ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে সব মিলিয়ে পঞ্চম মেয়াদের জন্য তিনি শপথ গ্রহণ করবেন। সেইসঙ্গে শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। সেজন্য ইতোমধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন ৩৬ জনের এই তালিকা প্রকাশ করেন। শপথ অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করবেন।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে ৩০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেককেই নানা অনিয়ম, অদক্ষতা ও বেফাঁস কথাবার্তার জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ কেউ বয়সের কারণে বাদ পড়েছেন। আবার নতুনদের জায়গা দিতে একাধিক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা কাউকে কাউকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। আগের মেয়াদেও মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল এনে নতুনদের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; নতুন সরকার গঠন করতে গিয়ে এবারও নতুনদের বেছে নিয়েছেন।
এর আগে বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তালিকা প্রকাশের আগেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ফোন করে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হলেন যে ২৫ জন: বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪), আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২), শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯), জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১) এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২) পুনরায় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
নতুন করে স্থান পেয়েছেন মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১) নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), আব্দুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩) এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬)। এ ছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটায় বিগত দুটি মন্ত্রিসভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্থপতি ইয়াফেস ওসমান আবারও ডাক পেয়েছেন। আর এবার মন্ত্রিসভায় যুক্ত করা হয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে।
প্রতিমন্ত্রী যারা: প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ডাক পেয়েছেন নতুন ও পুরোনো ১১ জন। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী। তারা হলেন বেগম সিমিন হোসেন রিমি (গাজীপুর-৪), বর্তমান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু (ঢাকা-৩), বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), বর্তমান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), বেগম রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২) এবং আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬)।
নতুন মন্ত্রীদের জন্য প্রস্তুত ৪০ গাড়ি: মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের জন্য ৪০টি বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুত রেখেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। এসব গাড়ির চালকও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শপথের প্রস্তুতি সম্পন্ন: এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে গতকাল বুধবার সকালে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা স্পিকারের কাছে শপথ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়। এবারও সেটা বঙ্গভবনেই হবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গভবনে প্রথমে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রস্তুতির মধ্যে কী কী বিষয় রয়েছে—এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যেখানে শপথ হয়, সেখানকার একটা প্রস্তুতি রয়েছে। আমন্ত্রণের একটি তালিকা করতে হয়, সেই তালিকা করা হচ্ছে। আমন্ত্রণপত্র করতে হয়, সেটি আমরা করছি। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এটার জন্য কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, সেটা করছি। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ জয়ী হয়ে ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আছেন। তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। এর মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। আরও তিনজন নির্বাচনে মনোনয়নই পাননি।