ডেস্ক রির্পোট:- নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বন্দরের সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার প্রধান আসামি। জেলা কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ছয়তলার ৫ নম্বর কক্ষে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও কারাকর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন বছর ধরে তুষার (২৮) যমুনা ভবনের দ্বিতীয় তলার তিন নম্বর কক্ষে ছিলেন। তার বাবার নাম জামান মিয়া। স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলায় তুষার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলাটি এখন বিচারিক আদালতে স্বাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে।
কারাগারে কী ঘটেছে বুধবার দুপুরে তা জানতে চাইলে জেলা সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, সন্ধ্যার সময় কয়েদি ও হাজতিদের যার যার কক্ষে চলে যেতে হর্ন বাজানো হয়। তারপর গণনা করা হয়। ঘটনার সময় যমুনার একটি ওয়ার্ডে একজন হাজতির সংখ্যা কম পাওয়া গেলে তার খোঁজ শুরু করে কারাগারে কর্মরত অফিসরারা। মাইকিং করে যখন তার খোঁজ মিলছিলো না তখন প্রতিটি ভবনের শুরু হয় তল্লাসী। এসময় কর্ণফুলি ভবনের একটি খালি কক্ষের পাওয় যায় তুষারকে। তিনি দরজার আড়ার সঙ্গে ছাদর ছিঁড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে ছিলেন। তখন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যে কক্ষে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে সেখানে তুষার একাই ছিলো জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের কারাপ্রধান মোজ্জামেল বলেন, সাধারণত ওই ভবনের চারতলা পর্যন্ত কয়েদি থাকে। ছয়তলা প্রায় খালি থাকে আর পাঁচ নম্বর কক্ষ ফাঁকা পেয়ে সেখানে ডুকে যায় তুষার। এরপর ঘটনা ঘটায়।
জেলার বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার ২০২০ সাল এ কারাগারে আসে আসামি তুষার। থাকতেন যমুনার একটি ওয়ার্ডে। গেল কিছুদিন ধরে সে কারাগারের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ দিতেন না। প্রায় সময় অন্য হাজতিদের কাছে দোয়া চাইতেন। তিন দিন তুষার তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া চেয়েছে বলেও জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে মামলার বিচার শেষের দিকে হওয়ায় তুষার পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করেছে। এখন কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করে তাহলে সেটি রোধ করা কঠিন।
মৃতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শষে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানে সম্পৃক্ত থাকায় তুষারের বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেছিলেন ইলিয়াস। এছাড়া ২০১৮ সালে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় শামীম নামে এক যুবকের সঙ্গে তুষারের ঝগড়া হয়। সে সময় তুষার লাঠি দিয়ে শামীমের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় শামীম তুষারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস উস্কানি দিয়েছিলেন বলে ধারণা করে তুষারসহ কয়েকজন মিলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সাংবাদিক ইলিয়াসকে।
এ ঘটনায় নিহত সাংবাদিক ইলিয়াসের স্ত্রী বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় তুষারকে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাসুজ্জামান জানান, মামলাটির বিচারকার্য শেষের দিকে এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিরাও গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।