ডেস্ক রির্পোট:- কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার বেড়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে অন্তত দুই লাখ বাংলাদেশি ভ্রমণ ভিসায় দুবাই গেছেন। নতুন একটি রুটে আফগানিস্তান, ইরান, লিবিয়া ও ইরাকি নাগরিকদের সঙ্গে মিলিয়ে তাঁদের ইউরোপে পাচার করার চেষ্টা করছে দালাল চক্র। তাঁদের মধ্যে গত এক বছরে আড়াই হাজার মানুষ প্রতারিত হয়ে জীবন নিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। অনেকে এখনো ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ায় আছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিআইডি জানায়, দালালদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছানোর লক্ষ্যে গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখের বেশি মানুষ ভ্রমণ ভিসায় দুবাই গেছেন। তবে কতজন ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানো প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি গত এক বছরে দেশে ফিরেছেন। সিআইডির বিশেষায়িত টিমের তথ্যানুযায়ী, পাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশই দুবাই হয়ে অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে ঢুকেছে।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে এই মানব পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আরও কিছু সদস্যের তথ্য পেয়েছি। তাদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
বেবিচকের লোক জড়িত
ইউরোপে পাঠানোর লক্ষ্যে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠাতে দালালদের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক লোক জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রেরও যোগসাজশ পেয়েছে সংস্থাটি। ২০২২ সালে বিমানবন্দর থানায় করা মানব পাচারের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে।
ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার করা মাহামুদুল হাছান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের এয়ারকন্ডিশন সার্ভিসে এবং জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বেবিচকে কর্মরত।
সিআইডির মতে, চক্রটি স্থানীয় পর্যায়ে লোক সংগ্রহ, দুবাইয়ের ভিসার ব্যবস্থা, বিনা বাধায় বিমানবন্দর পার করা, দুবাই থেকে অবৈধভাবে ইরান হয়ে তুরস্কে মানব পাচারে জড়িত।
ভুক্তভোগীর বয়ান
ওই মামলার বাদী তুরস্কফেরত একজন ভুক্তভোগী জানান, পুরোটাই ছিল ফাঁদ। তাঁকে প্রলোভন দেখিয়ে বলা হয়েছিল, বিমানে করে তুরস্কে পৌঁছানো হবে। এর জন্য প্রথমে যেতে হবে দুবাই, সেখান থেকে তুরস্কের ভিসা দেওয়া হয়।
এই ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাকে দুবাই পাঠানো হয় ভিজিট ভিসায়। দুবাই যাওয়ার পরই আমার সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা, পাসপোর্টসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যায় দালালেরা। কাগজ ছাড়া আমাদের কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। তুরস্কে পাঠাবে বলে দুবাইয়ে আমার কাছ থেকে নেওয়া হয় এক লাখ টাকা। ট্রলার, স্পিডবোটে করে ইরান নিয়ে যায়। সেখানে রুমে আটকে অমানুষিক নির্যাতন করে দেশে থাকা পরিবার থেকে টাকা নেয়। দফায় দফায় প্রায় ৮ লাখ টাকা দেওয়ার পর কোনো কাগজপাতি ছাড়া পৌঁছাই তুরস্কে। সেখানে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটি। এরপর বাংলাদেশ এম্বাসি ও আইএমওর সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখন সর্বস্বান্ত। আমি চাই না, এমন ফাঁদে পড়ে কেউ অবৈধভাবে ইউরোপে যাক।’
নতুন কৌশল
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘পাচারকারীরা যেসব দেশে অস্থিরতা রয়েছে, সেখানে নিয়ে বাংলাদেশিদের জড়ো করে; যেমন আফগানিস্তান, ইরান ও ইরাক। ওই সব দেশের নাগরিকেরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে যখন ইউরোপমুখী, সেই দলের সঙ্গে বাংলাদেশিদেরও ঢুকিয়ে দেয় দালালেরা। ইউরোপের কোনো দেশ তাদের জায়গা দিলে বা সীমান্ত খুলে দিলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও ঢোকার চেষ্টা করবে।’আজকের পত্রিকা