ডেস্ক রির্পোট:- ২০২৩ সালের ১৭ই এপ্রিল বিকাল ৪টা ৫৯ মিনিট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ই-মেইলে একটি ই-মেইল আইডি থেকে বার্তা আসে। ই-মেইলটির সাবজেক্ট লাইনে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা উইল বি শুট অ্যাট ফোর পিএম অন ২৭শে এপ্রিল। বাংলাদেশ পুলিশ ডু নট হ্যাভ দ্য পাওয়ার টু প্রটেক্ট দিজ অ্যাটাক।’ যার অর্থ-‘২৭শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষমতা নেই এই হামলা ঠেকানোর’। ই-মেইলের বডিতেও একই বার্তা লেখা ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানানো হয়। বার্তার ভয়াবহতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তখন বিদেশ সফরে থাকায় সেখানেও তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ই-মেইল প্রেরণকারীকে শনাক্তে অনুসন্ধান শুরু করে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি টিম। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শেষে আইপি অ্যাক্টিভিটি পর্যালোচনা করে জানা যায়- ই-মেইল প্রেরণকারী দীন ইসলাম বাদল।
তার অবস্থান সৌদি আরবে। বাদল সৌদি আরবে থাকায় সেখানকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে সৌদি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়। একইসঙ্গে ’২৩ সালের ২০শে এপ্রিল এ বিষয়ে রমনা মডেল থানায় মামলা করে সিটিটিসি। ওইদিনই অভিযুক্ত বাদল ও তার সহযোগীদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এনসিবি-ইন্টারপোলের মাধ্যমে ডিপ্লোমেটিক সহযোগিতা নেয়া হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্ত শেষে অবশেষে গত ২৯শে জানুয়ারি অভিযুক্ত দীন ইসলাম ও তার সহযোগী কবির হোসেনকে আটক করে বাংলাদেশে প্রেরণ করে সৌদি সরকার। ওইদিন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে দীন ইসলাম ও সৌদি যুবদলের সভাপতি কবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের সময় দীন ইসলামের কাছ থেকে হুমকি প্রদানকারী ই-মেইল অ্যাড্রেসটির রিকভারী মোবাইল নম্বরসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অংশ হিসেবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন সৌদি যুবদলের একাংশের সভাপতি কবির হোসেন ও সৌদি যুবদল নেতা দীন ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ২৭ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। যে কারণে এই হুমকিকেও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বা হামলা করা হলে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গে আর কারও যোগসাজশ ছিল কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ সময় তিনি দীর্ঘ তদন্ত ও পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাদের বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সৌদি সরকার ও সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান।