ডেস্ক রির্পোট:- আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়। ১৬৭ বছর আগে সূত্রপাত হয় আজকের এই নারী দিবসের। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছিলেন। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পুরুষের সমান মজুরিপ্রাপ্তি, দৈনিক কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা এবং কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। সেই আন্দোলন, সেই মিছিল ছত্রভঙ্গের জন্য পুলিশ নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালায় এবং অনেক নারী শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে।
প্রায় ৫০ বছর পর ১৯০৮ সালে নিউইয়র্ক শহরের মেয়েরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আবার আন্দোলন শুরু করেন। সেদিন প্রায় ১৫ হাজার নারী একযোগে রাস্তায় নেমেছিলেন নিজেদের ভোটাধিকার, শিশুশ্রম বন্ধ ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্দিষ্ট করার জন্য। ১৪ দিন ধরে চলে সেই প্রতিবাদ কার্যক্রম। এই আন্দোলনের সূত্র ধরে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টির কমিউনিস্টরা দিনটিকে নারী দিবস পালন করার ডাক দেন। এর পর দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে জার্মান সমাজতাত্ত্বিক নারী অধিকারকর্মী ক্লারা জেটকিন নানা তৎপরতা শুরু করেন। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে দিনটিকে বিশ্বব্যাপী নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পেশ করেন। সেদিন সম্মেলনে উপস্থিত ১৭ দেশের ১০০ জন নারীর সবাই তার প্রস্তাব সমর্থন করেন।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯১১ সাল থেকে থেকে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রিক দল এবং কমিউনিস্ট কর্মীরা নানা আয়োজনের মাধ্যমে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করেন। ক্লারা জেটকিনের স্বপ্ন অবশেষে সফল হয় ১৯৭৭ সালে, যখন জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।
গত ২ শতকে ঘরে-বাইরে নারীর অবদান বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এখন সব সেক্টরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। গতানুগতিক পেশা যেমন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ওকালতি, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসা ও সেনাবাহিনী ইত্যাদির সঙ্গে রিকশা চালানো থেকে শুরু করে বিমান চালনায় নারীরা সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবু উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশ- সর্বত্র নারী-পুরুষ বৈষম্য কমানো খুব একটা সম্ভব হয়নি। অর্থনীতিতে অবদান বাড়িয়ে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে যুগে যুগে নারীরা নিজেদের কাঁধের বোঝা যেন বাড়িয়েই চলছে। নারীদের জন্য একটি আলাদা দিবসের পাশাপাশি শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারলেও নারীর সম-সুযোগ ও সম-অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ‘নারীর সম-অধিকার, সম-সুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’। নারী দিবসের প্রতিপাদ্য, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিষয় বাস্তবায়ন করাই এখন দিবসটির মূল চ্যালেঞ্জ।