রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকহারে শুকিয়ে যাচ্ছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলা বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু ও বরকলের সঙ্গে জেলা সদরের নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে নৌযানে করে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনেও ভাড়া দিতে হচ্ছে প্রায় দুইগুণ।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মাছচাষ ও নৌ যোগাযোগ সুবিধার জন্য ১৯৬০ সালে কাপ্তাইয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে পুরাতন রাঙ্গামাটির বিস্তৃর্ণ সমতলী জায়গা পানিতে তলিয়ে গিয়ে বিশাল জলধার কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে রাঙ্গামাটির জেলা সদরের সাথে পাঁচ উপজেলার নৌ-পথই হচ্ছে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। উপজেলার বাসিন্দারা নৌ-পথে লঞ্চ, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোটে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে সুষ্ঠুভাবে নৌ চলাচলের স্বার্থে বিভিন্ন প্রশাসনের সমন্বয়ে ছয়টি নৌ-পথে পরিকল্পিতভাবে খননের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা রাঙ্গামাটি জোন।
রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা রাঙামাটি জোনের অস্থায়ী কার্যালয়ে গত সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থার রাঙ্গামাটি জোনের সভাপতি মইনুদ্দিন সেলিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি জোনের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সদস্য নাজিম উদ্দীন, মো. ইউনুস, লঞ্চ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত দে, লঞ্চ মালিক আব্দুল গনি, মো. আসিফ, নুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা আরো বলেন, বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে ঢাকা হতে টেন্ডারের মাধ্যমে মাইনীমুখ হতে মেরুং খাল খনন করা হচ্ছে। এতে খননের পলিমাটিগুলি নৌ চলাচলের মূল পথে এবং নদীতে এসে পড়ছে। এতে সরকারের বিপুল অর্থের অপচয় হচ্ছে। যদি এই খনন কাজগুলি বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, বিএফডিসি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সমন্বয়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক ড্রেজিং করা হতো, তাহলে পলিমাটিগুলি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করা যেত। এতে মূল সমস্যা নিরসন হতো। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে হ্রদ খনন করার কারণে ৬ উপজেলার নৌ-পথগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে কাপ্তাই হ্রদে যে পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন, সে পরিমাণ পানি না থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য ভা-ার বিলুপ্তসহ লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
তাই রাঙ্গামাটির ৬টি উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌ-পথকে সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে সবার সমন্বয়ে কাপ্তাই হ্রদে খাল খননের কাজ করার ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সংস্থার রাঙ্গামাটি জোনের কর্মকর্তারা।