সাগরতীরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা, সতর্ক বিজিবি,টেকনাফ সীমান্তে থেমে থেমে গোলার শব্দ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২০২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আরাকান আর্মি ঢুকে পড়ায় জীবন বাঁচাতে তারা সাগরতীরে অবস্থান নিয়েছে। টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমারের সাগরের তীরে হাজার হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান দেখা গেছে। কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা দেখা দেখতে পেয়েছেন তারা। সেসব নৌকায় করে এই পাড়ে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ভয়ে তারা অনুপ্রবেশ করতে পারছে না।

এদিকে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলার শব্দে আতঙ্ক কমেনি। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে গোলার শব্দ ভেসে আসছে। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলার শব্দ পায় সীমান্তের লোকজন। শনিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং কানজরপাড়া-খারাংখালী এলাকায় বিকট গুলির শব্দ শুনেছেন লোকজন।

টেকনাফ সীমান্তে গতকাল সকালে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের এলাকায় আরাকান আর্মি ঢুকে পড়েছে। এতে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় তাদের অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাই কয়েক হাজার রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বিলে, সাগরের তীরে আশ্রয় নিয়েছে। তারা যে কোনো মুহূর্তে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করতে পারে। রাতের বেলায় তারা শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তবে তাদের ঠেকিয়ে রাখছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জলসীমাজুড়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক স্পিড বোট দিয়ে টহল দেওয়া হয়। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

শাহপরীর দ্বীপের মাঝি আবু বক্কর বলেন, ওপারে ২০ থেকে ২৫টি রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা দেখা গেছে। সেসব নৌকায় করে এই পারে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ভয়ে তারা অনুপ্রবেশ করতে পারছে না।

সাগরতীরে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের বিষয়ে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. তাওসিন রহমান বলেন, ‘অনুপ্রবেশ রোধে নাফ নদীতে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। আমরা জানুয়ারি ২৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ শতাধিক রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছি। সর্বশেষ গতকাল (শনিবার) তিনজনকে শাহপরীর দ্বীপ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

মিয়ানমারের মংডুর সিকদার পাড়ার রোহিঙ্গা সেলিম বলেন, ‘আমাদের তিনটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে চরে আশ্রয় নিয়েছি। সাগরে বাংলাদেশের বাহিনী বেশি থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করব সেখানে ঢোকার। না হলে বাঁচতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টার থেকে বোমা মারছে। আমাদের কয়েকটি গ্রাম থেকে গোলাগুলি হচ্ছে। গ্রামগুলো হচ্ছে মংডু কাদিরবিল, নুরুল্যাহ পাড়া, বাগগুনা, নর বাইন্যা, থানাশো। এসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।’

এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, ‘শনিবার রাতে আমাদের সীমান্তে দুই ঘণ্টা থেমে থেমে গোলাবর্ষণ চলছিল। ঠিক ওপারে বলিবাজারে আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীদের মধ্য চলমান যুদ্ধে এখনো চলমান রয়েছে। যার কারণে এপারে গোলার শব্দ পাওয়া যায়। আজ (গতকাল) সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, ‘রাতে গোলার শব্দ পাওয়া না গেলেও আজ (গতকাল) সকাল ৮টা থেকে মিয়ানমার সীমান্তের গোলার আওয়াজ বাড়ি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। জীবনে এমন গুলির আওয়াজ কোনো দিন পাইনি। গোলার এমন ভয়ংকর আওয়াজ ছিল, আমার দেড় বছরের শিশুসন্তান ভয়ে ঘুম ভেঙে কেঁদে ওঠে।’

বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, সাবরাং ও সেন্টমার্টিনের নাফ নদের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। যেসব স্থান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে, সেখানে রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এত দূর থেকেও গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। সকালে (গতকাল) দুটি বিকট শব্দ পাওয়া গেলেও ৮টার পর নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, নাফ নদের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শনিবারের তুলনায় গতকাল ভোর থেকে বেড়ে গেছে। এতে এপারে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ অন্যদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে প্রায় সময় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে নাফ নদ থাকার কারণে আমরা অনেকটা ‘সেফ জোন’ আছি। তবুও আমরা সীমান্তের বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলেছি।

গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারীর পরিচয় মিলেছে

গুলিবিদ্ধ হয়ে শনিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীর পরিচয় জানা গেছে। তিনি মিয়ানমারের নলবনিয়া এলাকার বাসিন্দা হাফেজ আহমদ উল্লাহর স্ত্রী সফুরা খাতুন। হাফেজ আহমদের বড় বোন রমজান বেগম টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগে থেকেই বসবাস করেন। ওইদিন একটি নৌকা করে গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ পাঁচজন শাহপরীর দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন।

রমজান বেগম বলেন, আমার ছোট ভাই হাফেজের স্ত্রী সফুরা মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সে শুক্রবার সকালে গুলিবিদ্ধ হয়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে আনা হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions