যাবে না। (খ) কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করলে তা আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে।