ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের সড়কে চলাচলকারী অনেক গাড়িকে অযথা হর্ন বাজতে দেখা যায়। যে স্থানে হর্ন বাজানোর দরকার নেই বা সামনে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো যানবাহন না থাকলেও সেখানে গাড়ির চালকরা হর্ন বাজান। কোনো কোনো গাড়ির চালক পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে সড়কে চলছেন। যাতে তাদের দেখে সড়ক থেকে অন্য গাড়ির চালকরা দ্রুত সরে যান। কেউ কেউ গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন সংযোজন করেন। আবার কোনো কোনো চালক গাড়িতে কিছু ভয়ংকর শব্দের হর্ন লাগান।
পুলিশ বলছে, হাইড্রোলিক হর্ন যারাই বাজিয়ে থাকে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। আর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযথা হর্ন বাজানো একটি অপরাধ। এতে সড়কে চলাচলকারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে দিন দিন এ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় হাইড্রোলিক হর্ন গাড়িতে রাখা ও বাজানোর জন্য ৪ শতাধিক মামলা করেছিল পুলিশ। সড়কের সব মোড়ে যেখানেই গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে দেখেছে ট্রাফিক পুলিশ সেই গাড়িকেই আটক করে নিয়মিত মামলা দিয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী কোনো গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন পাওয়া গেলে জরিমানার বিধান আছে।
এ ছাড়াও প্রাইভেট গাড়িগুলোতে পিপ-পিপ শব্দের হর্ন আর বাণিজ্যিক গাড়িতে ‘পপ-পপ’ শব্দের হর্ন বাজানোর বিধান রয়েছে। ওই সময় কিছু গাড়ি আটক করা হয়। কিন্তু ওই গাড়ির মালিকরা যারা কি না, উচ্চবিত্ত শ্রেণির গাড়ি ছোটানোর জন্য আসাদুজ্জামানের কাছে একাধিক তদবির করেন। একপর্যায়ে ওই অভিযান থেমে যায়। পরে আর হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। ওই অভিযান মাত্র ৪ দিন চলেছিল। পরে কমিশনারের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জানান, সড়কে কেউ যাতে অযথা হর্ন না বাজায় এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা প্রচার চালিয়ে থাকি। ট্রাফিক পুলিশ এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। তারা সড়কে যেখানেই কাউকে হর্ন বাজাতে দেখেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।
তিনি আরও জানান, সড়কে কাউকে গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে দেখলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন ও ক্রিমিলোজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘শব্দদূষণ ঘটানো একটি অপরাধ। বিনা কারণে হর্ন বাজিয়ে সড়কে চলাচলকারী লোকজনকে মানসিক হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়। এই অপরাধপ্রবণতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনের পর দিন এই শব্দ দূষণ বেড়ে চলছে। এর কারণ হচ্ছে, যারা এর দেখভাল করেন তারা মূলত উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। দেখা গেছে, সড়ক ফাঁকা রয়েছে সামনে তেমন কোনো গাড়ি নেই তাও হর্ন বাজাচ্ছে। হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষেধ থাকলেও সেখানেও কেউ কেউ হর্ন বাজাচ্ছেন। এই প্রবণতা রুখতে আইনের প্রয়োগ যেমন ঘটাতে হবে তেমন করে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘সড়কে যেসব নাগরিক চলাচল করেন তাদেরও অনেক সচেতন হতে হবে। কেউ যাতে বিনা কারণ হর্ন না বাজান সেই বিষয়টি তার কাছে তুলে ধরতে হবে। যদি তিনি একই কাজ বারবার করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে জানাতে হবে, যাতে করে তারা তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।’খবরের কাগজ